ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮.৭ ডিগ্রি ছিল চুয়াডাঙ্গায়

শৈত্যপ্রবাহ বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

শৈত্যপ্রবাহ বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে

হঠাৎ করেই শীত পড়েছে

হঠাৎ করেই শীত পড়েছে। সাধারণ মানুষের দিন যাপনেও লেগেছে ধাক্কা। কুয়াশা আর কনকনে বাতাস বিপর্যস্ত করছে জনজীবন। দেশের চার জেলায় বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। রাত নামলেই বন্ধ হচ্ছে নৌযান চলাচল। শনিবারও দেশের সাত জেলার তাপমাত্রা দশ ডিগ্রির আশপাশে ছিল। শৈত্যপ্রবাহ আশেপাশের অঞ্চলেও ছড়াতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শনিবার দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া তেঁতুলিয়ায় ৯ দশমিক ২, রাজশাহীতে ৯ দশমিক ৭, যশোরে ১০, ঈশ্বরদীতে ১০ দশমিক ২, বদলগাছিতে ১০ দশমিক ৩, গোপালগঞ্জে ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। 
সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা জনকণ্ঠকে জানান, শৈত্যপ্রবাহের মেয়াদ ১৬ তারিখ পর্যন্ত নেমে আসার সম্ভাবনা নেই। বরং কয়েক জায়গায় এর আওতা বাড়বে। এরপর দুই-একদিনের জন্য তাপমাত্রা আংশিক বাড়তে পারে। কিন্তু সেটি বলার মতো নয়। কিন্তু ২১-২২ ডিসেম্বরের পর শীতের তীব্রতা কয়েকদিনের জন্য কমে আসবে। সাধারণত ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা বিরাজ করলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। শনিবার পঞ্চগড়, রাজশাহী, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বলেন, দেশের কয়েকটি অঞ্চলে শৈত্য প্রবাহিত হচ্ছে। তাপমাত্রা আর খুব একটা নাও কমতে পারে। তবে আরও কিছু এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ বিস্তার লাভ করতে পারে। 
আবহাওয়াবিদ ড. মো. বজলুর রশিদ জানান, সারাদেশের রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামন্য হ্রাস পেতে পারে। মধ্যরাত থেকে দুপুর অবধি দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। উওরাঞ্চলে চলতি মাসের ১৯ বা ২০ ডিসেম্বরের পর শৈত্যপ্রবাহ বিস্তার করতে পারে জানিয়ে বলেন, আপাতত রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা ও পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ হচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। ঢাকায় শৈত্যপ্রবাহ না পড়লে ১০ ডিগ্রি অথবা এর কাছাকাছি আসতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।
চুয়াডাঙ্গা ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, শনিবার ১৪ ডিসেম্বর দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। এ নিয়ে ১২ ও ১৪ ডিসেম্বর দু’দিন দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হলো এ জেলায়। এদিন সকাল ৯ টার সময় চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার তাদের নিয়মিত আবহাওয়া পর্যবেক্ষণে এ তথ্য জানিয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা রয়েছে ৮৫ শতাংশ। তবে আজ কুয়াশা কম রয়েছে। এদিন সকাল ৬টার সময় চুয়াডাঙ্গার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯ দশমিক ২ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ। চুয়াডাঙ্গা জেলায় শীতের তীব্রতা ক্রমাগত বাড়ছে।

দুদিন ধরে তাপমাত্রা ২ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে গেছে। এর আগে ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার চলতি শীত মৌসুমে প্রথমবারের মতো এ জেলায় দেশের সর্বনি¤œ ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। গত ১৯ নভেম্বর থেকে এ জেলায় তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। তাপমাত্রা আরও কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিচ্ছে চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা জামিনুর রহমান। তিনি জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকায় প্রচন্ড শীত অনুভূত হচ্ছে। সকালে শীত ও কুয়াশা কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। আসছে সপ্তাহ থেকে শীত আরও বেশি হবে বলে তিনি জানান। 
রাজশাহী ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, রাজশাহীতে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। গত দুই দিন ভোরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এতে শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে উত্তরের এই জনপদ। রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার ভোর ৬টায় রাজশাহীর সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই জেলায় এবারের শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। শনিবারও ভোর ৬টায় রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা একই পাওয়া যায়। এদিকে তীব্র শীতের কারণে রাজশাহীতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সকাল সকাল কাজের সন্ধানে বের হওয়া শ্রমজীবী মানুষ।

খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছেন অনেকে। মানুষের ভিড় বেড়েছে ফুটপাতের গরম কাপড়ের দোকানে। শীতের কারণে শিশু ও বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছেন শীতজনিত অসুখবিসুখে। টানা শীত ও কুয়াশার কারণে রবিশস্যেরও ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের উচ্চ পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, রাজশাহীর আবহাওয়া আরও দু-একদিন এমন থাকতে পারে।

নীলফামারী ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, প্রচ- ঠা-া যেন শরীরে হুল ফুটাচ্ছে। রাইতত ঘুমাবা পারি না। মনে হয় বরফ পড়েছে। শনিবার  বিকেলে  জেলার ডিমলা উপজেলার চরখড়িবাড়ি তিস্তা নদীর চরের বাসিন্দা  আহাদ আলী (৬৩) আরও বলেন, হামরা গরিব মানুষগুলা জারত মরি যাইছি। হামার পেকে এনা নজর দেন বাহে।  এদিকে গোটা নীলফামারী জনপদের মানুষ ও প্রাণীকুল ঠা-ায় জবুথবু হয়ে পড়েছে।  গত দুইদিন ধরে দিনের ও রাতের আবহাওয়ার মধ্য ফারাক দেখা দিয়েছে। সকাল ১০টার পর রোদ উঠলেও বিকেলের পর কনকনে ঠা-া পড়ছে। আর রাতে বৃষ্টির মতো টিপটিপ করে কুয়াশা ঝড়ছে।  উত্তরের হিমেল বাতাসে শীতের প্রকোপ আরও বাড়ছে। মনে হয় রাত যেন  বরফ শীতল।

অভাবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ গরম কাপড়ের জন্য লন্ডা বাজার পুরনো কাপড়ের দোকানে ভিড় করছেন। জেলার অন্যান্য স্থানেও পুরনো কাপড়ের দোকানে ভিড় বেড়েছে ক্রেতাদের।  তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েছে শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষ। ঠা-ার কারণে কাজে বের হতে পারছেন না তারা।  বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে রাস্তা-ঘাট, লোকালয়। রাস্তায় কমেছে মানুষের চলাচল। উষ্ণতার আশায় কেউ কেউ আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করে নিচ্ছেন। 
দুর্ভোগে পড়েছে বয়স্ক ও শিশুরা। সরকারি ও বেসরকারিভাবে এখনো কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়নি। বিশেষ করে জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার তিস্তা নদী অববাহিকার লোকজন বেশি কষ্ট পাচ্ছেন। নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ লোকমান হাকিম জানান, শনিবার সকাল ৯টায় সৈয়দপুরে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ডিমলা উপজেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

×