
ওয়াজেদ হীরা ॥ আমেরিকার সুস্বাদু তিশা ফল এখন রাঙ্গামাটির রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বাগানে। দেখতে অনেকটা আমের মতো কোনটা পেয়ারার মতো। ভেতরের অংশ ডিমের মতো বলে এটি ‘এগফ্রুট’ বলেও পরিচিত। সফেদা পরিবারের হলেও চেহারা ও স্বাদে একেবারেই ভিন্ন তিশা ফল। এ ফল উৎপাদনে দীর্ঘ গবেষণার পর সফল হয়েছে রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ের রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।
কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের দাবি, ফলটির গাছ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের দুটি গবেষণা কেন্দ্র ছাড়া বাংলাদেশের অন্য কোথাও নেই। রাইখালী ছাড়া খাগড়াছড়ির রামগড় গবেষণা কেন্দ্রেও এই ফল গাছ আছে। তিশা ফলের বৈজ্ঞানিক নাম চড়ঁঃবৎরধ পধসঢ়বপযরধহধ এটি ঝধঢ়ড়ঃধপবধব পরিবারের সদস্য। এর উৎপত্তি স্থল দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা। মেক্সিকোতে প্রচুর তিশা ফল রয়েছে। বর্তমানে ব্রাজিল, ভিয়েতনাম, তাইওয়ানসহ দক্ষিণ এশিয়ার উষ্ণমণ্ডলীয় দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা জানান, তিশা ফলের গাছ ১০ থেকে ১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। ফলটি দেখতে ডিম্বাকার। কাঁচা অবস্থায় সবুজ, পাকলে গাঢ় সোনালি থেকে কমলা রং ধারণ করে। পাকা ফল সাধারণত সাত সেন্টিমিটার লম্বা হয়। এর ওজন হয় ১২৫ গ্রাম। ডিমের মতো দেখতে বলে একে এগফ্রুট বা ডিমফলও বলা হয়। কেবল দেখতেই ডিমের মতো নয়, পাকা ফলের শাঁস সেদ্ধ ডিমের কুসুমের সঙ্গে চিনি মেশালে যেমন হয়, অনেকটা তেমন স্বাদের। ঘন রসে ভরা শাঁস ননিযুক্ত খাবারের মতো জিভের সঙ্গে লেগে থাকে। সুস্বাদু এই ফলে চিনি, আমিষ ও চর্বি আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। এ ছাড়া লোহা, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, বিটাক্যারোটিন, নিয়াসিন, রিবোফ্লোবিনসহ নানা ধরনের খনিজ উপাদান ও ভিটামিন আছে এতে।
রাইখালী পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মোঃ আলতাফ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, ফলটি প্রচুর মিষ্টি এবং ভিটামিন এ সবচেয়ে বেশি। এই ফল পেঁপে গাজরের বিকল্প ভিটামিন এ এর দিক থেকে। ভিটামিন এ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ায় বাড়িতে একটি গাছ থাকলে পরিবারের সদস্যদের ভিটামিনের অভাব দূর করা সম্ভব। এবার গাছে প্রচুর ফল আসে বলেও জানা যায়। বাগানে দুটি বড় গাছে প্রায় দুই শতাধিনের মতো ফল আসে। একই সঙ্গে মাতৃবাগান করা হয়েছে। বাগানের ফল একজন উদ্যোক্তাকে দেয়া হয়েছিল সেখান থেকেও ভাল ফল এসেছে বলেও জানান প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। এই ফল কিভাবে দেশে আসল সে বিষয়ে বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে সরকারী সফরে মেক্সিকোতে গিয়ে একজন বিজ্ঞানীর এই ফল খেয়ে ভাল লাগে যা পরবর্তীতে তিনি বীজ নিয়ে আসেন।
জানা গেছে, এই বীজ আনার পর খাগড়াছড়ির রামগড় গবেষণা কেন্দ্রে দেয়া হয়। তারই ধারাবাহিতকায় বিভিন্ন গবেষণার পর রাঙ্গামাটির রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে নেয়া হয়।
শিল্পী হাওলাদার যিনি গ্র্যাজুয়েশন করে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কৃষিপণ্য বিক্রি করেন। এই শিল্পী হাওলাদারকে এবার এই তিশা ফল দেয়া হয়। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, আমি যেহেতু অনলাইনে কৃষিপণ্য বিক্রি করি নতুন নতুন কিছু ফল চেয়েছিলাম। পরে অন্য ফলের সঙ্গে এই ‘এগফ্রুট’ নামের ফলটি পাই। এর সাড়াও ব্যাপক ভাল। যাদের কাছে এই ফল পাঠিয়েছি তারা এর অসাধারণ প্রশংসা করেছেন ভবিষ্যতে আরও দিতে পারলে তারা নেয়ার বিষয়ে আগ্রহী। ফলটির স্বাদ অসাধারণ যদিও আামাদের দেশে এটি অপরিচিত। এর আগে রামগড় পাহাড়ী অঞ্চল কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ২০০৯ সাল থেকে রামগড়ে গবেষণা কেন্দ্রের তিশাগাছে ফল ধরা শুরু হয়। বর্তমানে গাছ থাকলেও বাগানো কোন ফল নেই। প্রায় ত্রিশটির মতো গাছ আছে এই রামগড় গবেষণা কেন্দ্রে। রামগড়ে গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম ফয়সাল জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের বর্তমানে কোন ফল নেই গাছ আছে। আর আমার জানা মতে আমাদের এই গবেষণা কেন্দ্রে এবং রাইখালী ছাড়া আর কোথাও ফল গাছটি নেই। জানা গেছে, বিভিন্ন দেশে এই তিশা ফলটি উচ্চ ঔষধিগুণসম্পন্ন ফল হিসেবেও পরিচিত। ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক অবসাদ ও পেটের অম্বল দূর করে এই ফল। রাঙ্গামাটি অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া তিশা ফল চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে তিশা ফল চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।