ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিএসসির ৬ নতুন জাহাজ ক্রয়ে চীনা ঋণ প্রস্তাব নিয়ে দর কষাকষি

মোয়াজ্জেমুল হক

প্রকাশিত: ১৩:৫৭, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২

বিএসসির ৬ নতুন জাহাজ ক্রয়ে চীনা ঋণ প্রস্তাব নিয়ে দর কষাকষি

বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন

জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থা বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) জন্য নতুন ৬ জাহাজ কেনার বিপরীতে চীনের আড়াই হাজার কোটি টাকার ঋণ প্রস্তাব এখনও চূড়ান্ত হয়নি। চলছে দর কষাকষি। জাহাজ কেনার বিষয়টি জরুরী হলেও প্রক্রিয়াটি রয়েছে একেবারে শুরুর পর্যায়ে। চলতি বছর এ ৬ জাহাজ কেনার বিষয়টি চ‚ড়ান্ত করা গেলে এর সুফল পেতে সময় লাগবে কমপক্ষে আরও ৪ বছর। এ অবস্থায় বিএসসিকে আরও অধিকতর সচল ও লাভজনক পর্যায়ে আনতে কার্যকর দ্রুত সিদ্ধান্তের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরী বলে শিপিং সেক্টরের বিশেষজ্ঞ সূত্রে জানানো হয়েছে। 

সরকার বর্তমানে রামপাল, পায়রা ও মাতারবাড়িতে ৩টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পে প্রয়োজনীয় কয়লা বিদেশ থেকে আমদানি করা হবে। এর পাশাপাশি দেশে জ্বালানি তেলের একমাত্র পরিশোধনাগার চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারিতে ক্রুড অয়েল পরিশোধনের ক্ষমতা দ্বিগুণ করার প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে। অর্থাৎ দ্বিতীয় ইউনিট প্রতিষ্ঠার পর পরিশোধন ক্ষমতা দ্বিগুণ হবে। সরকারী বিভিন্ন প্রকল্প ও জ্বালানি খাতে তেল আমদানির বিষয়টি নিয়ে সরকার বিএসসিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানটিকে লাভজনক করার মাধ্যমে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনাও নিয়েছে। এরই আলোকে বিএসসিও নতুন নতুন জাহাজ কেনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এরই মধ্যে নতুন ৬টি জাহাজ যুক্ত হয়েছে সংস্থার বহরে। আগামীতে আরও যুক্ত হবে ৬টি। এই ৬টি জাহাজ কেনার ব্যাপারে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সংস্থার মহাব্যবস্থাপক আশরাফুল আমিন বৃহস্পতিবার জনকণ্ঠকে জানান, মূলত কি ধরনের জাহাজের প্রয়োজনীয়তা বেশি তা নিয়ে নিরীক্ষা করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, পূর্বে যে ৬টি জাহাজ চীন থেকে নির্মাণ করে ঋণের বিপরীতে আনা হয়েছে তাতে খরচ হয়েছে ১৮৪৩ কোটি টাকা। বর্তমানে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। জাহাজের নির্মাণ ব্যয় যেমন বেড়েছে, তেমনি টাকার বিপরীতে ডলারের মানও অনেক বেড়ে গেছে। সবমিলে আমদানি ব্যয় নিশ্চিতভাবে বেড়ে যাচ্ছে। 

অপরদিকে সংস্থার আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, চীন থেকে এসব জাহাজ আনার প্রক্রিয়া চলছে জি টু জি পর্যায়ে। চীনা ঋণে এবং সে দেশে এসব জাহাজ নির্মিত হবে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার এগোচ্ছে। ডলারের মূল্য বেড়ে যাবার পর পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। শুধু তাই নয়, জাহাজ নির্মাণ শিল্পেও ব্যয় বেড়েছে। সঙ্গত কারণে আগে যে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল বর্তমানে তা নিশ্চিতভাবে বেড়ে যাচ্ছে। বিএসসির সূত্র নতুন এ ৬ জাহাজ কত টাকার বিনিময়ে কেনার চিন্তা করছে তা নিশ্চিতভাবে না জানালেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এ জন্য ঋণ প্রস্তাব এসেছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। 

বিএসসির মহাব্যবস্থাপক আশরাফুল আমিন জানান, বর্তমান দেশের নৌবাণিজ্যের চাহিদা অনুযায়ী তারা কোন পর্যায়ের জাহাজের প্রয়োজনীয়তা বেশি সেটা নির্ণয় করার চেষ্টা করছে। তবে এটা সত্য যে, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন এ ৬ জাহাজ নির্মাণ করে চীন থেকে আনা হবে। একদিকে পরিধি যেমন বাড়বে, তেমনি বাণিজ্যিক কার্যক্রমেরও বিস্তৃতি ঘটবে। জাহাজ ক্রয় সংক্রান্তের বিএসসির টেকনিক্যাল কমিটি অয়েল ট্যাঙ্কার, বাল্ক ক্যারিয়ার, মাদার ট্যাঙ্কারের প্রয়োজনীয়তা এবং কোন ধরনের জাহাজ কেনার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেয়া হবে তা নিরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। তাদের এ পরিকল্পনা চ‚ড়ান্ত হবার পর বিএসসির বোর্ড সভায় উত্থাপিত হবে। বোর্ড সভা থেকে যাবে মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে যাবে সরকারের জি টু জি পর্যায়ে। তিনি আশা করছেন, আগের পরিকল্পনায় পরিবর্তন আসছে। সেটা দ্রæত করার জন্য চেষ্টা চলছে। তবে এখনও ডিপিপি প্রস্তুত করা হয়নি। এ নিয়ে গত সপ্তাহেও টেকনিক্যাল কমিটি বৈঠক করেছে। এ ৬ জাহাজ কেনার বিপরীতে জি টু জি ভিত্তিতে চীন কত টাকার ঋণ প্রস্তাবনা করেছে তা তিনি নিশ্চিত নন বলে জানান। 

বিএসসি বাংলাদেশ ও বহির্বিশে^ খাদ্যশস্য, জ্বালানি, ভোজ্যতেল, পোশাক, প্রক্রিয়াজাতকরণ খাদ্য, চা, চামড়া, কন্টেনারজাত মালামাল আমদানি ও রফতানির উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত একটি সংস্থা। ১৯৭২ সালে বিএসসির নৌবহরে জাহাজের সংখ্যা উন্নীত হয়েছিল ৪৪-এ। এরপর সব জাহাজ একে একে স্ক্র্যাপ হয়ে বিক্রি করে দেয়া হয়। একেবারে শেষ পর্যায়ে অর্থাৎ জাহাজের সংখ্যা ২টিতে নেমে আসার পর গত কয়েক বছরে নতুন ৬টি জাহাজ সংযুক্ত হয়। এরপরে আরও ৬টি জাহাজ কেনার পরিকল্পনা নেয়া হয়, যা এখনও চ‚ড়ান্ত করা যায়নি। মূলত বিশ^জুড়ে কোভিড পরিস্থিতি, এরপর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বাণিজ্যিক পরিস্থিতি ভিন্ন আঙ্গিকে আবির্ভূত হওয়ায় বিএসসি এ নিয়ে দ্রæত এগোতে পারেনি। 

বিএসসি সূত্র আরও জানিয়েছে, যেহেতু দ্বিতীয় পর্যায়ের এ ৬ জাহাজ চীনে নির্মাণ করে ঋণে কেনা হবে সে বিষয়ে পূর্বের পরিকল্পনায় পরিবর্তন এসেছে। মোদ্দা কথা, জাহাজের আমদানিমূল্য বেড়ে গেছে। এখন জি টু জি পদ্ধতিতে চীনের পক্ষে দেয়া প্রস্তাবনা নিয়ে দর কষাকষি চলছে। এ প্রক্রিয়ায় বিএসসির টেকনিক্যাল কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে- কি ধরনের জাহাজ এবং তা কত ডিডবিøউটির হবে তা নির্ধারণ করার জন্য। এ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলে নতুন ৬ জাহাজ কেনার ব্যাপারে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে খুব বেশি সময় লাগবে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। 
 

 এসআর 

×