ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল

-

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ৮ ডিসেম্বর ২০২২

জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশ-জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে সরকার টু সরকার চুক্তির ভিত্তিতে জাপানি অর্থনৈতিক বিশেষ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন-অগ্রগতির জন্য একটি মাইলফলক বলা যেতে পারে। কোভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্বব্যাপী চরম স্থবিরতা এবং চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মন্দাবস্থাকবলিত প্রেক্ষাপটে এটি একটি চমকপ্রদ সুসংবাদ অবশ্যই। এক হাজার একরের শিল্পনগরীতে ইতোমধ্যে চল্লিশটি বিদেশী প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ডলারে যার পরিমাণ কমপক্ষে ১৫০ কোটি। কর্মসংস্থান হবে লক্ষাধিক বেকারের।

স্বভাবতই আড়াইহাজার ও সন্নিহিত এলাকাবাসী এতে উৎফুল্ল আনন্দিত ও অনুপ্রাণিত। কেননা, এটি তাদের জন্য  সৌভাগ্যের সূচনা করবে। নিরসন করবে দারিদ্র্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালীন বক্তব্যে যথার্থই বলেছেন, বিশ্বে বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে উত্তম স্থান বাংলাদেশ। কারণ, ভৌগোলিকভাবে ভালো অবস্থান এবং যোগাযোগ অবকাঠামোসহ নৌ ও সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার তিনশ’ কোটি মানুষের বাজার হতে পারে।

তদুপরি এখানে রয়েছে বিদ্যুৎ-গ্যাস-জ্বালানি-পানিসহ ওয়ানস্টপ সার্ভিস এবং বিশেষ ইউটিলিটি। সর্বোপরি অনুকূল বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা ও আইন। রয়েছে গণতান্ত্রিক পরিবেশসহ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। সুলভে প্রাপ্ত পর্যাপ্ত শ্রমসংস্থান। যে সব দেশ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে তারা যেমন লাভবান হবে, তেমনি বাংলাদেশেরও উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত হবে।
কোভিড-১৯ তথা করোনাভাইরাসের উৎপত্তি-বিকাশসহ বিশ্বব্যাপী মহামারি ছড়িয়ে পড়ার কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্ষুণœ হয়েছে চীনের ভাবমূর্তি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ চলছিল আগে থেকেই। করোনা এতে যোগ করেছে বাড়তি মাত্রা। চীনবিমুখ দেশগুলো সে দেশ থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে পর্যায়ক্রমে সরিয়ে নিচ্ছে ভারত, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়াও অন্যত্র। এদিক থেকে তুলনামূলকভাবে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।

চীন থেকে উদ্যোক্তাদের শিল্প-কারখানা সরিয়ে নেওয়ার জন্য জাপান সরকার যে দ্বিতীয় দফা ভর্তুকি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, তাতে সংযুক্ত করেছে বাংলাদেশকে। উল্লেখ্য, ইতোপূর্বেও জাপান সরকার চীন থেকে ৮৭টি কোম্পানির কারখানা সরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে সহায়তার জন্য ভর্তুকি দিয়েছে। এর পাশাপাশি জাপান সে দেশে আগামী পাঁচ বছরে অন্তত ১৫টি খাতে কয়েক লাখ বাংলাদেশী দক্ষ শ্রমজীবী নেওয়ার জন্যও চুক্তি করেছে। তবে তাদের অবশ্যই সে দেশের ভাষা জানতে হবে। এটিও বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ তথা শিল্প-কারখানা স্থানান্তরের পাশাপাশি সে দেশে দক্ষ মানব সম্পদ প্রেরণের শুভ সূচনা করেছে।
তবে শুধু শিল্প-কারখানা স্থাপন করলেই তো হবে না। একই সঙ্গে আবশ্যক যথাযথ অবকাঠামোসহ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক, যা ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ তথা আন্তঃবাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশ সরকার সেদিকেও যথাযথ নজর ও গুরুত্বারোপ করেছে। ইতোমধ্যে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে আন্তঃসড়ক যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সম্প্রতি সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চার লেনবিশিষ্ট সিলেট-তামাবিল ৫৬ কিলোমিটার মহাসড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ২০২৫ সাল নাগাদ এর নির্মাণ শেষ হলে আঞ্চলিক সড়ক সংযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপিত হবে অন্তত ৬টি দেশের সঙ্গে, যাতে বাড়বে ব্যবসা-বাণিজ্য।

×