ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

জুলাই শহীদদের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক ডকুমেন্টেশন করে সোচ্চার

প্রকাশিত: ১৩:১৭, ১৯ জুলাই ২০২৫

জুলাই শহীদদের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক ডকুমেন্টেশন করে সোচ্চার

ছবি: সংগৃহীত।

২০২৫ সালের জুলাই আন্দোলনের ভয়াবহ দিনগুলোতে যখন সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে গণগ্রেপ্তার, নির্যাতন ও গুমের আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠেছিল, তখনই দেশের বাইরে থেকে একটি মানবাধিকার সংগঠন এগিয়ে এসেছিল শহীদদের স্মৃতি রক্ষায়। যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত মানবাধিকার সংগঠন 'সোচ্চার' (Torture WatchDog Bangladesh) ছিল শহীদদের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক ডকুমেন্টেশনের মূল উদ্যোক্তা।

সোচ্চারের প্রেসিডেন্ট শিব্বির আহমদ সামাজিক মাধ্যমে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জানান, ১৮ জুলাই ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেলে প্রবাসী বাংলাদেশি অ্যাক্টিভিস্টদের মধ্যে এক চরম উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশি অ্যাক্টিভিস্টদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়— হেফাজতের ২০১৩ সালের মতো এবারও হয়তো লাশ গুম করে দেওয়া হবে, সরকার দায় অস্বীকার করবে। তখনই তারা সিদ্ধান্ত নেন শহীদদের সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণসাপেক্ষ ডকুমেন্টেশন করতে হবে, যাতে ইতিহাস বিকৃত না হয়।

শিব্বির বলেন, “আন্দোলনে হাসিনার পতন হোক বা না হোক, আমরা শহীদদের স্মৃতি হারিয়ে যেতে দেব না।”

এরপর 'সোচ্চার' থেকে শহীদদের তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে ১৩ সদস্যের একটি টিম তৈরি হয়। এতে ছিলেন— শিব্বির, রাফসান, রাফিদ, সিদ্দিক, রাহনুমা, মাহফুজ, লাবিব, আল-আমিন, মেহেদি, শফিকুল মাহফুজ, শাহরিয়ার, তাশরিফ এবং মুরাদ। এর বাইরেও অনেকেই স্বেচ্ছায় সহযোগিতা করেন।

সোচ্চার টিম তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া, গুগল ফর্ম, পরিচিত গ্রুপ-পেইজের পোস্ট এবং প্রত্যক্ষ স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচাই করতেন। তাদের লক্ষ্য ছিল একটাই— “একজনের ভুল তথ্যও যেন তালিকায় না আসে। কারণ, সেটাকেই সরকার ভিত্তি করে পুরো তালিকাটিকে বাতিল করতে পারত।”

সোচ্চার টিম ২৪ ঘণ্টার রুটিনে শহীদদের নাম, অবস্থান, ছবি ও পরিচয় যাচাই করতেন। কেউ গুরুতর আহত হলেও অনেকে ভুল করে শহীদ দাবি করছিলেন— তাও তারা স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্ভুল তথ্য নিশ্চিত করতেন।

২০ জুলাই প্রথম দফায় ৪০ জন শহীদের ভেরিফায়েড তালিকা প্রকাশ করে সোচ্চার। তালিকাটি রাতারাতি ৫ হাজারের বেশি শেয়ার হয়। বিএনপি মিডিয়া সেল, বুয়েটিয়ান পেইজ ও বিভিন্ন সেলিব্রেটি তা শেয়ার করেন। এরপর বিপুল মানুষ সোচ্চারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তথ্য সরবরাহ করেন, স্বীকৃতি দেন।

পরবর্তীতে এই প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘shohid.info’ এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত প্ল্যাটফর্মও শহীদদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করে।

সোচ্চারের প্রচেষ্টায় প্রায় ৪০০ জন শহীদের তথ্য ডকুমেন্ট করা হয়— যা আন্দোলনকারীদের মাঝে সমন্বয়, স্মরণ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে তথ্য উপস্থাপনের একটি মূল্যবান দলিল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

পরবর্তীতে সরকার নিজেই শহীদদের তালিকা তৈরি করতে উদ্যোগ নেওয়ায় সোচ্চারের স্বেচ্ছাসেবী তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম থেমে যায়। তবু জুলাই আন্দোলনের সময়কালজুড়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এই উদ্যোগ ছিল এক ঐতিহাসিক একাত্মতা ও নাগরিক দায়িত্ববোধের অনন্য দৃষ্টান্ত।

নুসরাত

×