ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মহিলা পরিষদ

বেশি যৌন হয়রানির শিকার স্কুল পড়ুয়া শিশুরা

প্রকাশিত: ১৮:১৫, ১৬ নভেম্বর ২০২২

বেশি যৌন হয়রানির শিকার স্কুল পড়ুয়া শিশুরা

যৌন হয়রানি শিকার

  • ২০২১ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৮১০জন নারী ও শিশু
  • ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণ বেশি করেছে গাড়ীচালকরা 
     

করোনা মহামারীকালীন সময়েও দেশে ৮১০ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ২০২১ সালের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২২৫টি। এসময় ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছে ১৯২ টি। শুধু তাই নয় এসময় যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণীতে পড়া মেয়ে শিশুরা। কন্যা ও নারীরা সবচেয়ে বেশি ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে চালক দ্বারা যথাক্রমে ৫ ও ৩ শতাংশ। অপরদিকে উত্যক্তকরন ও যৌন হয়রানি এবং ধর্ষণের চেষ্টা ক্ষেত্রে, নারী ও কন্যা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হন শিক্ষক দ্বারা, যা যথাক্রমে ১৭ ও ১৩ শতাংশ।

বুধবার ‘বাংলাদেশে নারী ও কন্যা নির্যাতন চিত্র ২০২১: ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা, যৌন হয়রানি ও যৌতুক’ শীর্ষক সমীক্ষার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরার সময় এসব তথ্য জানায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। সেগুনবাগিচায় সংগঠনটির সুফিয়া কামাল ভবন মিলনায়তনে এ লক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, পুরো বছরে উত্যক্তকরণ ও যৌন হয়রানি ৯৬ টি ও যৌতুক ১১৪ টি ঘটনা ঘটেছে। নারীদের তুলনায় কন্যারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে বেশি। ১৪-১৮ বছরের কন্যারা ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা ও দলবদ্ধ ধর্ষণে শিকার হয়েছে যথাক্রমে ১৮, ১১ ও ৩১ শতাংশ। উত্ত্যক্তকরণ ও যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে ১০-১৩ বছরের শিশুর সংখ্যা ২২ শতাংশ। যৌতুকের ক্ষেত্রে ১৮-২২ বছরের নারীরা সাধারণত বেশি নির্যাতনের শিকার হয়। এই হার ২২ শতাংশ। কন্যাদের মধ্যে ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বেশি। ধর্ষণের ক্ষেত্রে এই হার ৪৫%, দলবদ্ধ ধর্ষণের ক্ষেত্রে ৫২% এবং উত্ত্যক্তের ক্ষেত্রে ৬৭ %। 

কর্মজীবী নারীদের তুলনায় গৃহিণীরাই বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যৌতুকের জন্য ৮৩%, ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, উত্ত্যক্তকরণ, ধর্ষণের চেষ্টায় যথাক্রমে ৩৬%, ৩৭%, ১৭% এবং ৪৬% গৃহিণী নির্যাতনের শিকার হন। এই গবেষণায় ১৮ বছরের কম বয়স্কদের কন্যা এবং ১৮ বছরের বেশি বয়স্কদের নারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সমীক্ষায় দেখা যায়, শিশুরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিচিত মানুষ, বিশেষ করে নিকট আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়। এসময় বলা হয়, ধর্ষণের  ক্ষেত্রে তরুণদের সম্পৃক্ততা বেশি। অভিযুক্তদের মধ্যে ২৬ শতাংশের বয়স ১১-৩০ বছর। দলবদ্ধ ধর্ষণের ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশের বয়স ১৬-৩০ বছর এবং উত্ত্যক্তের ঘটনায় ৮৫ শতাংশের বয়স ১৬-৩০ বছর। 
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়নারীরা নিজ গৃহে সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ এবং ঝুঁকির মধ্যে থাকে। নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার মূল কারণ নারীর প্রতি অধস্তন মনোভার ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি। 

সংবাদ সম্মেলনের মডারেটর ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নানা ধরণের গবেষণা করে থাকে। তবে এটা ঠিক গবেষণা নয়, সমীক্ষা। সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ থেকে এই গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এই গবেষণা থেকে নারীর প্রতি সহিংসতার ধরণ (প্যাটার্ন) বা কোন ধরণের অপরাধ বেশি হয় তা বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। 

তথ্য উপস্থাপন শেষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, একটা সময় পারিবারিক সহিংসতা বেশি ছিল কিন্তু এখন ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ বেড়েছে। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে সামাজিক পরিসরে নারী বেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছে। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে কন্যারা এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি তরুণ। তরুণরা এর বাইরেও নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এসব গবেষণা/সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত সুনির্দিষ্ট ডাটা তথ্য নারী আন্দোলনের অ্যাডভোকেসির কাজে অনেক সাহায্য করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

এসময় জানানো হয়, যৌতুক, উত্ত্যক্তকরণ ও যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ এবং ধর্ষণের চেষ্টা নারী ও কন্যা নির্যাতনের এই পাঁচটি ক্ষেত্র বিবেচনায় নিয়ে দেশের ১২টি জতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদরে প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার উপপরিষদ এই সমীক্ষা করে। সমীক্ষার তথ্য উপস্থাপন করেন গবেষণা কর্মকর্তা আফরুজা আরমান। সঞ্চালনা করেন প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রীনা আহমেদ।

সভায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম ও অ্যাাড. মাসুদা রেহানা বেগম, সম্পাদকমন্ডলী, সাংবাদিক এবং সংগঠনের কর্মকর্তাসহ প্রায় ৫০ জন উপস্থিত ছিলেন।

 

স্বপ্না

সম্পর্কিত বিষয়:

×