ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদ

দানবাক্সে মিলল বিপুল অর্থ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জ

প্রকাশিত: ০১:২৫, ৩ জুলাই ২০২২

দানবাক্সে মিলল বিপুল অর্থ

দানবাক্সের টাকা গণনায় ব্যস্ত মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা

ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ এবং বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে। এবার ৩ মাস ২০ দিন পর শনিবার সকাল ৯টায় কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফার তত্ত্বাবধানে মসজিদের ৮টি দানসিন্দুক খোলা হয়। পরে দানবাক্সগুলোর টাকা বের করার কাজ শেষে মোট ১৬ বস্তা টাকা পাওয়া যায়। এ ছাড়া পাওয়া গেছে বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার। এখন চলছে টাকা গণনার কাজ। প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে টাকা গণনার কাজে রূপালী ব্যাংকের ৫০ জন স্টাফ, মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদ্রাসার ১১২ ছাত্র, মাদ্রাসা-এতিমখানা ও মসজিদ কমিটির ৩৪ জন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১০ জন অংশ নিয়েছেন। টাকা গণনার এই এলাহী কা- নিজ চোখে অবলোকন করতে মসজিদের আশপাশে ভিড় করেন শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ নানা শ্রেণী-পেশার উৎসুক মানুষ। তাদের মধ্যে অনেকে এসেছেন দূর-দূরান্ত থেকে। পাওয়া গেছে ৩ কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৪শ’ পনের টাকা। এর আগে সর্বশেষ গত ১২ মার্চ দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল। তখন ৪ মাস ৬ দিনে এই দানবাক্সগুলো জমা পড়েছিল ১৫ বস্তা টাকা। সেই বস্তাগুলো মসজিদের দ্বিতীয় তলার মেঝেতে ঢেলে দিনভর গণনা শেষে মোট টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ২৯৫ টাকা। এ ছাড়া জমা পড়েছিল বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা ও রূপা। প্রতিদিনই বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অসংখ্য মানুষ মসজিদটির দানসিন্দুকগুলোতে নগদ টাকা-পয়সা ছাড়াও স্বর্ণালঙ্কার দান করেন। এ ছাড়া গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্রও দান করে।
মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, করোনা সংক্রমণের শুরুতে মসজিদে মুসল্লিদের চলাচল এবং নারীদের প্রবেশাধিকার বন্ধ থাকলেও দান অব্যাহত ছিল। তিনি আরও জানান, পাগলা মসজিদ ও ইসলামী কমপ্লেক্সের খরচ চালিয়ে দানের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এ থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেয়া হয়। অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্তদের সহায়তাও করা হয়। তা ছাড়া কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকদেরও এই দানের টাকা থেকে সহায়তা করা হয়েছে। মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান জানান, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে দান করছেন এই মসজিদে। যারা দান করতে আসেন তারা বলে থাকেন, এখানে দান করার পরে নাকি তাদের আশা পূরণ হয়েছে। আর এ বিষয়টির কারণেই এখানে দান করে থাকেন তারা। পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম গণমাধ্যমকে জানান, বর্তমান পাগলা মসজিদকে একটি অন্যতম আধুনিক ইসলামিক স্থাপত্য হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে একটি আন্তর্জাতিক মানের মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণে মসজিদটিকে ঘিরে চলছে ব্যাপক উন্নয়নযজ্ঞ।
এ ছাড়া মসজিদের আয়ের ব্যাংকে জমানো টাকার লভ্যাংশ থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসা ও এতিমখানার উন্নয়নের পাশাপাশি দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী এবং দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত অসহায়দের কল্যাণে ব্যয় করা হয়ে থাকে। কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম। শহরের পশ্চিমে হারুয়াস্থ নরসুন্দা নদীর তীরে ১০ শতাংশ জমির ওপর মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। এ মসজিদের পরিধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্য। সম্প্রসারিত হয়েছে মূল মসজিদ ভবনও। তবুও দিন দিন মুসল্লিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থান সঙ্কুলান হচ্ছে না।
ইতোমধ্যে দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে ‘পাগলা মসজিদ ও ইসলামী কমপ্লেক্স’ হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। এ মসজিদের আয় দিয়েই কমপ্লেক্সের বিশাল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মসজিদটি ঘিরে চলছে আরও ব্যাপক উন্নয়নকাজ। মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতেও অর্থ সাহায্য করা হয়।
মানুষের ধারণা, খাস নিয়তে এই মসজিদে দান করলে মনের আশা পূর্ণ হয়। এ জন্য দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এখানে এসে মানতের টাকা সোনা, রূপার গহনা দান করে থাকেন। ২০২০ সালে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর লকডাউনের সময়ে মসজিদে মুসল্লিদের চলাচল সীমিত করে দেয়া হয় এবং মহিলাদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেয়া হয়। তখনকার পরিস্থিতিতেও মসজিদটিতে মানুষ দান অব্যাহত রাখেন। মুসলমান ছাড়াও অন্য ধর্মের মানুষেরাও এখানে দান করেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। আর এই ধারাবাহিকতা চলছে আড়াইশ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে।
সময়ের বিবর্তনে আজ এ মসজিদের পরিধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্যও। অনেক বছর আগে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে কিংবদন্তি আছে মসজিদটি গায়েবিভাবে নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি অত্যাধুনিক ধর্মীয় কমপ্লেক্স এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রসারিত হয়েছে মূল মসজিদ ভবনও। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সাল থেকে পাগলা মসজিদটি ওয়াক্ফের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। তখন থেকে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে মসজিদের সিন্দুক খুলে টাকা গণনা শুরু হয়।

×