ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংঘাত নয় শান্তি

-

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ৮ ডিসেম্বর ২০২২

সংঘাত নয় শান্তি

সম্পাদকীয়

মানুষ শান্তি চায়। সংঘাত চায় না। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ও করোনা-ডেঙ্গু মোকাবিলার পাশাপাশি দ্রব্যমূলের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতিতে বিপর্যস্ত বিপন্ন মানুষ নির্বিঘ্নভাবে কাজ করে আয়-উপার্জন করতে চায়। পরিবারের অর্থনীতির চাকা যেন বিকল না হয়। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের মনে ভীতি জাগানো মোটেও ভালো কাজ হতে পারে না। রাজনৈতিক সংঘাতের আশঙ্কা সব সময়ই দেশের বেশিরভাগ মানুষের মনে ভয় জাগায় তার রুটি-রুজির পথ অবরুদ্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায়।

বিজয়ের মাসে দেশের মানুষ আরেকটি বিজয় দিবস উদ্যাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফুটবেলপ্রেমী বাঙালি চলমান বিশ^কাপ ফুটবলের উত্তেজনাময় ও আনন্দপূর্ণ লড়াইয়ে জড়িয়ে গেছে দারুণভাবে। অন্যদিকে সফরকারী শক্তিশালী ক্রিকেট দল ভারতের সঙ্গে টাইগাররা দুর্দান্ত খেলে ওয়ান ডে সিরিজ জিতেও নিয়েছে। এরকম একটা আনন্দ-আবেগময় সময়ে সংঘাতের শঙ্কাকে কি মানুষ ভালোভাবে গ্রহণ করছে?
আগামীকাল শনিবার বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ। অথচ বুধবারেই বিএনপি কার্যালয়ের সামনে কর্মী সমাবেশ ঘটিয়ে রাস্তা বন্ধ করে আগাম উত্তেজনা ছড়ানো হয়। সমাবেশের স্থান নিয়ে বিতর্ক ও সমালোচনার মধ্যে আগাম ওই সমাবেশ কি জরুরি ছিল? ওই সমাবেশ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশ্যে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। পুলিশের অ্যাকশন বিএনপি কার্যালয়ের অভ্যন্তর পর্যন্ত পৌঁছে যায়। উভয়পক্ষের অসহিষ্ণুতায় এলাকাটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয় এবং একজনের মৃত্যু ঘটে, যা ছিল অনভিপ্রেত। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি জঙ্গিদের মাঠে নামিয়েছে। তারা লাশ ফেলার দুরভিসন্ধি বুধবার কার্যকর করেছে।
জনসমাবেশ, জনসভা সব সময়েই এ দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির শক্তি ও সৌন্দর্যকে সামনে নিয়ে এসেছে। রাজনৈতিক সভা রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়াবে এটি প্রত্যাশিত। কিন্তু সবকিছুর মূলে হলো দেশের মানুষ, মানুষের কল্যাণ এবং জনস্বার্থে ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিক সুস্থ ধারাকে বেগবান করার প্রত্যয়। কিন্তু একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই যদি সেটি জনমনে শঙ্কা জাগায়, জনদুর্ভোগের আশঙ্কা জোরালো হয়ে ওঠে, তা হলে তা উদ্বেগের কারণ বৈকি। মানুষের কল্যাণের জন্যই রাজনীতি। সেই রাজনীতি যদি হয়ে ওঠে অপরাজনীতির কৌশল, শঙ্কা জাগায় জনতার মনে, তবে দেশের মানুষ সেটিকে সমর্থন দেবে কেন।
সমাবেশ ঘিরে কথামালার রাজনীতি মন্দ ছিল না। যুক্তি-পাল্টা যুক্তি, তর্ক-বিতর্ক এ সবকিছুই আপাতদৃষ্টিতে অকল্যাণকর নয়, বরং সঙ্গত ও স্বাভাবিক। তবে সেটি দায়িত্বজ্ঞানহীন, উগ্র ও সহিংস হলেই সমস্যা। এতে দলীয় কর্মীদের মধ্যে যেমন উত্তেজনা তৈরি হয়, অপরপক্ষে সাধারণ নাগরিকদের মনেও জেগে ওঠে ভয়ভীতি। এ দুটোই অনাকাক্সিক্ষত। গত কয়েক বছরে আন্দোলন কর্মসূচিতে না থাকলেও বিগত দু’মাসে বিএনপি সারাদেশে সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছে।

বড় কোনো সংঘর্ষ ও কোন্দল ছাড়াই এসব কর্মসূচি পালিত হয়েছে বলে মানুষের মনেও বিরাজ করেছে স্বস্তি। অথচ আসন্ন গণসমাবেশ নিয়ে বর্তমানে উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমরা আগেও বলেছি, দেশবাসী আশা করে, সব পক্ষই দ্বন্দ্ব-সংঘাতের পথ পরিহার করে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির পতাকা সমুন্নত রাখবে। মনে রাখা চাই জনকল্যাণের লক্ষ্যেই রাজনীতি, জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি নয়। মানুষ শান্তি চায়, সংঘাত নয়।

×