ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নয়নে এসএমই শিল্প

.

প্রকাশিত: ২১:২১, ৯ ডিসেম্বর ২০২২

উন্নয়নে এসএমই শিল্প

.

বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথে। সত্তর দশকের কৃষিনির্ভর দেশটি এখন অনেকটাই শিল্পনির্ভর। জাতীয় আয়ে শিল্প খাতের অবদান প্রায় ৩৭ শতাংশ। কোভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে শিল্পখাত অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হয়েছে। অনেক মানুষ পুঁজি হারিয়ে হয়েছে নিঃস্ব। অনেকেই চাকরি হারিয়ে বেকার জীবন-যাপন করছে এখনও। বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্রণোদনা পেলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের প্রচেষ্টায় টিকে থাকার লড়াই করছে প্রাণপণ। দেশে প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত।

এক কোটির মতো শুধু এমএসএমই খাতেই জড়িত। ২০১২ সাল থেকে জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা আয়োজন করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। এবার অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় নগদ বিক্রি হয়েছে ১২ কোটি টাকার পণ্য। প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রয়াদেশ পেয়েছে ১৯ কোটি টাকার। এবারের মেলায় ৩২৫টি স্টলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা তাদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করেছেন। এর মধ্যে ১৩০টি স্টলই ছিল ফ্যাশনশিল্পের। পুরস্কৃত হয়েছেন সাত নারী উদ্যোক্তা। গত বছর নবম এসএমই পণ্য মেলায় বিক্রি হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকার পণ্য এবং প্রায় ১৭ কোটি টাকার অর্ডার পেয়েছিলেন উদ্যোক্তারা।
গত ৯টি জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় প্রায় দুই হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ৩২ দশমিক ৮৮ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন। অর্ডার পেয়েছেন প্রায় ৫৩ দশমিক ৫০ কোটি টাকার। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই)। এসব শিল্পের অধিকাংশ উদ্যোক্তাই নারী। এবার মেলায় আসা উদ্যোক্তাদেরও ৬০ শতাংশ নারী। বাংলাদেশের জিডিপিতে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ অবদান এসএমই খাতের। ইউরোপীয় সদস্য দেশগুলোর জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান ৫৫ শতাংশ। পাশের দেশ ভারতে এর অবদান ৪৫ শতাংশ। চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার জিডিপিতে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ অবদান রাখছে এসএমই খাত। টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ আবশ্যক। কেননা এটি একটি শ্রমঘন শিল্প। এর সম্প্রসারণের মাধ্যমে অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ দারিদ্র্য দূরীকরণেও ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে।
কোভিড-১৯ এর জন্য ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে এসএমই খাতে সামগ্রিক আয় হ্রাস পেয়েছে প্রায় ৬৬ শতাংশ। উৎপাদিত পণ্য অবিক্রীত থেকেছে প্রায় ৭৬ শতাংশ । ২০২০ সালের জুলাই থেকে করোনার জন্য যে প্যাকেজ দেওয়া হয় তাতে ছোট-বড় সব সেক্টর অন্তর্ভুক্ত ছিল। দুঃখের বিষয়, বৃহৎ শিল্প খাতে দ্রুত প্যাকেজের অর্থ বিতরণ হলেও এসএমই খাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কাক্সিক্ষত হারে অর্থ বিতরণ করতে সক্ষম হয়নি। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ট্রেড লাইসেন্স ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ঘাটতির কথা বলা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বিতীয় দফায় চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত আরও ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করে। নারী উদ্যোক্তাদের ৮ শতাংশ দেওয়ার কথা থাকলেও এর যথাযথ বিতরণ হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে এসএমই শিল্পের অর্থ বিতরণে সচেতন দৃষ্টি রাখাসহ ব্যাংক ঋণ সহজলভ্য করা প্রয়োজন।

 

×