
ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ।
লন্ডনের ব্রিকলেনে ট্রম্যান ব্রুয়ারি কমপ্লেক্স কোনো ধরনের বাণিজ্যিক ভবন তৈরির পারমিশন না দিতে কাউন্সিলের প্লানিং কমিটির প্রতি আহবান জানিয়েছে সেইভ ব্রিকলেন ক্যাম্পেইন গ্রুপ।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) পূর্ব লন্ডনের হাসন রাজা সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সেইভ ব্রিকলেন ক্যাম্পেইন গ্রুপের নেতৃবৃন্দ এ আহবান জানান।
তারা বলেন, ব্রিকলেন বাঁচাতে কমিউনিটির মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। আগামী ৩১ জুলাই টাউন হলের সম্মুখে ডাকা প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ্রগহণ করতে কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহবান জানানো হয়। তাছাড়া ট্রম্যান ব্রুয়ারি কমপ্লেক্সে বাণিজ্যিক ভবন তৈরির পরিবর্তে সোশ্যাল হাউজিংয়ের ফ্লাট তৈরি করতে কাউন্সিলের প্রতি উদাত্ব আহবান জানানো হয়েছে।
সাবেক কাউন্সিলার পুরু মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন শর্ডিস টেনেন্ট-রেসিডেন্ট এসিয়েসিয়েশসের সাবেক চেয়ারম্যান জনাথন মোবার্লী, চিকসেন্ড এস্টেড রেসিডেন্ট এসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান দিপা মালিক, বাউন্ডারি এস্টেট এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সুজানা লুই, ইস্ট এণ্ড বাংলা হ্যারিটেজ সোসাইটির সাইফ ওসমানী, স্থানীয় কমিউনিটি ক্যাম্পেইনার ফয়সল আহমদ, ইয়ুথ ওয়ার্কার জাকারিয়া হোসাইন ও স্থানীয় ব্যবসায়ী আবুল খায়ের। এতে আয়োজক সংগঠনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাংবাদিক হাসনাত চৌধুরী।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আমাদের প্রাণের ব্রিকলেন আজ নানা কারণে হুমকীর মুখে। ব্রিটেনে বাংলাদশীদের রাজধানী খ্যাত ব্রিকলেন থেকে বাংলাদেশীদের বিতাড়িত করতে দীর্ঘদিন যাবত নানা অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। একসময় ব্রিকলেনের দু’ধারে ও আশাপাশের রাস্তায় বাংলাদেশী মালিকানাধীন অর্ধশতাধিক ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট ছিলো। ট্রেইলারিং ও গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীসহ আরো অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিলো। কিন্তু এখন মাত্র হাতেগোনা ক’টি রেস্টুরেন্ট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান টিকে আছে। আগের সেই জমজমাট পরিবেশ আর নেই। এর মূল কারণ এখান থেকে বাংলাদশীদের বিতাড়িত করা।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, রানিমেইড ট্রাস্ট নামক একটি চ্যারিটি সংস্থা ২০২০ সালে ‘বিয়ন্ড বাংলা টাউন’ নামক একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের ব্রিকলেন ছেড়ে যেতে বাধ্য হওয়ার মুল কারণ অস্বাভাবিক হারে রেন্ট বৃদ্ধি। এখানে ফ্রিহোল্ড ব্যবসায়ীর সংখ্যা মাত্র ১৪ শতাংশ। বাকি ৮৬ শতাংশই লীজ হোল্ডার । তাই প্রায় প্রতিবছর লীজ হোল্ডারদের রেন্ট বৃদ্ধি পাচ্ছে । ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়, গোটা লন্ডনে যে হারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের রেন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে তার চেয়েও ২৫ শতাংশ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে শুধু ব্রিকলেনে । আর এই বৃদ্ধির মূল কারণ এখানে বেশি বেশি বাণিজ্যিক ভবন তৈরি হচ্ছে । যেখানে বাণিজ্যিক ভবনাদী বেশি তৈরি হয়, সেখানে ছোটখাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের রেন্ট বহুগুণ বেড়ে যায় । ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যয় বহন করতে না পেরে স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, তারা ২০২০ সাল থেকে ব্রিকলেনের টু্ুম্যান ব্রুয়ারি কমপ্লেক্সকে (এক সময়ের মদ তৈরির কারখানা) বাণিজ্যিক ভবনে রূপান্তরের চেষ্টার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন । সবসময়ই এখানে স্থানীয় কমিউনিটির মানুষের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে সোশ্যাল হাউজিং তথা ফ্লাট তৈরির দাবী জানান তারা । টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল তাদের দাবীর প্রতি আন্তরিক। কাউন্সিলের লোকাল পলিসিও এখানে ফ্লাট তৈরির পক্ষে।
এই কমপ্লেক্সটির মালিক হচ্ছেন ইসরাইলী নাগরিক অফার জেলুফ। তিনি এখানে সোশাল হাউজিং নির্মাণের পরিবর্তে কমার্শিয়াল ভবন তৈরির চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। কমার্শিয়াল বিলডিং নির্মাণ হলে শুধু তিনিই লাভমান হবেন। অথচ এখানে সোশ্যাল হাউজিং তৈরি হলে কমিউনিটির মানুষ ব্যাপকভাবে উপকৃত হবেন । টাওয়ার হ্যামলেটসে তীব্র আবাসন সংকট বিরাজমান । হাজার হাজার মানুষ আবাসনের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষমান রয়েছে । ঘরের অভাবে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে । তাই ট্রম্যান ব্রুয়ারি কমপ্লেক্সে যদি সোশাল হাউজিং হয় তাহলে অনেক মানুষের আবাসন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।
তারা বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, ট্রম্যান ব্রুয়ারি কমপ্লেক্সের মালিক এখানে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণে অনুমতির জন্য প্লানিং কমিটির কাছে আবেদন করেছেন। কমিউনিটির স্বার্থে কিছুতেই যেন এখানে ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া না হয়। কাউন্সিলের লোকাল পলিসি অনুযায়ী উক্ত স্থানে যেন সোশাল হাউজিং নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয় । লোকাল পলিসি অনুযায়ী এই কমপ্লেক্সে ৩৪৫টি ফ্লাট তৈরি করা যাবে । তাতে ৩৪৫টি পরিবারকে বসবাসের সুযোগ করে দিতে পারবে কাউন্সিল।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয় আমরা জানতে পেরেছি, আগামী ৩১ জুলাই টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের প্লানিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে । উক্ত সভায় সিদ্ধান্ত হবে এখানে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হবে কিনা। তাই আমরা ওইদিন দুপুরে টাওয়ার হ্যামলেটস টাউন হলের সম্মুখে এক প্রতিবাদ সমাবেশ আহবান করেছি। কমিউনিটির স্বার্থে এই সমাবেশে সর্বস্তরের মানুষকে অংশগ্রহণের জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ থাকছে।
কাউন্সিলের বর্তমান প্লানিং কমিটি সম্পর্কে বলা হয়, ৯ সদস্যের এই কমিটিতে এসপায়ার পার্টির কাউন্সিলার রয়েছেন ৪ জন, লেবার পার্টির ৩ জন ও স্বতন্ত্র কাউন্সিলার ২জন। এসপায়ার পার্টির তিন কাউন্সিলার হলেন কাউন্সিলার আমিন রহমান, কাউন্সিলার সাঈদ আহমদ, কাউন্সিলার গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী ও কাউন্সিলার ইকবাল হোসাইন। লেবার পার্টির তিন কাউন্সিলার হচ্ছেন, কাউন্সিলার শুভ হোসাইন, কাউন্সিলার আসমা বেগম ও কাউন্সিলার লিলু আহমদ। এসপায়ার পার্টি থকে পদত্যাগী স্বতন্ত্র দুই কাউন্সিলার হচ্ছে কাউন্সিলার কবির হোসাইন ও জায়েদ আহমদ চৌধুরী। কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, এসপায়ার পার্টির কাউন্সিলার আমিন রহমান।
তারা কমিটির সদস্যদের প্রতি আহবান জানান, কমিউনিটির বৃহত্তর স্বার্থে ট্রম্যান ব্রুয়ারি কমপ্লেক্সে কমার্শিয়াল ভবন নির্মাণের অনুমতি প্রদান থেকে বিরত থাকুন।
মিরাজ খান