ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নীলক্ষেত তুলা মার্কেট

১৫৩ অবৈধ দোকান উচ্ছেদে ব্যয় হবে অর্ধকোটি টাকা

জনকণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৩:৫০, ২৪ নভেম্বর ২০২২

১৫৩ অবৈধ দোকান উচ্ছেদে ব্যয় হবে অর্ধকোটি টাকা

রাজধানীর নীলক্ষেতের তুলার মার্কেটে অবৈধভাবে গড়ে তোলা দোকানগুলো ভেঙে ফেলছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন

 বৈধ মার্কেটের অবৈধ দোকান উচ্ছেদে প্রতিদিন দেড় লাখ টাকা খরচ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। তিন তলাবিশিষ্ট রাজধানীর নীলক্ষেতের তুলা মার্কেটের বৈধ ৩৫ দোকান বাদে ১৫৩টি অবৈধ দোকান ভাঙতে প্রায় ২৫-৩০ দিন সময় লাগবে। এতে প্রায় অর্ধকোটি টাকা খরচ হবে বলে ডিএসসিসির কর্মকর্তারা জানান। ডিএসসিসি সূত্র জানায়, নীলক্ষেত তুলা মার্কেটের ১ম তলায় শুধু ৩৫টি দোকানই বৈধ। এছাড়াও তিন তলা মার্কেটের ২য় ও ৩য় তলা ৭৫টি করে মোট ১৫০টি এবং ১ম তলায় বৈধ ৩৫টি দোকানের সঙ্গে অবৈধভাবে আরও ৩টি দোকান নির্মাণ করা হয়। সব মিলিয়ে তুলা মার্কেটে মোট ১৫৩টি অবৈধ দোকান রয়েছে। মার্কেটের ১৫৩টি অবৈধ দোকান উচ্ছেদে গত ৬ নভেম্বর থেকে অভিযান পরিচালনা করে ডিএসসিসি। দৈনিক দিনে ও রাতে ১০০ শ্রমিক দিয়ে এ সব দোকান উচ্ছেদ করা হচ্ছে। গত ১৪ দিনে মার্কেটের তিনতলা ও দোতলায় বেশির ভাগ অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। পুরো কাজ শেষ করতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, ‘নীলক্ষেত তুলা মার্কেটের বৈধ ৩৫টি দোকানের ওপর ভিত্তি করে একটি অসাধু চক্র নিয়ম বহির্ভূতভাবে ১৫৩টি অবৈধ দোকান নির্মাণ ও সম্প্রসারণ করেছে। অভিযানে ১ম তলার বৈধ ৩৫টি দোকান বাদে বাকি সকল অবৈধ দোকান ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সকল অবৈধ দোকান না ভাঙা পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চলবে।’
প্রায় আড়াই কোটি টাকায় মার্কেট হয় তিনতলা ॥ জানা গেছে, ১৯৬১ সালে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজসংলগ্ন নীলক্ষেত রোড সাইটে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৩৭টি দোকান বরাদ্দ দেয় তৎকালীন নগর সংস্থা। অর্ধ শতকের বেশি সময় ধরে ওই জায়গায় অস্থায়ী দোকানগুলোতে যথাযথ নিয়ম মেনে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা।
কিন্তু ২০১২ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কয়েক অসাধু কর্মকর্তা বিধি ভেঙে নিজ খরচে সেখানে আরও ১৪৮টি দোকান বরাদ্দ দেয়। ওই বরাদ্দের বলে দোকান মালিকরা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ জায়গার ৪ কাঠা জায়গাজুড়ে তিনতলা মার্কেট গড়ে তোলেন। এতে প্রায় আড়াই কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তুলা মার্কেটের এক ব্যবসায়ী জনকণ্ঠকে বলেন, ‘মার্কেটের দোকানগুলো সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিয়েই নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে বৈধভাবে মার্কেট সম্প্রসারণ করে দোকানগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু এখন তা অবৈধ হয়ে গেল। বিভিন্ন সময় সিটি করপোরেশনের লোকদের সালামি দেওয়া হতো। কিন্তু এখন তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। সাধারণ ব্যবসায়ীর টাকা এভাবেই নষ্ট হচ্ছে কিন্তু দেখার কেউ নেই।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রায় এক দশক ধরে ওই মার্কেটটি অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। ডিএসসিসির অবৈধ ওই মার্কেটটি বৈধ করতে দুদফা মার্কেট ভবনের ফিটনেস টেস্ট করেছে। ২০১৪ সালে ‘হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্স ইনস্টিটিউট’র মাধ্যমে প্রথম ফিটনেস টেস্ট করা হয়। ওই টেস্টের রিপোর্ট ইতিবাচক আসে। ডিএসসিসির তৎকালীন প্রশাসন ওই টেস্ট রিপোর্টে খুশি হতে পারেনি। পরে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট) দিয়ে মার্কেটের ফিটনেস টেস্ট করায়, সেখানেও রিপোর্ট ইতিবাচক আসে। এতে ডিএসসিসির খরচ হয় প্রায় ২০ লাখ টাকা। এরপর ওই জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসসিসি। তবে যারা অস্থায়ী বরাদ্দ নিয়ে অবৈধ মার্কেট করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন, তাদের বাদ দিয়ে অন্যদের বরাদ্দ দেওয়ার উদ্যোগ নেয়।
ডিএসসিসি মার্কেটের দখলদারদের হটিয়ে অন্যদের বরাদ্দ দেওয়ার উদ্যোগ নিলে ২০১৮ সালে হাইকোর্টে ‘রিট মামলা’ করেন নীলক্ষেত সিটি করপোরেশন রোড সাইট মার্কেট দোকান মালিক সমিতি (দক্ষিণ)। ওই মামলায় মার্কেটের দখলদারদের নামে দোকান বরাদ্দ দেওয়ার আদেশ দেন হাইকোর্ট। এরপর ডিএসসিসির বরাদ্দ কমিটি ওই মার্কেটের দোকান বরাদ্দের উদ্যোগ থেকে সরে আসে।
এ বিষয়ে নীলক্ষেত সিটি করপোরেশন মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবু সাহাদাত লাবলু জনকণ্ঠকে বলেন, ‘১৯৬১ সাল থেকে নীলক্ষেত রোড সাইট মার্কেটটি পরিচালিত হয়ে আসছে। মার্কেটের দক্ষিণাংশের ৩৭টি দোকান ১৯৬১ সাল থেকে চলছে। আর সেখানে ২০১২ সালে নতুন করে ১৪৮টি দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। নিয়ম মেনেই এই দোকানগুলো করা হয়েছিলো। এখন সিটি করপোরেশন বলছে এ সব দোকান অবৈধ।’

 

 

×