ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিশুদের নিরাপত্তায় যানবাহনে চাই শিশু আসন

লেখক: তরিকুল ইসলাম

প্রকাশিত: ২১:৩৫, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

শিশুদের নিরাপত্তায় যানবাহনে চাই শিশু আসন

শিশু আসন

যানবাহনে শিশু আসন অত্যান্ত জরুরী। সড়ক পরিবহন আইনে শিশুদের জীবন রক্ষায় গণপরিবহনে শিশু আসনের বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ‘আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ’, আর তাইতো আমাদের সবার উচিত তাদের নিরাপত্তার দিকটা লক্ষ্য রাখা। পরিসংখ্যান বলছে ২০২০ সালে ৬৪৯ জন শিশু, ২০২১ সালে ১ হাজার ৬ শত ৭৪ জন শিশু এবং সবশেষ বিদায়ী বছরে ৭৯৪ জন শিশু সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায়। বিষয়টা কতটা দুঃখজনক, ভেবে দেখেছেন? এইসব ভয়াবহ দুর্ঘটনা রোধকল্পে সবার সচেতন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যাতে আর কোন শিশুর জীবন যেন অঙ্কুরেই বিনাশ হয়ে না যায়!

গেল বছরের ২৭ ডিসেম্বরে গেজেট আকারে প্রকাশিত বিধিমালায় শিশু যাত্রীর জন্য সিটবেল্ট বাঁধা সংক্রান্ত নির্দিষ্ট বিধান কর্তৃপক্ষ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জারির কথা বলা হলেও শিশু আসনের বিষয়ে কোনো বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। উচ্চ গতির যুগে এবং গাড়িতে আটকে থাকা রাস্তা, চালকদের বেপরোয়াতায়, ভ্রমণের সময় শিশুর ঝুঁঁকি বেড়ে যায়। অতএব, শিশুদের নিরাপদ পরিবহনের জন্য, শিশুদের উপযোগী সুরক্ষিত আসন অত্যান্ত জরুরী।

উন্নত দেশের মতই বাংলাদেশে শিশু সুরক্ষায় স্ট্যান্ডার্ড সিট বেল্ট দিয়ে গাড়িতে শিশুর আসন নিশ্চিত করতে হবে। যাতে করে দুর্ঘটনায় শিশু সুরক্ষিত থাকে। কারণ, সড়ক দুর্ঘটনায় যখন বড় ধরনের কোন সংঘর্ষ ঘটে তখন দেখা যায় মায়ের কোলে বসিয়ে রাখা শিশুটি ছিটকে গিয়ে মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। যদি শিশুটি একটি শিশু নিরাপত্তা আসনে থাকতে তাহলে দুর্ঘটনার আঘাত থেকে রক্ষা পেত।

একজন অভিভাবক হিসাবে গাড়িতে ভ্রমণ করার সময় আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলির মধ্যে একটি হল আপনার সন্তানকে নিরাপদ রাখা। গাড়িতে আপনার সন্তানের যে ধরনের আসন প্রয়োজন তা নির্ভর করে আপনার সন্তানের বয়স, আকার এবং বিকাশের প্রয়োজনীয়তা সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর। একটি শিশু সুরক্ষা আসন যাকে কখনও কখনও শিশু সুরক্ষা আসন, শিশু সংযম ব্যবস্থা, শিশু আসন, শিশুর আসন, গাড়ির আসন বা একটি বুস্টার সীট বলা হয়। এটি এমন একটা আসন যা বিশেষভাবে গাড়ির সংঘর্ষের সময় শিশুদের আঘাত বা মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে যার মধ্যে অন্যতম হলো সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮। তবে, আইনটি যুগোপযুগি হওয়া সত্বেও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। উদাহরনস্বরূপ, আইনটিতে মোটরসাইকেলে হেলমেট পরিধান বাধ্যতামূলক করে দেয়া হলেও, মানসম্মত হেলমেট ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা কিংবা এর মানদন্ড নির্ণয় করে দেয়া হয়নি। এ আইনে গতিসীমা লঙ্ঘনের বিধান বর্নিত থাকলেও গতিসীমা নির্ধারণ কিংবা পর্যবেক্ষনের নির্দেশনা ও পরিকল্পনা উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া যাত্রীদের সিটবেল্ট ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা ও শিশুদের ক্ষেত্রে চাইল্ড রেস্ট্রেইন বা শিশুদের জন্য নিরাপদ আসন ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা আইনটিতে নেই।

একটি দুর্ভাগ্যজনক মুহুর্তে, একটি সুনির্দিষ্ট আসন একটি শিশুকে নিরাপদ রাখবে। ঝামেলা এড়াতে, এমনকি ছোট ভ্রমণেও, তাকে অবশ্যই সর্বদা নিরাপদ থাকতে হবে। 
যাত্রী হিসেবে শিশু নিহতের যানবাহনভিত্তিক পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্স যাত্রী হিসেবে ২৫ শিশু (৭.৫৫%) নিহত হয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিশুদের বয়স ভিত্তিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ১ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশু নিহত হয়েছে ৩৩৭ জন (২০.১৩%), ৬ বছর থেকে ১২ বছর বয়সী শিশু নিহত হয়েছে ৭৫৪ জন (৪৫.০৪%) এবং ১৩ বছর থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশু নিহত হয়েছে ৫৮৩ জন (৩৪.৮২%)।

সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর হার বৃদ্ধির কারণসমূহের মধ্যে অন্যাতম হচ্ছে দেশের সড়ক ও সড়ক পরিবহন শিশুবান্ধব না হওয়া, গাড়িতে শিশুদের উপযুক্ত আসনের ব্যবস্থা না থাকা, সড়ক ও সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা শিশুদের জন্য নিরাপদ না করা ইত্যাদি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনা ১ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিশু সুরক্ষিত আসন উল্লেখযোগ্যভাবে আঘাত অসুস্থতা এবং মৃত্যুহার হ্রাস করে।

দুর্ঘটনায় শিশুদের আঘাত প্রতিরোধ করার সর্বোত্তম উপায় হল গাড়িতে ভ্রমণ করার সময় তাদের সঠিকভাবে যতœ নেওয়া। আইন অনুসারে, অস্ট্রেলিয়ায় গাড়িতে ভ্রমণ করার সময় সমস্ত যাত্রীকে অবশ্যই যথাযথভাবে সংযত রাখতে হবে। শিশু সুরক্ষার আসন, কখনও কখনও বলা হয় শিশু নিরাপত্তা আসন, শিশু সংযম ব্যবস্থা, শিশু আসন বা বুস্টার সিট এমন একটি আসন যা বিশেষত বাচ্চাদের গাড়ির সংঘর্ষের সময় আঘাত বা মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। অনেক আইনশাস্ত্রে কোনও বয়সে, ওজন বা উচ্চতা দ্বারা সংজ্ঞায়িত বাচ্চাদের একটি গাড়িতে বহন করানোর সময় সরকার অনুমোদিত শিশু সুরক্ষা আসন ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। শিশু আসনের পক্ষে কারণগুলির মধ্য অন্যাতম হচ্ছে সড়কে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে শিশু আসন থাকায় শিশুকে সুরক্ষা রাখে, ধাক্কা ছাড়াই এবং সর্বাধিক গতির অসুস্থতার প্রভাব সহ একটি নিরাপদ ভ্রমণ প্রদান করে। 

আমাদের দেশে পরিবহনে শিশু আসন তৈরি করার কোন আইনি বিধি-বিধান নেই। তাই বর্তমান নীতিমালায় শিশু আসন বাস্তবায়নে একটি সংযোজন প্রয়োজন। দেশে সঠিকভাবে শিশু নিরাপত্তা আসন ব্যবহার করা হলে যাত্রীবাহী গাড়িতে শিশুমৃত্যু কমাতে শিশু নিরাপত্তা আসন ৭১ শতাংশ কার্যকরী এবং শিশুর মৃত্যু কমাতে ৫৪ শতাংশ কার্যকর হবে। 

আমাদের দেশের গাড়িগুলো শিশু আসন খুবই জরুরী। শিশু আসনের ক্ষেত্রে নতুন আইন প্রণয়ন করে তা অতি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক। প্রতিবছরে সড়কে আমাদের দেশে অভাবণীয় শিশুর প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। আর এই মৃত্যুর হাত থেকে শিশুদের সুরক্ষা রাখতে শিশু আসন আইন প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন চাই।

লেখক: তরিকুল ইসলাম
অ্যাডভোকেসি অফিসার (কমিউনিকেশন)
রোড সেইফটি প্রকল্প, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন
 

ফজলু

×