ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠের জনসমুদ্রে শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগ পালায় না

মামুন-অর-রশিদ/ খুর্শিদ রাজীব, রাজশাহী

প্রকাশিত: ২২:৩৮, ২৯ জানুয়ারি ২০২৩

আওয়ামী লীগ পালায় না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার বিকেলে রাজশাহী মহানগরীর মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় জনতাকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা বিধৌত হযরত শাহমুখদুম (র.) এর পুণ্যভূমি রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠ ও তার চতুর্দিকের উত্তাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে দেশের উন্নয়নের জয়যাত্রা অব্যাহত রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, নৌকার ওপর বিএনপির এত রাগ কেন? নৌকার কারণে দেশ স্বাধীন হয়েছে। আর দেশ স্বাধীন হওয়ার কারণে জিয়াউর রহমান মেজর থেকে রাষ্ট্রপতি হয়েছে। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়েছে। এরপর নৌকার ওপর তাদের (বিএনপি) এত রাগ কেন? ক্ষমতা গেলে আওয়ামী লীগ পালানোর সুযোগ পাবে না-বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিএনপির উদ্দেশে বলেন, পালায় কে? আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই-আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না, পিছু হটে না। কারণ এটা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ে কাজ করে। পালায় আপনাদের নেতারাই। যেই নেতা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মুচলেকা দিয়ে দেশ থেকে ভেগে গিয়েছিল, সেই দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত নেতা (তারেক) আজ বড় বড় কথা বলে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়, বিদেশ থাকায় আমরা দুই বোন বেঁচে যাই। জিয়াউর রহমান বাধা দিয়েছিল- আমাকে দেশে আসতে দেবে না। আমি বাধা অতিক্রম করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরেছিলাম শুধু দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে।
রবিবার বিকেলে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজশাহী সারাজীবন অবহেলার ছিল। আপনারা এখানে নৌকায় ভোট দিয়েছেন। আমরা উন্নয়ন করেছি। রাজশাহীতে ১০ হাজার ৬৬০  কোটি টাকার উন্নয়ন করা হয়েছে। রাজশাহীতে ৪ হাজার কোটি টাকার কাজ চলছে। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করেছে।  
সভামঞ্চে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শুরুতেই প্রায় এক হাজার ৩১৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৬টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং প্রায় ৩৭৬ কোটি ২৮ হাজার টাকা ব্যয়ে আরও ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি বলেন, আজ যে কাজগুলো উদ্বোধন করা হলো এগুলো রাজশাহীবাসীকে আমার উপহার।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামালের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন প্রমুখ। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, রাজশাহী নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল।
আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, রাজশাহী-৫ আসনের এমপি ডা. মনসুর রহমান, রাজশাহী-৬ আসনের এমপি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, রাজশাহী সদর আসনের এমপি ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দীন, রাজশাহী-৪ আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, রাজশাহী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মীর ইকবাল প্রমুখ। এ ছাড়া সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, এমপি ও রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
বিএনপি নেতৃত্বের কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির নেতারা কে? বিএনপি না কি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে! কাকে নিয়ে? দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত তাদের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে। যে না কি ২০০৭-এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে স্ট্যাম্প কাগজে মুচলেকা দিয়েছিল, আর কোনোদিন রাজনীতি করবে না বলে দেশ থেকে ভেগে গিয়েছিল, পালিয়ে গিয়েছিল, সেই কথা কি বিএনপি নেতাদের মনে নেই?
তিনি বলেন, দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া, তারেক, এমনকি খালেদা জিয়া, তারেক ও কোকোর মাধ্যমে যে টাকা পাচার করেছিল মানিলন্ডারিং করে। ৪০ কোটি পাচারকৃত টাকা আমরা বাংলাদেশে নিয়ে এসেছি। এর জবাব কি তারেক দিতে পারবে? আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না। আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ে কাজ করে। তিনি বলেন, এই সংগঠন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠন যখনই ক্ষমতায় এসেছে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। তারা অগ্নিসন্ত্রাস করে এক হাজার ৮০০ বাস, ৩৩টি সরকারি অফিস, লঞ্চসহ অসংখ্য মানুষকে আন্দোলনের নামে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। সাধারণ মানুষসহ পুলিশকেও তারা নির্মমভাবে পিটিয়েছে। তারেক রহমান এতটা লুটপাট করেছে যে, বিদেশের মাটিতেও আয়েশি জীবনযাপন করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া, খালেদা জিয়া এদেশের মানুষের কথা চিন্তা করে নাই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। দেশে আর বেকারত্ব থাকবে না। সবার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না। এ সময় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী আবারও নৌকায় ভোট চাইলে জনসমুদ্রে থাকা লাখ লাখ মানুষ দু’হাত তুলে উন্নয়নের প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বিদেশে থাকায় আমরা দুইবোন বেঁচে যাই। আমি জিয়াউর রহমানের ষড়যন্ত্র রুখে শুধুমাত্র দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের লক্ষ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে আসি। এরশাদ, খালেদা জিয়া কেউ এদেশের মানুষের খাদ্যের নিরাপত্তা দেয়নি। আওয়ামী লীগ আজকে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। বিএনপি বলে ক্ষমতা গেলে পালানোর সুযোগ পাবেন না। আমি বলতে চাই, আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না। পালায় আপনাদের নেতারাই।
বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতাকে স্মরণ করেন। এ ছাড়া ত্রিশ লাখ শহীদকে স্মরণ করে তিনি বলেন, আমার বাবা মানুষের জীবন সুন্দর করতে চেয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে ৩ বছর সময় পেয়েছিলেন। বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ’৭৫ এর ১৫ আগস্টে আমার বাবাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে একাত্তরের ঘাতকরা। আমরা দুই বোনকে বিদেশে ৬ বছর রিফিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের যাদের বিচার শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু তাদেরকে এনে ক্ষমতায় বসায় বিএনপি। এমন সময় আমি দেশে ফিরি শুধু দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য। এই বিএনপি-জামায়াতের ভয়ে আমি পিছু হটিনি। আমি বাধা অতিক্রম করে দেশে ফিরেছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আমার ছেলের বউয়ের বাচ্চা হবার সময় আমি বিদেশে ছিলাম। আমার নামে মার্ডার কেস দিয়েছিল। তবুও আমি দেশে ফিরেছি। তখন আমি বলেছিলাম, আমি দেশে ফিরে এই কেস মোকাবিলা করব। কিন্তু বিএনপি বলে আওয়ামী লীগ পালাবার পথ পাবে না। আওয়ামী লীগ কখনো দেশ ছেড়ে পালায় না। দুর্নীতি করে তারেক জিয়াই পালিয়েছিল। আওয়ামী লীগ পালায় না কারণ এটা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ১৯৯৬ সালের আগে জিয়া, এরশাদ বা খালেদা কেউই দেশের জন্য কাজ করেনি। এই রাজশাহী সবসময় অবহেলিত ছিল। ২০০১ সালের কথা চিন্তা করেন। বিএনপি-জামায়াত জোট শুধু খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি, লুটপাট করতো। নৌকায় ভোট দেওয়ার কারণে একটি মেয়েকে নির্মমভাবে ধর্ষণ করে। আপনাদের কিসের এত রাগ? সে সময় বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন না করলে খালেদা কি প্রধানমন্ত্রী হতে পারতো? তাহলে মানুষ নৌকায় ভোট দিলে আপনাদের এত রাগ কেন?  
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই রাজশাহীতে পদ্মার ভাঙ্গন ঠেকাতে আমরা টিবাঁধ করেছি। ২০০৯ সাল থেকে এই ১৪ বছর ৬ হাজার ৬শ ৬৬ কোটি টাকার উন্নয়ন করেছি এই রাজশাহী জেলা ও মহানগরে। এবারও অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্প আপনাদের উপহার দিয়ে গেলাম।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের জন্য কাজ করে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও বৈশ্বিক মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি হলেও আমরা থেমে থাকিনি। সাধারণ মানুষের যেন কষ্ট না হয় বেশি টাকায় বিদেশ থেকে খাদ্য কিনে মানুষের হাতে কম টাকায় পৌঁছে দিয়েছি। আমরা মানুষের জন্য কাজ করি। আর বিএনপি শুধু অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করে। আপনারাই চিন্তা করেন বিএনপি-জামায়াত কীভাবে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। আর তারা সেই ডিজিটাল প্লাটফরমে মানুষকে উস্কানি দেয়। তারা শুধু মানুষকে হত্যা করতে পারে। তারা মানুষের উন্নতি সহ্য করতে পারে না। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। সামনে আরও উন্নত করব। তাই নৌকায় ভোট দিয়ে আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখুন। নৌকায় ভোট দিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করুন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমার অনুপস্থিতিতে আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি বানানো হয়। আমি আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি এমন একটি দেশে ফিরে আসি, যেখানে আমার কোনো বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। জাতির পিতার খুনিদেরকে ইনডেমনিটি দিয়ে বিচারের হাত থেকে রেহাই দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। সে অবস্থায় আমি দেশে ফিরে আসি শুধু বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য। ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি তারপর চেষ্টা করেছি, বাংলাদেশকে উন্নত করতে। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া কেউ এদেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দেয়নি। চিন্তাও করেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে।
তিনি আরও বলেন, এই রাজশাহীতে জাতির পিতা স্বাধীনতার পর কল-কারখানা করে দেন। এরপর সব বন্ধ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ বন্ধ কারখানা চালু করতে কাজ করে। পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য দীর্ঘ বাঁধ করে দিয়ে সেই ভাঙন আমরা রোধ করে দেই। এই রাজশাহীর মানুষের কর্মসংস্থানের কোনো ব্যবস্থা নেই। এরইমধ্যে রাজশাহীর মানুষের জন্য অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি আমরা।
টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। যেখানে ৪০ ভাগ দারিদ্র্যসীমা ছিল, আমরা ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ সমস্ত ভাতা আমরা দিয়ে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশে কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না। কোনো মানুষ না খেয়ে কষ্ট পাবে না। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। রাজশাহীতে একটি আন্তর্জাতিক মানের হোটেল করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তাহলে আমরা এখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করতে পারব।
বিএনপির পদযাত্রা মানে মরণযাত্রা-কাদের ॥ এর আগে সভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, পদ্মা নদীর সব ঢেউ আজ রাজশাহী শহরে চলে এসেছে, যাকে বলে জনতার ঢল। মঞ্চ আলোকিত করে বসে আছেন, যার জন্য আপনারা সকাল থেকে হাজার হাজার নরনারী মিছিলের নগরীতে পরিণত করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা, আমাদের আশা, আমাদের স্বপ্নের বাতিঘর জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ঘিরে। আজকে জনসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। এই মাঠে যত জন আছেন, বাইরে তার দশগুণ অপেক্ষা করে আছেন প্রধানমন্ত্রীর কথা শোনার জন্য।
তিনি বলেন, মনে আছে কিছুদিন আগে বিএনপি এখানে সমাবেশ করেছে। সেই সমাবেশে বিএনপি লাল কার্ড দেখায় ১০ ডিসেম্বর সরকারের পতন ঘটাবে বলে, ৩০ ডিসেম্বর সরকার চলে যায়, ১১ জানুয়ারি নতুন সরকার আসে। বিএনপি এখন পদযাত্রা করে। পদযাত্রা মানে শেষযাত্রা, অন্তিম যাত্রা, মরণ যাত্রা। তাদের এখন মরণযাত্রা হচ্ছে। তারা এখন সরকারকে পালাতে বলে, পালাবার পথ নাকি খুঁজে পাবে না। ফখরুল সাহেব, পালিয়ে তো আছেন আপনারা। তারেক রহমান মুচলেকা দিয়ে ৭ বছরের দ-প্রাপ্ত আসামি লন্ডনে পালিয়ে আছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্রের সময় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এই দেশেতে জন্ম আমার এই দেশেতে মরি। আমরা পালাব না। আমরা দরকার পড়লে ফখরুল সাহেবের বাড়িতে উঠব। তার ঠাকুরগাঁয়ের বাড়িতে উঠব। অন্তরের জ্বালা। পদ্মাসেতুর জ্বালা, মেট্রোরেলের জ্বালা, টানেলের জ্বালা। জ্বালা রে জ্বালা। উন্নয়নের জ্বালা। রাজশাহী ক্লিন সিটিতে পরিণত হয়েছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই শহরকে নবরূপে সজ্জিত করেছে মেয়র ও নেতৃবৃন্দ।
তিনি বলেন, সামনে বিএনপির আরও জ্বালা আছে। এবার মেট্রোরেল পাতাল রেলে। এবার জ্বালা রূপপুরের জ্বালা। মাতারবাড়ির আরেক জ্বালা, শতভাগ বিদ্যুতের জ্বালা। জ্বালা রে জ্বালা। জ্বালায় মরে ফখরুল আর বিএনপি। খেলা হবে। খেলা হবার আগেই তো পালানো শুরু হয়েছে। মরণ যাত্রা শুরু হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে খেলা হবে, লুটপাটের বিরুদ্ধে, অর্থপাচারের বিরুদ্ধে, হত্যা-ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে। আগামী নির্বাচনে ফাইনাল খেলা। আবারও পরাজয়ের মুখ দর্শন করতে হবে।
২৬টি প্রকল্পের উদ্বোধন ॥ সভামঞ্চে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শুরুতেই  প্রায় এক হাজার ৩১৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৬টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং প্রায় ৩৭৬ কোটি ২৮ হাজার টাকা ব্যয়ে আরও ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি বলেন, আজ যে কাজগুলো উদ্বোধন করা হলো এগুলো রাজশাহীবাসীকে আমার উপহার।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি নির্মাণ প্রকল্প, শেখ রাসেল শিশু পার্ক নির্মাণ প্রকল্প, মোহনপুর রেলক্রসিংয়ের ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প, ভদ্রা রেলক্রসিং থেকে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল পর্যন্ত চার লেন সড়ক ও ডিভাইডার নির্মাণ প্রকল্প, বন্ধ গেট থেকে সিটি হাট পর্যন্ত চার লেন সড়ক ও ডিভাইডার নির্মাণ প্রকল্প।
আরও রয়েছে, রাজশাহী হাইটেক পার্ক থেকে কোর্ট শহরতলি ক্লাব পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্প, রাজশাহী কল্পনা সিনেমা হল থেকে তালাইমারী মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প, পুঠিয়া-বাগমারা মহাসড়ক (জেড-৬০০৪) যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ষষ্ঠ তলা থেকে ১০ তলা পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ প্রকল্প, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের হেডকোয়ার্টার্স নির্মাণ প্রকল্প ও রাজশাহী ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্প।
আরও আছে, ৪০ উপজেলায় ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী জেলার মোহনপুর উপজেলায় একটি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প, রাজশাহী সরকারি শিশু হাসপাতালের নির্মাণ প্রকল্প, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প, ৬৪ জেলায় জেলা সমাজসেবা কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী সমাজসেবা কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প, পরিচালন বাজেটের আওতায় সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মেরামত ও পুনর্বাসন খাত প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ, বোয়ালিয়ায় ছয়তলা ভিত্তি বিশিষ্ট দ্বিতল ছাত্রীনিবাস নির্মাণ প্রকল্প।
এ ছাড়া রয়েছে ১০০টি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ (টিএসসি) স্থাপন প্রকল্পের আওতায় চারঘাট টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে পাঁচতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণ প্রকল্প ও রাজশাহীর নতুন সিভিল সার্জন অফিস ভবন প্রকল্প।
রাজশাহী জেলার চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় পদ্মা নদীর বাঁ তীরের স্থাপনাসমূহ নদীভাঙন থেকে রক্ষার্থে নদীতীর রক্ষা প্রকল্প, রাজশাহী জেলার চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় ভূমি পুনরুদ্ধার ও নদীর নাব্য বৃদ্ধির জন্য পদ্মা নদী ড্রেজিং প্রকল্প, রুরাল কানেকটিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট, তানোর উপজেলাধীন তানোর- আমনুরা ভায়া মুন্ডুমালা হাট চেইনেজ ও পবা উপজেলাধীন মল্লিকপুর বাইপাস (কুখন্ডি বাজার) আরএইচডি-রামচন্দ্রপুর জিসি আরএইচডি চেইনেজ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, রুরাল কানেকটিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্প, বাগমারায় ভবানীগঞ্জ-আহসানগঞ্জ (বাগমারা অংশ) চেইনেজ ও ভবানীগঞ্জ-কেশরহাট (বাগমারা অংশ) চেইনেজ এবং ভবানীগঞ্জ-(মাথাভাঙা) হাটগাঙ্গোপাড়া চেইনেজ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, রাজশাহীর চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি ৪) আওতায় পিটিআইয়ের তিনতলা বহুমুখী অডিটোরিয়াম নির্মাণ প্রকল্প, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্প, রাজশাহী সদর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্প।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- রাজশাহী তথ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ কাজ, রাজশাহী আঞ্চলিক পিএসসি অফিস ভবন নির্মাণ কাজ ও ৯টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের আওতায় ছোট বনগ্রাম মৌজা সরকারি মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের (শহীদ জননী জাহানারা ইমাম বালিকা উচ্চ  বিদ্যালয়) ১০ তলা একাডেমিক কাম প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ কাজ।
এ ছাড়া ৯টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের আওতায় বড় বনগ্রাম মৌজা সরকারি মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের (শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান বালক উচ্চ বিদ্যালয়) ১০তলা একাডেমিক কাম প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ কাজ, রাজশাহী বিকেএসপি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ এবং রাজশাহী ওয়াসা ভবন নির্মাণ কাজ।
মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় রাজশাহী ॥ রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দানে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বেলা ২টায়। তবে রবিবার সকাল ৭টার পর থেকেই জনসভাস্থলে আসতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা। সকাল ৯টার পরে মাদ্রাসা মাঠের প্রবেশমুখগুলো খুলে দেওয়া হলে ধীরে ধীরে প্রবেশ করতে থাকেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তবে জনসভার নিরাপত্তার স্বার্থে সবাইকে আলাদা আলাদাভাবে তল্লাশির পরে মাদ্রাসার মাঠের মধ্যে ঢুকতে দেওয়া হয়।
রাজশাহী মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড রাজশাহী জেলা থেকে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাদ্রাসা ময়দানের দিকে আসতে শুরু করে। আর যারা আগে থেকেই মাদ্রাসা মাঠের আশপাশের এলাকায় ছিলেন তারা মূল জনসভাস্থলে ঢুকতে শুরু করে। খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে দফায় দফায় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মাদ্রাসা ময়দানে প্রবেশ করেন। এলাকা ভেদে বিভিন্ন রঙের শার্ট, টি-শার্ট ও টুপি পরে নানান রকমের বাদ্যযন্ত্র নিয়ে তারা জনসভাস্থলের দিকে রওনা হন। আর নেতাকর্মীদের মুহুর্মুহু স্লোগানে মাদ্রাসা মাঠের আশপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠে দিনভর। পুরো রাজশাহী মহানগরীই মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। জনসভাস্থল ছাড়াও রাজশাহী মহানগরীর প্রতিটি সড়ক লোকে-লোকারণ্য হয়ে যায়।
জনসভার আগেই জনসমুদ্র্র ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠ ॥ রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার জনসভায় যোগ দিতে সকাল ১১টার মধ্যে কানায় কানায় মানুষে ভরে যায় ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠ। সকাল ৯টার আগে থেকেই উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠ। এরপর থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীতে পরিপূর্ণ হয় সভাস্থল।
ভোর থেকেই জনসভা এলাকায় আসতে শুরু করে নেতাকর্মীরা। জেলার বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি উপজেলা থেকেও মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন। এ সময় তাদের স্লোগানে-স্লোগানে মুখর রাজশাহী নগরী।
জনসভাকে কেন্দ্র করে কয়েক ধাপে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। এদিকে ট্রেনে-বাসে রাজশাহীর জনসভায় যোগ দিতে আসতে শুরু করে মানুষ। রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের জনসভার জন্য সাতটি বিশেষ ট্রেন চলাচল করেছে সকাল থেকে। এসব ট্রেন সারাদিন রাজশাহী-নাটোর, রাজশাহী-জয়পুরহাট, রাজশাহী-সান্তাহার, রাজশাহী-ঢালারচর ও রাজশাহী-সিরাজগঞ্জ রুটে চলাচল করে।

 

×