সংসদ রিপোর্টার ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পর আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে জাসদের কঠোর সমালোচনা করলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। তিনি বলেন, জাসদ যদি সেদিন গণবাহিনী করে নির্বিচারে মানুষ হত্যা না করতো তাহলে বঙ্গবন্ধুর মতো অতবড় জাতীয় নেতাকে আমরা হারাতাম না। প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন নীলকন্ঠ, তাই সব বিষ হজম করছেন।
ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে আইন প্রণয়ন কার্যাবলীর নিষ্পত্তির পর পরই পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে কাজী ফিরোজ রশীদ জাসদকে তুলোধুনো করেন। এসব অভিযোগের জবাব দিতে জাসদের অপর অংশের কার্যকরী সভাপতি মইন উদ্দিন বাদল পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর দাবি করলেও ডেপুটি স্পীকার কাউকে ফ্লোর দেননি। বরং কাজী ফিরোজ রশীদের জাসদকে সমালোচনা করে দেওয়া সকল বক্তব্যে এক্সপাঞ্জ করেন।
সংসদ টিভিতে বিরোধী দলের এমপিদের দেখানো হয় না অভিযোগ করে আলোচনার সূত্রপাত করেন ছাত্রলীগ করে আসা জাতীয় পার্টি নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ। তিনি বলেন, আমাদের বিরোধী দলের এমপিদের সংখ্যা অত্যন্ত কম, মাত্র ৪০ জন। কিন্তু টিভিতে আমাদের মুখটা দেখানো হয় না। এর কারণ হচ্ছে এই সংসদে যিনি ‘ইনফরমেশন মিনিস্টার’ (তথ্যমন্ত্রী) তিনি জাসদ করেন। সমস্যাটা এইখানে না, সমস্যা হচ্ছে আমরা ছাত্রলীগ করেছি। আর তথ্যমন্ত্রী জাসদ করেন।
তিনি বলেন, একাত্তরে একসঙ্গে যুদ্ধ করলাম, সবকিছু করলাম। একই বিছানা থেকে উঠে উনারা (জাসদ) আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরলেন। অস্ত্র ধরার বিনিময় কি করলেন, আমাদের গুণে গুণে ২০ লাখ লোককে হত্যা করলেন। এই যে হত্যা করল, আজকে যে দুর্দিন-দূরাবস্থা সেদিন জাসদ যদি গণবাহিনী করে নির্বিচারে মানুষ হত্যা না করতো, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা না করত- তাহলে দেশের এতো ক্ষতি হতো না। বঙ্গবন্ধুর মত অতবড় জাতীয় নেতাকে আমরা হারাতাম না। ওই যে হত্যাকান্ড হলো, সারা দুনিয়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলো- আর সেই সুযোগটা নিল কুচক্রীমহল। সেই জন্যই আজ পর্যন্ত জাতি হিসেবে আমরা ভুগছি।
কাজী ফিরোজ রশীদ আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গতকাল (সোমবার) যথার্থই বলেছেন, এই বিষয়টা জাসদ করেছে। এসময় জাসদের একাংশের নেতা মইন উদ্দীন খান বাদল প্রতিবাদ করার চেষ্টা করলে তিনি ডেপুটি স্পীকারের প্রটেকশন চান।
ফিরোজ রশিদ বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) তো নীলকণ্ঠ। বিষ খেয়ে হজম করতে পারেন। উনি সমস্ত বিষ হজম করেছেন বলেই জাসদ আজ সংসদে আছে। আমার মনে হয়, ভবিষ্যতে এখন যারা গুপ্তহত্যা করছে তাদেরকেও উনি সংসদে নিয়ে আসবেন।
এসময় ডেপুটি স্পীকার কাজী ফিরোজ জাসদ সম্পর্কে প্রদত্ত সকল বক্তব্য এ´পাঞ্জ করে বলেন, সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ টিভিতে মুখ দেখানোর কথা বলতে গিয়ে কিছু স্পর্শকাতর কথা বলেছেন, সেগুলো কার্যবিবরণী থেকে এক্সপাঞ্জ (বাদ দেওয়া) হলো। এরপর হাসানুল ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদ থেকে বেরিয়ে পৃথক জাসদ গঠন করা সংসদ সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদল কথা বলার সুযোগ চাইলেও তাতে সায় দেননি ডেপুটি স্পীকার।