ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ৭ হাজার ২শ’ জনের মৃত্যু, ২০ হাজার ছাড়ানোর শঙ্কা 

লাশ আর লাশ

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:৫১, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩; আপডেট: ০২:২৭, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

লাশ আর লাশ

ভূমিকম্পে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে একটি বহুতল ভবন। ধ্বংসস্তূপে জীবিত কেউ আছে কিনা সন্ধান করছেন উদ্ধারকর্মীরা

তুরস্ক ও সিরিয়ায় গত এক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পে প্রাণহানী সাত হাজার ছাড়িয়েছে।  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও মঙ্গলবার জানায়, সোমবারের এই ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় অন্তত আড়াই কোটি মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে অন্তত আট হাজার লোককে জীবিত উদ্ধার করেন।

ধারণা করা হচ্ছে, এখনো হাজার হাজার মানুষ ধ্বংসস্তূপের মধ্যে চাপা পড়ে আছে। উদ্ধার তৎপরতা জোরদারে তুরস্ক ও সিরিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, বাংলাদেশ ও ব্রিটেনসহ অন্তত ১৯ দেশ। মঙ্গলবারই কয়েক দেশের চৌকষ উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযান শুরু করেন। সোমবার ভোরে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ঐতিহাসিক গাজিয়ানতেপে সিরিয়া সীমান্তের কাছে শক্তিশালী এই ভূমিকম্প আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮।

তুরস্কের দুর্যোগ সংস্থা জানিয়েছে, ভূমিকম্পে সেদেশে ৫,৪০০ জনেরও বেশি মারা গেছে। সিরিয়ায় মারা গেছে ১৮০০ জনের বেশি। তুরস্কে ভূমিকম্পের ক্ষত কাটাতে আগামী তিন মাসের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান। মঙ্গলবার তিনি বলেন, তার দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এ জন্য আগামী তিন মাস ওই এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি থাকবে। তিনি বলেন, বিশ্বের ৭০ দেশ এই তুরস্কের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। 
প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে ধসে যাওয়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটতে পড়া শত শত পরিবারকে রক্ষায় সময় ফুরিয়ে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন সিরিয়ার সরকারবিরোধী অংশের পরিচালিত বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান রাদ আল-সালাহ। বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় হোয়াইট হেলমেটস নামে পরিচিত সংগঠনের উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার জন্য জরুরিভিত্তিতে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে সহায়তা প্রয়োজন বলে মঙ্গলবার জানান রাদ আল-সালাহ। 
তিনি বলেন ‘সময় ফুরিয়ে আসছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো শত শত পরিবার।

প্রতিটা সেকেন্ড জীবন বাঁচানোর, আমরা প্রতিটি মানবিক সংস্থার প্রতি জরুরিভিত্তিতে এ বিপর্যয় মোকাবিলায় নামতে ও বস্তুগত সহায়তার দিতে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। খবর এএফপি, বিবিসি ও আলজাজিরা অনলাইনের।  
ভূমিকম্পে উভয় দেশের বিভিন্ন শহরে প্রায় সাত হাজার ভবন ধসে গেছে। লোকজন ঘুমিয়ে থাকার ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশ দুটির প্রধান কয়েকটি বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সাহায্যকারী বিমান নামতে পারছে না। তুরস্ক ও সিরিয়ায় তুষাড়ঝড় অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে ভূমিকম্পে ঘড়বাড়ি হারিয়ে হাজার হাজার মানুষ খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই নিয়েছেন। অনেকে ঘরে ফিরতে ভয় পাচ্ছেন। এরকমই একজন মোস্তফা কোয়েনকু (৫৫)।

তিনি তার স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান নিয়ে গাড়িতে থাকছেন। তিনি বলেন, আমরা ঘরে যেতে সাহস পাচ্ছি না। ভয়ে আছি। বছরের পর বছর গৃহযুদ্ধে ধ্বংস হওয়া সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে আহতদের নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। সিরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, আলেপ্পো, লাতাকিয়া, হামা ও টারটাসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তুরস্ক পৃথিবীর অন্যতম ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা। দেশটিতে ১৯৯৯ সালে শক্তিশালী এক ভূমিকম্পে ১৭ হাজার লোক নিহত হয়। এদিকে তুরস্কের মধ্যাঞ্চলে মঙ্গলবার আরেকটি নতুন ভূমিকম্প আঘাত হানে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানায়, এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫। গোলবাসি শহরের কাছে এই কম্পনের গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার। 
ইউএসজিএস জানায়, সোমবারের ভূমিকম্পের পর অন্তত ১০০টি আফটার শক হয়েছে। ভূমিকম্পের মূল কেন্দ্র থেকে যতদূরে সরে গেছে আফটার শকের সংখ্যা ও মাত্রা হ্রাস পেয়েছে। তবে এখনো ৫ বা ৬ মাত্রার বেশি আফটার শক দেখা দিতে পারে। যার ফলে মূল ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ও অবকাঠামোগুলোর আরও ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। 
তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ হতাইয়ে একরাশ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়া এক নারীর কণ্ঠস্বর শোনা যায়। সাহায্য চেয়ে ডাকছিলেন তিনি। কাছেই প্রাণহীন এক শিশুর দেহ পড়ে ছিল। এই বেদনাদায়ক পরিস্থিতির মধ্যে নিজেকে দেনিজ বলে পরিচয় দেওয়া স্থানীয় এক বাসিন্দা বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন, হতাশায় হাত মোচড়াচ্ছিলেন। তিনি বলেন, তারা আওয়াজ করছে, কিন্তু কেউ আসছে না। আমরা ধ্বংস হয়ে গেছি, আমরা ধ্বংস হয়ে গেছি। তারা তাদের বাঁচাতে বলছে, কিন্তু আমরা তাদের বাঁচাতে পারছি না। তুরস্কের দুর্যোগ সংস্থা জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ১৩৭৪০ জন উদ্ধারকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে এবং ৪১ হাজারেরও বেশি তাঁবু, এক লাখ বিছানা ও ৩ লাখ কম্বল দুর্গত এলাকাগুলোতে পাঠানো হয়েছে।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমান সোইলু বলেন, ভূমিকম্পে গাজিয়ানতেপ, কাহরামানমারাস, হতাই, ওসমানিয়ে, আদিয়ামান, মালাটিয়া, সানলিউরফা, আদানা, দিয়ারবাকির ও কিলিস-এই ১০টি শহর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গণমাধ্যমে আসা ছবিতে দেখা গেছে, কাহরামানমারাস শহরে ধসে পড়া ভবনগুলোর চারপাশে লোকজন জড়ো হয়ে জীবিতদের খোঁজ করছে।
ঐতিহাসিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত ॥ তুরস্কে সোমবার আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে দেশটির ঐতিহাসিক গাজিয়ানতেপ দুর্গ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই ভূমিকম্পে তুরস্কের প্রতিবেশী দেশ সিরিয়ায় বেশ কিছু প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশটির প্রতœতত্ত্ব কর্তৃপক্ষ  মঙ্গলবার এ তথ্য জানায়।

×