সিলেটে খাবার পানির তীব্র সঙ্কট
সিলেটে বন্যাকবলিত এলাকায় খাবার পানি তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গত চারদিন থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও শনিবার দিন ছিল রোদ্রকরউজ্জ্বল। হাওড় ও নদী থেকে কমছে পানি। শনিবার সিলেটের সবগুলো নদীর পানি কমেছে। প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে পানি নামছে। তবে এখনও গ্রামের বেশিরভাগ এলাকা জলমগ্ন। প্রায় ১৭ দিন ধরে পানিবন্দী থাকা মানুষের দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার, কানাইঘাট পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার কমেছে। কুশিয়ারা নদীর পানি অমলসীদ পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার, শেওলায় ৫ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জে ২ সেন্টিমিটার কমেছে। কমেছে, লোভা, সারি এবং ধলাই নদীর পানিও।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, সিটি কর্পোরেশনের খালের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা হচ্ছে। যেদিকে খবর পাওয়া যাচ্ছে, সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা দল গিয়ে অভিযান চালাচ্ছে। পুরো নগরী ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পরিষ্কার করা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, পানি নামার গতি খুবই ধীর। তবে আগামী কয়েকদিন বন্যা পরিস্থিতি আর অবনতি হওয়ার শঙ্কা নেই। ১৫ জুন থেকে ভারি বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে বন্যার পানি। কবলিত উপজেলাগুলোর টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় খাবারের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট প্রকট হয়ে ওঠে।
খাবার পানির সঙ্কট ॥ সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যাকবলিত হয়ে ৮০ ভাগ নলকূপ পানিতে তলিয়ে যায়। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে ২০ ভাগ নলকূপ পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, সরকারী নলকূপের হিসাবের বাইরে ব্যক্তিকেন্দ্রিক বসানো অন্তত ৫০ হাজার নলকূপ শুধু সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। যে কারণে সুপেয় পানির চরম সঙ্কট দেখা দেয়।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুহাম্মদ শেখ সাদি রহমত উল্লাহ বলেন, বিভাগে সরকারী ব্যবস্থাপনায় দেয়া ৪৯ হাজার ১১০টি নলকূপ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। যার পরিমাণ ৮০ ভাগ হবে। এরমধ্যে সিলেট জেলায় ২০ হাজার ২৩৪টি, সুনামগঞ্জে ২৭ হাজার, হবিগঞ্জে ১ হাজার ৫৯১ এবং মৌলভীবাজারে ২৮৫টি। এর বাইরে ব্যক্তিকেন্দ্রিক ৫ গুণ নলকূপ রয়েছে। এসব নলকূপের অন্তত ৫০ হাজার বন্যায় প্লাবিত হতে পারে।
তিনি বলেন, বিভাগের বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে ২৬ লাখ ৬ হাজার ৪০০ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১১ লাখ ৭৮ হাজার, সুনামগঞ্জে ১৩ লাখ, হবিগঞ্জে ১ লাখ ১ হাজার এবং মৌলভীবাজারে ৮৫ হাজার। এর বাইরেও ১৩টি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট সরবরাহ করা হয়। সিলেট ও সুনামগঞ্জে ৫টি করে। ১টি নগরীতে ২টি রিজার্ভে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি মজুদ রাখতে ১২ হাজার ১৫১টি জেরিকেন বিতরণ করা হয়। এরমধ্যে সিলেট জেলায় ৭ হাজার ৭১টি, সুনামগঞ্জে ৫ হাজার, হবিগঞ্জে ১১২ ও মৌলভীবাজারে ৮০টি।
সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলার ৯৯টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। জেলায় ৩৫ হাজার নলকূপের মধ্যে ২৭ হাজার বন্যার পানিতে তলিয়েছে। আর বেসরকারী প্রায় ২ হাজার নলকূপ প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ৮টি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দেয়া হয়েছে। ১টি প্লান্ট থেকে অন্তত ৫ হাজার লিটার পানি সরবরাহ করা যায়।
আসন্ন ঈদে কোরবানির গরুর কেনা বেচা ও গরুর আমদানি নিয়ে অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বন্যায় সিলেটসহ ১৫ জেলায় ৬,৬৬২টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য ৩৩১ কোটি ৪৩ হাজার ৭৫০ টাকা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় ৫৫৯০টি খামার। ফলে ঈদ-উল-আজহাকে ঘিরে এখনও জমে ওঠেনি পশুর হাট। বন্যায় আক্রান্ত জেলাগুলোতে গবাদি পশু নিয়ে বিপদে পড়েছেন খামারিরা। বেড়ে গেছে পশুখাদ্যের দামও। ফলে কোরবানির ঈদে গবাদি পশুর দাম বাড়তে পারে।
বন্যায় বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর সড়কের একাধিক স্থানে ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় দুই উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তাই দুর্ভোগে পড়েছেন বালাগঞ্জবাসী। সড়ক পথে যোগাযোগ বিছিন্ন হওয়ায় বন্যাদুর্গতের ত্রাণ পরিবহনেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।