ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘ইভিএম’ই ভোটাধিকার সুরক্ষার পথ

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

প্রকাশিত: ২২:১৩, ৭ অক্টোবর ২০২২

‘ইভিএম’ই ভোটাধিকার সুরক্ষার পথ

.

অতিসম্প্রতি আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রণীত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। আগস্ট মাসে ইসির সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠিত সংলাপে অংশগ্রহণকারী ২৯টি দলের ১৭টি ইভিএমের পক্ষে এবং ১২টি দল বিপক্ষে মত দিয়েছে। বেশিরভাগ দলের মতামত ইভিএমের পক্ষে থাকায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারকে যুক্তিসঙ্গত বলে দাবি নির্বাচন কমিশনের। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা, ইভিএম ও ব্যালট পেপারের ভোটের সুবিধা-অসুবিধাসহ তুলনামূলক পর্যালোচনা, ৯০০টি নির্বাচন অভিজ্ঞতার (ভোটার উপস্থিতি, ব্যয়, সহিংসতা, ভোট-ফল ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি) আলোকে কমিশন ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিভিন্ন মহলের অভিযোগ নির্বাচন কমিশন যে ১৭টি দলকে ইভিএমের পক্ষে বলে প্রচার করেছে তার মধ্যে ৩টি দল সরাসরি ইভিএমের বিপক্ষে, ১টি দলের কোন মতামত ছিল না এবং ৯টি দল ইভিএম নিয়ে বিভিন্ন শর্তের কথা উল্লেখ করেছিল। প্রসঙ্গক্রমে কমিশন থেকে তা নাকচ করে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং আলোচনার পর কিছু দলের লিখিত প্রস্তাবও বদলিয়েছে।        
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুসারে বিগত একটি জাতীয় নির্বাচনে খরচ হয়েছে এক হাজার ৮৭ কোটি টাকা। কিন্তু ইভিএম ব্যবহারের ফলে ব্যালট পেপার ক্রয়-ছাপা-পরিবহন খরচসহ ভোট গণনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকবলের খরচ সাশ্রয়ে একটি জাতীয় নির্বাচনে খরচ হবে মাত্র নয়শত কোটি টাকা। ইভিএমের অন্য সুবিধার মধ্যে রয়েছে- একটি মেশিনে নতুন করে প্রোগ্রাম প্রবেশের মাধ্যমে চার-পাঁচটি জাতীয় নির্বাচন অথবা ইউনিয়ন পরিষদ-উপজেলা-সিটি কর্পোরেশন বা উপনির্বাচনও করা সম্ভব। এই প্রক্রিয়ায় কোন ভোটারের ভোট বাতিল না হয়ে ভোটের তথ্য প্রায় ১০ বছর যাবত মেশিনে অবিস্কৃত অবস্থায় ডাটাবেজ সংরক্ষণ, একজন ভোটার ভোট দেয়ার পর ব্যালট ইউনিট ১০ থেকে ১২ সেকেন্ড স্বয়ংক্রিয়ভাবে অকার্যকর থাকার ফলে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের ইচ্ছা সত্ত্বেও একজন ভোটারের একাধিক ভোটদানের সুযোগ না থাকা, কেন্দ্র দখলের ঘটনায় সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার কর্তৃক কন্ট্রোল ইউনিটের ক্লোজ সুইচ চাপার ফলে দখলকারীদের কোন ভোট দিতে না পারা ও স্মার্ট কার্ড সরিয়ে নেয়ার পর মেশিনটি চালু না হওয়া, ১২ ভোল্টের ব্যাটারি চালিত হওয়ায় ব্যবহারকালে ইলেকট্রিক শক না হওয়া, কাগজ-কলমের ঝামেলা ছাড়া ভোট প্রদান, স্বল্প সময়ে সঠিকভাবে ভোট প্রয়োগ ও দ্রুততার সঙ্গে ভোট গণনার কাজ নিষ্পন্ন করা ইত্যাদি।    
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ গণমাধ্যমে প্রকাশিত সাক্ষাতকারে নির্বাচন কমিশনার মোঃ আলমগীর ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ১২ কোটি ভোটারের আস্থা আছে বলে দাবি করেন। তিনি জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে। যেসব দল ইভিএমের বিরোধিতা করে তারাও অন্তরে বিশ্বাস করে ইভিএম ভাল। রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ইভিএমের বিরোধিতাকারীরা অনানুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশনে এসে ইভিএমে নির্বাচন দেয়ার কথা বলেন।

উক্ত সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘একটি দল ইভিএমের বিরোধী। কিন্তু তাদের একজন সংসদ সদস্য লিখিতভাবে ইসিকে অনুরোধ করেছেন তার এলাকায় ইভিএমে ভোট করার জন্য। এর মানে তিনি অন্তরে বিশ্বাস করেন ইভিএম ভাল।’ তিনি আরও বলেন, ‘যারা ইভিএম নিয়ে নেতিবাচক আর্টিকেল লেখেন তারা ইভিএম দেখেননি, নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়ে ইভিএম নিয়ে কিছু শুনতেও চাননি, ইভিএমে ভোটও দেননি।’ তিনি উল্লেখ করেন যে, ইভিএমে কারচুপি, ব্যালট ছিনতাই, জালভোট দেয়ার সুযোগ নেই।
পরিসংখ্যান অনুসারে ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ থেকে ৩১ জুলাই ২০২২ পর্যন্ত পূর্বের ও নতুন কমিশনের অধীনে ইভিএমের মাধ্যমে একাদশ জাতীয় সংসদ, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ-উপনির্বাচনসহ সর্বমোট ৮৯১টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকার ২টি, চট্টগ্রাম-রংপুর-খুলনা-সাতক্ষীরায় ১টি করে মোট ৬টি আসনে ইভিএম ব্যবহার হয়। ২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ সালে ইভিএম ব্যবহার করা নির্বাচনের সংখ্যা যথাক্রমে ৬৫, ৫১ ও ২৬৬টি। ৩১ জুলাই ২০২২ পর্যন্ত ১টি জাতীয় সংসদের শূন্য আসন, ২টি সিটি কর্পোরেশন, ১৫টি পৌরসভা, ৪টি পৌরসভার শূন্য আসন, ৩টি উপজেলা পরিষদের শূন্য আসন, ৪১৮টি ইউনিয়ন পরিষদ ও ৬০টি ইউনিয়ন পরিষদের শূন্য আসনসহ মোট ৫০৩টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য যে, নির্বাচন কমিশন পরীক্ষামূলকভাবে ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ১৪টি, ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৫৮টি এবং ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করে। ২০১২ সালে কুমিল্লা ও ২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া সুসম্পন্ন হয়েছিল।
নির্বাচন বিশ্লেষক-বিশেষজ্ঞদের মতে নির্বাচনে স্বচ্ছতা আনার ক্ষেত্রে ইভিএম একটি উত্তম মাধ্যম। রাজনৈতিক মহলে ইভিএমের পক্ষে-বিপক্ষে যে আলোচনা সেটি একান্তই রাজনৈতিক। প্রকৃতপক্ষে ইভিএমে ভোট কারচুপি করার কোন সুযোগ নেই। তবে কোথাও কেন্দ্র দখল বা বুথ দখল হলে সেই দায় ইভিএমের নয়। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে ইভিএমের ব্যবহার দেখা গেছে। উক্ত নির্বাচনে ভোটাররা ইভিএমে আগুলের ছাপ না মেলা, ভোটগ্রহণে ধীর গতি, আগেই বোতাম চেপে ভোট দিয়ে রাখাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করলেও একজনের ভোট আর একজন দিয়েছে এমন খবর পাওয়া যায়নি। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) শাহাদত হোসেন ব্যালট পেপারের চেয়ে ইভিএমে ভোটগ্রহণ আরও নিরাপদ ও স্বচ্ছ পদ্ধতি হিসেবে ব্যক্ত করেছেন। গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে এক সময় জাল ভোট হতো। কোন কেন্দ্রে ঝটিকা আঘাত হেনে আধাঘণ্টা, এক ঘণ্টার জন্য কেন্দ্রটা দখল করে ২০০-৩০০ ব্যালট পেপার বাক্সে ঢুকিয়ে দেয়া হতো। ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটত। ইভিএম একটি যন্ত্র। উল্লেখ্য, অনিয়মগুলো চিহ্নিত করতে ভাল একটা যন্ত্র হচ্ছে ইভিএম। কেউ যদি বলে ডিজিটাল কারচুপি করা সম্ভব, এটা সম্ভব না। যদি না মেশিনের প্রোগ্রামিং চেঞ্জ করতে পারে। সেটা নিশ্চিত সম্ভব না।’
২৫ মে ২০২২ নির্বাচন কমিশনে দেশের বিশিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে অনুষ্ঠিত ইভিএম বিষয়ক মতবিনিময় সভায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এম কায়কোবাদ উভয়েই ইভিএম অত্যন্ত চমৎকার মেশিন এবং এখানে ম্যানিপুলেশন (কারচুপি) করার জায়গা নেই বলে মন্তব্য করেছেন। তবে একটি মেশিনকে কখনই শতভাগ বিশ্বাস করা উচিত হবে না মর্মেও মতামত প্রদান করেন। অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘ইভিএম বিষয়টি পুরোটা দেখেছি। তার ভেতরে যে টেকনিক্যাল বিষয় আছে সেটাও তাঁদের কাছ থেকে জেনে নিয়েছি। সর্বশেষ তাঁরা আমাদের জন্য একটি মেশিন খুলে রেখেছিলেন, যাতে ভেতরের আইসি লেভেলে দেখতে পারি, কেউ যদি এটি ম্যানিপুলেট করতে চায় কতটুকু কঠিন বা সহজ হবে সে ধারণা পাওয়ার জন্য। আমি ব্যক্তিগতভাবে কনভিন্সড হয়েছি। যেহেতু আমাদের বায়োমেট্রিক ডেটা আছে, সেজন্য ভোট দেয়া অত্যন্ত নিখুঁতভাবে করা সম্ভব, একজন মানুষ অন্যজনের ভোট দেয়া মোটামুটিভাবে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি আমাদের দেশের জন্য পারফেক্ট একটি মেশিন। অত্যন্ত সহজভাবে এটা চালানো সম্ভব।’
আমাদের সকলের জানা যে, ১৮৫৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে ভোট দেয়ার পদ্ধতি চালু হয়। ১৮৮৮ সালে ম্যাসাচুয়েটসও একই পদ্ধতি গ্রহণ করে। কালক্রমে আমেরিকার বিভিন্ন সিটি নির্বাচনে ধীরে ধীরে এর বিস্তার ঘটে। ১৯৬৫ সালে প্রবর্তিত হওয়া ‘ভোটোমেটিক সিস্টেম পাঞ্চকার্ড’, ১৯৭৪ সালে ডিআরই ভোটিং মেশিনের পেটেন্ট আবিষ্কার, ১৯৭৫ সালে ভিডিও ভোটার সিস্টেমের প্রবর্তন এবং ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম ইন্টারনেট ভোটিং সিস্টেম শুরুর মাধ্যমে আস্তে আস্তে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ভোটিং ও ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণের প্রচলন হয়ে আসছে। মূলত ১৯৬০-এর দশকে পাঞ্চকার্ড দিয়ে ভোট প্রদানের রূপরেখা আবিষ্কারের প্রেক্ষিতে ১৯৬৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৭টি অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনে সর্বপ্রথম ইলেকট্রিক ভোটিং পদ্ধতি দৃষ্টিগোচরে আসে। ইতোপূর্বে ইভিএমের সাহায্যে ভোটাধিকার প্রয়োগে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, কানাডা, এস্তোনিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পেরু, রোমানিয়া, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, ভেনেজুয়েলা এবং ফিলিপিন্স। এই উপমহাদেশে প্রথম ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ হয় ভারতের কেরালা রাজ্যে। ভারত ছাড়াও জর্দান, মালদ্বীপ, নামিবিয়া, মিসর, ভুটান এবং নেপালে ইভিএম প্রক্রিয়ায় ভোট গণনা করা হয়।
ইভিএম উদ্ভাবন ও কারিগরি কমিটির সদস্য ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলামের মতে ‘বাংলাদেশে বর্তমানে উদ্ভাবিত এবং ব্যবহৃত ইভিএম মেশিনটি ২০১৩ সাল পর্যন্ত ব্যবহৃত ইভিএম মেশিন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সম্পূর্ণ নতুন চিন্তা নিয়ে ভিন্ন প্রযুক্তিতে এটি ভিন্নভাবে উদ্ভাবিত। নতুন এই মেশিনটির উদ্ভাবকদের সঙ্গে আগের উদ্ভাবকদের কোন সংযোগ নেই, নেই আগের ইভিএম মেশিনের কোন সম্পর্ক। নতুন এই মেশিনে একজনের ভোট আরেকজন দিতে পারে না এবং ভোটের সময় ছাড়া এর আগে বা পরে কখনই ভোট দেয়া যায় না। ভোটার আঙ্গুলের ছাপ দিলেই কেবল ইলেকট্রনিক ব্যালট পেপার ভোটদানের জন্য উন্মুক্ত হয়, অন্যথায় নয়। ব্যালট পেপার অন হওয়ার পর ভোটার তার ভোট প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে তা আবারও অকেজো হয়ে যায় এবং অন্য একজন ভোটারের আঙ্গুলের ছাপ না দেয়া পর্যন্ত আর ভোটদানের জন্য উন্মুক্ত হয় না। একজন ভোটার দ্বিতীয়বার ভোট দিতে চাইলে মেশিন নিজেই তাকে ভর্ৎসনা করে ফিরিয়ে দেয়। মানুষের করা দুর্নীতির সব প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করে দেয় এই মেশিন তার নিজস্ব ক্ষমতাবলে। কোনভাবেই কেন্দ্র দখল করে ভোট দেয়া যায় না বিধায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা আর রক্তপাতের কোন সুযোগ থাকে না এই ব্যবস্থায়। শান্ত পরিবেশে নির্ভয়ে ভোট দিতে ইভিএমের কোন বিকল্প নেই। জনগণের প্রকৃত ভোটাধিকার নিশ্চিত করে যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের পথকে মসৃণ ও প্রশস্ত করতে প্রয়োজন নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার।’     
আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক জ্ঞান-যুক্তিনির্ভর সমাজ বিনির্মাণে বিশেষ করে অধিকাংশ তরুণ প্রজন্মের ভোটারদের মনস্তত্ত্বে সমকালীন তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষতা অনুধাবনে ইভিএমে ভোটদান সর্বাধিক উপযুক্ত ব্যবস্থা। নির্বাচনের ফল দেশীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অধিকতর গ্রহণযোগ্য করার মানসে ইভিএম ব্যবহার এখন সর্বত্রই সমাদৃত।

সুষ্ঠু-অবাধ-নিরপেক্ষ-সফল-সার্থক নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের ইভিএমের পক্ষে-বিপক্ষে এতবেশি বক্তব্য দেয়া বা শোনার তেমন কোন প্রয়োজনীয়তা অনুভূত নয়। কমিশনের নিজস্ব মেধা-প্রজ্ঞা বিচক্ষণতা-দূরদর্শিতার মুখ্য পরিচায়ক হবে সমসাময়িক বিশ্বে নির্বাচনসমূহকে আমলে নিয়ে ইভিএম ব্যবহারে সচেষ্ট থাকা। জনগণের প্রত্যাশা পূরণে উন্নত মানসিকতা-সচেতনতার সমৃদ্ধি এবং ইভিএম ব্যবহারের সামগ্রিক দিকসমূহ আপামর জনগণের মাঝে সুপরিচিত করার উদ্যোগই হবে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। মোদ্দাকথা এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, ব্যয়ভার কিছুটা অধিক মনে হলেও ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আরেকটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সকল নির্বাচনে ইভিএম মেশিনের ব্যবহার। সময়ক্ষেপণ না করে এখন থেকেই শহর-নগর-প্রান্তিক জনপদে প্রস্তুতি-পরীক্ষামূলক ইভিএম কার্যক্রমে জনগণের সম্পৃক্ততা সকল বিভ্রান্তি নিধন ও দেশবাসীকে বিপুল উৎসাহিত-অনুপ্রাণিত করবে নিঃসন্দেহে তা দাবি করা মোটেও অযৌক্তিক বা অমূলক নয়।

লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

×