
গুগলের সহায়তায় সম্পাদিত ছবি: সংগৃহীত
কবিতা যেন হয়ে উঠেছিল জনগনের ভাষা, অত্যাচারী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ক্ষুরধার তরবারি,আরও একবার প্রমান হল কলম অসির চেয়ে ঢের শক্তিশালী৷
'মোসলেম ভারত' ও 'বিজলী'তে প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই সেদিনের তরুণরা যেন বিদ্রোহীর ভাষায় সামাজিক, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের নতুন প্রেরণা পেয়েছিলেন। পাঠক আগে শোনেননি সমাজের উৎপীড়নে এমন শপথ আর কোনও কবির মুখে তিনি বাঙালির হৃদয়ের কবি কাজী নজরুল ইসলাম৷
'মহা-বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেইদিন হবো শান্ত
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দনরোল
আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ
ভীম রণভূমে রণিবে না—
বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেইদিন হবো শান্ত'৷
আজও আগুন ঝরা এই লাইনগুলি পড়লে আবালবৃদ্ধ বনিতার শিরায় শিরায় যেন বয়ে যায় তরল অনল৷ কাব্য বিচারে 'বিদ্রোহী'র মূল্য মানুষের কাছে আলাদা হতে পারে তবে দৃঢ় কণ্ঠে বলা যায় 'বিদ্রোহী' আসলে আগুনের একটি গোলা৷ অনুসন্ধিৎসু পাঠকের সঙ্গে অবশ্য ওই তরুণ কাজী নজরুলের পরিচয় কিছুদিন আগেই হয়েছিল 'মোসলেম ভারতে'প্রকাশিত 'ভাঙার গান'কবিতার মধ্য দিয়ে৷ সেদিনের যুগ মানস 'বিদ্রোহী' কবিতার মধ্যে প্রতিধ্বনিত হয়েছে সে কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না৷
ব্রিটিশ রাজশক্তি এমন কবিতায় সচকিত হবে এতে আর আশ্চর্যের কি আছে৷ সব অন্যায়, অত্যাচারের বিরুদ্ধে নজরুলের মত এভাবে গর্জে ওঠার সাহস হবে কার! রক্তচক্ষু ব্রিটিশ সরকারের আমলারা এক 'বিদ্রোহী' কবিতায় হয়ে গেলেন বেসামাল ৷ কিন্তু কোনও আইনেই যে 'বিদ্রোহী'র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না৷
দেশের সমগ্র জনসমষ্টির কাছে সেদিন সবচেয়ে বড় উৎপীড়ক ইংরেজ শাসক, মানুষের রোষ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে, তাই 'বিদ্রোহী' কবিতা নিছক কবিতা নয় বরং এই কবিতা সত্যি আক্ষরিক অর্থে জাতীয় আন্দোলন রচনায় সব প্রতিবাদকে এক লহমায় একত্র করার পটভুমি তৈরি করেছিল, দেশবাসী অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। সুতরাং 'বিদ্রোহী' কবিতার সামাজিক ও ঐতিহাসিক তাৎপর্য অনেকটা বড় মাপের সে কথা নতুন করে বলার অবকাশ নেই৷
লেখক হিসেবে কাজী নজরুল হয়ে উঠেছিলেন ব্রিটিশের সব থেকে বড় মাথা ব্যাথার কারন। সে কারণে তাঁর রচনা সব চেয়ে বেশি শাস্তি পেয়েছে৷ 'বিদ্রোহী'কে আইনের বেড়াজালে না পেলেও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের লেখনী বারবার রাজরোষে পড়েছে৷ আজ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিবসে অতল শ্রদ্ধাঞ্জলি।
রাজু