ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন ভাবনা

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া

প্রকাশিত: ২০:৪০, ৪ আগস্ট ২০২২

বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন ভাবনা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, সর্বকালের-সর্বযুগের-সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যিনি একটি চেতনা ও অধ্যায়ের নামবঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এই দুটি নাম একে অপরের পরিপূরক যা আজ ঐতিহাসিকভাবে সমাদৃত১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই মহানায়কতাঁর দীর্ঘ দিনের সংগ্রাম, নেতৃত্ব ও আত্মত্যাগের পথ ধরেই বাঙালী জাতি তাদের অর্জিত বিজয় অর্জন করেনতাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে এই দেশ সকল প্রকার অন্যায়, শাসন, শোষণ নিপীড়ন থেকে মুক্তি লাভ করে, অর্জন করে স্বাধীনতা

হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো বঙ্গবন্ধু সমগ্র জাতিকে একসূত্রে গ্রথিত করেনতিনি ছিলেন রাজনীতির কবিরাজনীতিকে তিনি সৃষ্টিশীল চেতনা দিয়ে নিজের হাতে আকার দিয়েছেনপাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শক্তির শৃঙ্খল থেকে তিনি বাঙালী জনগোষ্ঠীকে মুক্ত করে স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেনআর জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সেই স্বপ্ন তিনি বাস্তবায়ন করেছেনএ মুক্তি সংগ্রামে তিনি নিজের জীবনকে তুচ্ছ করেছিলেনপাকিস্তানী শাসক চক্রের বিরূপ মনোভাব বুঝতে পেরেছিলেন তিনি১৯৪৭-এ দেশভাগ হওয়ার পর থেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠারবঙ্গবন্ধু সেই লক্ষ্যে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়েছেন এবং ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে ছিনিয়ে আনেন মহান বিজয়তারপর থেকে তিনি যুক্ত হন আরেক সংগ্রামে

যার মূলমন্ত্র ছিল একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনতিনি এই দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করে গেছেনবিশ্বসভায় বাংলাদেশের একমাত্র ব্র্যান্ডিং হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধু১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু আত্মনিয়োগ করেছিলেন জাতি গঠনেদেশের অর্থনীতির উন্নয়ন, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক নিরাপত্তাসহ মূল ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছিলেনদেশের অন্যান্য সম্ভাবনাময় সেক্টরের মতো পর্যটনশিল্প নিয়েও তাঁর পরিকল্পনা ছিল সুদূরপ্রসারীবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনৈতিক কারণে দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা, উপজেলা, থানা ঘুরেছেনতিনি এইদেশের অপার সম্ভাবনা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন বারংবার

বঙ্গবন্ধু ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, সুস্থ, সবল জ্ঞান, চেতনা সমৃদ্ধ, কোনরকম ভেদ বৈষম্যহীন, শোষণহীন, অসাম্প্রদায়িক, চেতনায় উদ্বুদ্ধ দেশপ্রেমিক মানুষের উন্নত সমৃদ্ধ এক আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চেয়েছিলেনবঙ্গবন্ধুর আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের দর্শনকে সংজ্ঞায়িত করা যায় এভাবে, সব মানুষের জন্য পাঁচ ধরনের স্বাধীনতা নিশ্চিত হবেএর মধ্যে থাকবে রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক সুযোগ, সামাজিক সুবিধাদি স্বচ্ছতার নিশ্চয়তা এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সুরক্ষার স্বাধীনতা

আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধুর অন্যতম দর্শন ছিল বৈষম্যহীন অর্থনীতি ও সমাজ বিনির্মাণের বিষয়টি ছিল অন্যতম অনুষঙ্গতিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কেবল বাংলাদেশের প্রতি অন্য দেশের স্বীকৃতি আদায় ও কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি নয়, উপরন্তু বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তকরণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে উসাহিত করতেনতাঁর নিজের বিদেশ সফর বা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিদেশ সফরের প্রতিটি সুযোগে নির্দেশনা থাকত বাংলাদেশ যেন প্রত্যেকের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বমূলক ও ভাল প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক রাখে

তিনি জোট নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, পারস্পরিক সহযোগিতা, কারও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা এবং ভূখ-গত অখ-তা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধার মতো মৌলিক নীতির ওপর বেশি জোর দিতেন

শিক্ষা ছাড়া কোন জাতির অগ্রগতি অসম্ভবতাই বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরপরই বঙ্গবন্ধু আধুনিক বিজ্ঞান ও কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেনসেই লক্ষ্যে তিনি ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেন, যার প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই-খুদাএ থেকেই বোঝা যায় বঙ্গবন্ধু শিক্ষাকে বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষাকে কতটা গুরুত্ব দিয়েছিলেন

তিনি চেয়েছিলেন এমন শিক্ষাব্যবস্থা, যার মাধ্যমে শুরু থেকেই দেশের ছোট্ট শিশু-কিশোররা সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে এবং প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের বিষয়ে দক্ষ হয়ে ওঠেআর তাই ১৯৭২ সালের সংবিধানে শিক্ষাকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়বঙ্গবন্ধু শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতেন, যাতে করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে ওঠেবর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির গুরুত্ব সবাই অনুধাবন করতে পেরেছিইন্টারনেটের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে তথ্য আদান প্রদান হচ্ছে বিশ্বের এক প্রান্তকে অন্যপ্রান্তেএখন এতটাই তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর হয়ে গেছি যে একটা দিনও আমরা তথ্যপ্রযুক্তি ছাড়া চলতে পারি নাবঙ্গবন্ধু তা অনুধাবন করেছিলেন বহু বছর আগেই

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে যখন স্বাধীন হয় তখন বিশ্বে তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের যুগ চলছিলবঙ্গবন্ধু এই শিল্প বিপ্লবের যুগে পিছিয়ে থাকতে চাননিসেজন্যই দেশের মানুষ যাতে উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করতে পারে সে বিষয়ে সচেষ্ট ছিলেনতাঁর প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালে ওহঃবহধঃরড়হধষ ঞবষবপড়সসঁহরপধঃরড়হ টহরড়হ (ওঞট)-এর সদস্যপদ লাভ করেশুধু তাই নয়, তিনি বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র নির্মাণ করেন ১৯৭৫ সালের ১৪ জুনযার ফলে বাংলাদেশ সহজেই বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে

একটি দেশের উন্নতিতে বহির্বিশ্বের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ রাখা অত্যাবশ্যকীয়, যা বঙ্গবন্ধুর দূরদৃষ্টির কারণে এর সুফল আমরা ভোগ করছিশুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর সর্বপ্রথম সংবিধান রচনার কাজে হাত দেনএকটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের উন্নয়নের ভিত্তি হলো একটি সুপরিকল্পিত সংবিধানবাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র এক বছরের মধ্যে সংবিধান প্রণয়ন নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য এক বিরাট অর্জন

একটি আধুনিক রাষ্ট্রের যেসব গুণাবলী থাকা জরুরী তার সকল বৈশিষ্ট্যই ৭২-এর সংবিধানের মাঝে সন্নিবেশিত ছিলসর্বোচ্চ আইন সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, মৌলিক অধিকার, এক কেন্দ্রিক মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থা, স্বাধীন বিচার বিভাগ- এসব অনুচ্ছেদের মাঝেই ছিল আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার ভিত্তি

বঙ্গবন্ধু অনুভব করতে পেরেছিলেন শতকরা ৮৫ ভাগ জীবিকাধারীর প্রধান খাত কৃষিকে উন্নত না করে একটি দেশকে উন্নয়ন অসম্ভব এ কথা তাই তিনি সুদমুক্ত ঋণ, বাজেটে ভর্তুকি ও উন্নত সার ও বীজের ব্যবস্থা করেন১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে ৫০০ কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে ১০১ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছিল কৃষির উন্নয়নের জন্যকৃষির পরই আসে শিল্পবঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেন

এই মন্ত্রণালয় ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিঊশন নামে পুনর্গঠন করেনকালীন বাংলাদেশে ৮০ শতাংশ ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো, তাই ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু একটি ছায়া ঔষধনীতিপ্রণয়ন করেনবাংলাদেশ এখন ওষুধে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণপ্রয়োজনীয় ওষুধের ৯৭ শতাংশ দেশেই তৈরি হচ্ছেজাতিসংঘের শিক্ষা ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো এ সপ্তাহে প্রকাশিত তাদের বিজ্ঞান প্রতিবেদনে বলেছে, বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় ওষুধ রফতানিকারক দেশ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার আদমজী পাটকলসহ অন্যান্য অবাঙালী মালিকানাধীন শিল্পকারখানাকে জাতীয়করণ করেন

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক এ্যান্ড রিসার্স (বিসিএসআইআর) প্রতিষ্ঠিত হয়বর্তমানে বিসিএসআইআরের পরিধি বিস্তৃত হয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে ৩টি পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক গবেষণাগার এবং ঢাকা, সাভার ও জয়পুরহাটে ৫টি ইনস্টিটিউট ও একটি সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে

এ ছাড়াও রাষ্ট্রপতির আদেশ (১৫)-এর মাধ্যমে ১৯৭৩ সালে ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন প্রতিষ্ঠা লাভ করেপরমাণুবিজ্ঞানের মতো একটি অতি পরিশীলিত ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বিকাশ ও অবদানের তাপর্য উপলব্ধি করা এবং সর্বোপরি একটি প্রতিষ্ঠানের জন্ম দেয়া বাংলাদেশের বিজ্ঞান গবেষণার ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে আছে

উল্লেখ্য, স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময়ে অতি স্বল্পপরিসরে পরমাণু প্রযুক্তি শুধু চিকিসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতোকিন্তু বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে চিকিসাসহ কৃষি, খাদ্য, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, শিক্ষা, মানবসম্পদ উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের একটি বহুমুখী আয়োজনের সূচনা হয়

বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে ১৮টির অধিক স্থাপনার মাধ্যমে গবেষণা এবং সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছেস্বাধীনতার অব্যবহিত পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগ, সাহ ও নির্দেশে এবং স্বনামধন্য বিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদার নিরলস প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) নতুন নামে যাত্রা শুরু করেবিসিএসআইআর দেশে শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিজ্ঞান, শিল্প ও প্রযুক্তিবিষয়ক গবেষণা পরিচালনা করে থাকেসকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’-এই ছিল বঙ্গবন্ধুর বৈদেশিক নীতি, যা আজ অবধি বাংলাদেশ সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত

জানুয়ারি ১৯৭২ থেকে জুলাই ১৯৭৫, মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ৫০টির মতো রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের সফরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শতাধিক সফর অনুষ্ঠিত হয়ওই স্বল্প সময়ে বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সহযোগিতার নানা বিষয়ে ৭০টিরও বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে

জাতিসংঘ, ইউনিসেফ, ডাব্লিউএফপি, আইডিএ, ইউএনএইচসিআরসহ বিভিন্ন দেশ তথা সোভিয়েত ইউনিয়ন, সুইডেন, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, পোল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বুলগেরিয়া, বেলজিয়াম, আলজিরিয়া ও নেদারল্যান্ডস ছাড়াও অনেক দেশ বাংলাদেশকে কোটি কোটি ডলারের বিভিন্ন ধরনের ঋণ, সাহায্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রদান করেবিশ্বব্যাপী আধুনিক বাংলাদেশের ভিত তখনই রচনা করেছেন বঙ্গবন্ধু

বঙ্গবন্ধুর আধুনিকতা ও উন্নয়ন ভাবনা ছিল সর্বত্র, যা দেশকে ছাপিয়ে বিশ্বকেও নাড়া দিয়েছেসেনেগালের তকালীন প্রেসিডেন্ট আবদু দি উক ১৯৯৯ সালে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি এমন পরিবার থেকে এসেছেন, যে পরিবার বাংলাদেশকে অন্যতম মহান ও শ্রদ্ধাভাজন নেতা উপহার দিয়েছেআপনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে দেশের জনগণ যথার্থই বাংলাদেশের মুক্তিদাতা হিসেবে বেছে নিয়েছিল

পর্যটন শিল্পের বিকাশে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বঙ্গবন্ধু এর সঠিক ব্যবস্থাপনার দিকে জোর দেনপর্যটনকে অর্থনৈতিক কর্মকা-ের অন্যতম উসে পরিণত করতে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেনতিনি ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যার মূল লক্ষ্য ছিল এই দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে প্রধান ভূমিকা পালন করা

বঙ্গবন্ধু সুইজারল্যান্ডের মতো করে বাংলাদেশকে নির্মাণ করতে চেয়েছিলেনকক্সবাজার বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রএটি বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতবঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল, কক্সবাজারকে এশিয়ার ভিয়েনা হিসেবে তৈরি করবেনসেই লক্ষ্যে তিনি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ঝাউবনের গোড়াপত্তন করেছিলেন

এছাড়াও তিনি সমুদ্রের অমিত সম্ভাবনাকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে উত্তরণে ১৯৭৪ সালে সমুদ্রসীমা আইন প্রণয়ন করেছিলেন১৯৭২ সালের নবেম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কুয়াকাটা ভ্রমণে আসেনতখন তিনি এর সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হনবঙ্গবন্ধুর দেয়া আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের দর্শন বাস্তবায়নে তার প্রিয়কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনা বদ্ধপরিকরযতদিন রবে পদ্মা, মেঘনা, গৌরী, যমুনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমানপিতার স্বপ্ন আজ কন্যার হাতে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার বলা হয়তিনিই উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশকে আধুনিক অবকাঠামো সমৃদ্ধ করে তুলছেনতাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে পারমাণবিক বিশ্বে, স্থান করে নিয়েছে মহাকাশেসংশয় নেই, কন্যার হাত ধরে আজকের বাংলাদেশ যা অর্জন করেছে এবং ভবিষ্যতে যা করবে, সবটার পেছনেই রয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন-দর্শন ও প্রেরণা

 

লেখক : ট্রেজারার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

×