জীবনের শূন্যরেখাটি ছুঁয়ে নিজেকে সেই শূন্যে মিলিয়ে দেবার বাসনা
“যদি পারতুম একেবারে শূন্য হয়ে যেতে
ডুবে যেতে স্মৃতিহীন স্বপ্নহীন অতল ঘুমের মধ্যে—-
তবে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে না হতো
এই বাঁচার চেষ্টায়——” বুদ্ধদেব বসু।
জীবনের শূন্যরেখাটি ছুঁয়ে নিজেকে সেই শূন্যে মিলিয়ে দেবার বাসনা, এর মধ্যে কি কোনো তৃপ্তি বা প্রশান্তি কাজ করে? অন্ধকার ভূমিগর্ভ হতে মৃত্তিকার যে বিপুল উদাত্ত আহ্বানে প্রাণ আলোয় উঁকি দেয়, সেই আলোয়-আলো আকাশ, সব আনন্দ আয়োজন সব তো আমারই জন্য। বিপুলা পৃথিবীর সবটুকু রূপ-রস-গন্ধ প্রাণভরে উপভোগ করার নামই তো জীবন। এ তো কেবল আলোর পথ ধরে সামনে ছুটে চলা। তারপর জীবনের সূর্যাস্তের জন্য অপেক্ষা। অনন্ত গোধূলির শেষ আলোয় নিজেকে দেখা, ‘সেইক্ষণে খুঁজে দেখো কিছু মোর পিছে রইল সে’।
শৈশব থেকে বার্ধক্য, এই ব্যস্ততম যাত্রায় নিজেকে নিয়ে ভাবনার ফুরসত কোথায় মানুষের? কারণ সে তো দায়বদ্ধ পরিবারে-সমাজে-রাষ্ট্রে, সর্বত্রই সে শৃঙ্খলিত। তবুও ‘সংসার মাঝে কয়েকটি সুর, রাখি দিয়া যাব করিয়া মধুর/দু একটি কাঁটা করি দেব দূর, তারপর ছুটি নেব’ এই তো জীবনের ভাবনা। কিন্তু নিজ হাতে দপ্ করে বাতি নিভিয়ে দিলে যে অন্ধকার নেমে আসে তার কি কোনো মোহনীয় রূপ আছে? আছে কি তার কোনো মহার্ঘ ঐশ^র্য?
না হলে কোনো নিশিপাওয়া তাকে আহ্বান জানায় সেই চির-রহস্যময় জগতে? তাই হয়তো জীবনানন্দ লিখেছিলেন ‘শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার’। কাদম্বরী দেবীর স্বেচ্ছা আত্মহননের কিছুদিন পর তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। নাম দিয়েছিলেন ‘আত্মা’। সেই প্রবন্ধে তিনি লেখেন, ‘যে আত্মবিসর্জন করতে পারে, আত্মার উপর শ্রেষ্ঠ অধিকার শুধু তারই জন্মাতে পারে’।
কবি নজরুল ইসলামকে উৎসর্গীত ফাল্গুনী নাটকের মর্মকথা ব্যাখ্যায় মৃত্যু সম্পর্কে তিনি বলছেন, ‘যে লোক নিজে এগিয়ে গিয়ে মৃত্যুকে বন্দি করতে ছুটেছে, সে দেখতে পায়, যাকে সে বেঁধেছে সে মৃত্যুই নয়, সে জীবন’। দার্শনিক হেগেল এই দাবি করেছিলেন যে, ‘মানুষ স্বাধীন, আত্মহত্যা করার ক্ষমতা শুধু মানুষেরই আছে। নিজের জীবন নিজে হরণ করে মানুষ প্রমাণ করতে পারে প্রাণীর জীবন আর মানুষের জীবন আলাদা’। সত্যিই তো মানুষ স্বাধীন! তার আত্মমর্যাদাবোধ তাকে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে শেখায়।
বীরকন্যা প্রীতিলতা ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগে মুখে পুরে দিলেন পটাসিয়াম সায়ানাইড ক্যাপসুল। ওঁর বন্ধু কল্পনা দত্ত লিখেছিলেন, ‘নিরীহ জীব মারতে পারত না প্রীতি। কিন্তু স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতে কিংবা নিতে সে সদা প্রস্তুত ছিল। অজ্ঞাতবাস থেকে মাকে লিখেছিলেন দেশ স্বাধীন করার জন্য এখনও কন্যারা প্রাণ দেয়নি। তাদের অনুপ্রেরণা দিতেই তিনি মৃত্যুবরণ করছেন’।
অগ্নিযুগের বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকী সমস্তিপুর রেলস্টেশনে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে নিজে রিভলবার শরীরে ঠেকিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। এখানে নিখাদ দেশপ্রেমের পাশাপাশি আত্মমর্যাদাবোধ থেকে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতারই জয় হয়েছে। গল্পগুচ্ছের ‘স্ত্রীর পত্র’ ছোটগল্পে বিন্দুর আত্মহণনের মধ্যে দিয়ে মৃণাল অনুভব করলো সংসারজীবনে মেয়েদের ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবোধেরও একটা মূল্য আছে।
পাগল স্বামীর সংসারে নিত্য অবহেলা, অত্যাচার, অদৃষ্টের লিখন এসবের কাছে নিজেকে সঁপে না দিয়ে বিন্দু যে ইচ্ছেমৃত্যুটাকে বেছে নিয়েছে; তা তার নিজের কাছে অনেক সম্মানের অনেক মর্যাদার। তাই রবীন্দ্রনাথ মৃণালের মুখ দিয়ে বলিয়ে নিয়েছেন ‘তোমরাই যে আপন ইচ্ছেমতো আপন দস্তুর দিয়ে ওর জীবনটাকে চিরকাল পায়ের তলায় চেপে রেখে দেবে, তোমাদের পা এতো লম্বা নয়। মৃত্যু তোমাদের চেয়ে বড়। সেই মৃত্যুর মধ্যে সে মহান’।
‘ঘাটের কথা’ ছোটগল্পের চরিত্র কুসুম,আট বছর বয়সেই সে স্বামীকে হারিয়ে বাপের বাড়িতে চলে আসে। প্রতিদিন বিষণœমনে সে একাকি নদীর ঘাটে বসে থাকত। একদিন এক সৌম্যদর্শন সন্ন্যাসী সেই ঘাটে এসে উপস্থিত হলেন। সন্ন্যাসীর প্রতিদিনের পূজার ফুল যোগাড় করে দিয়ে, মন্দির ঝাড়-ঝাপটা দিয়ে ভালোই দিন কেটে যাচ্ছিল কুসুমের। একরাতে কুসুম স্বপ্নে দেখলো সেই সন্ন্যাসীই তাঁর হারিয়ে যাওয়া স্বামী। পরদিন সন্ন্যাসীকে সেই স্বপ্নের কথা বলতেই এক আত্মগ্লানিতে তার মন বিষিয়ে উঠলো।
সব শুনে সন্ন্যাসী বলেছিলেন তাঁকে ভুলে যেতে হবে, আর এটাই হবে কুসুমের সাধনা। এই বলে সন্ন্যাসী সেখান থেকে চলে গেলেন। কুসুম উত্তর দিয়েছিলো ‘প্রভু তাহাই হইবে’। কুসুম এটা জানতো বেঁচে থাকলে তাঁকে সে ভুলে যেতে পারবে না। তাই সন্ন্যাসী চলে যাবার পর কুসুম ধীরে ধীরে গঙ্গার জলে নিজেকে সমর্পণ করে দিয়েছিলো। কাহিনী বিন্যাসে রবীন্দ্রনাথ কুসুমের চরিত্রে কোনো দাগ লাগতে দেননি বরং তিনি তার স্বাধীন ইচ্ছাকেই প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
‘রাজর্ষি’ উপন্যাসে একটি ছোট্ট বালিকা রাজাকে প্রশ্ন করেছিল মন্দিরের সোপানে এত রক্ত কেন? সেদিন শত শত পশু বলি দেওয়া হয়েছিল মন্দিরের বিগ্রহের সামনে। আর সেই রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে আসছিলো সিঁড়ি দিয়ে। এটাই ছিল রাজপরিবারের কুলপ্রথা। কিন্তু বালিকাটি সেই বিভৎসতা সহ্য করতে পারেনি। নিজেই তার শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে দিয়েছিল সেই রক্ত। রাজা বালিকাটির প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
কিন্তু তিনি বলি বন্ধ করার আদেশ দিয়েছিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন রাজপুরোহিত রঘুপতি। তিনি তাঁর সন্তানতুল্য বিশ^স্ত অনুচর জয়সিংহকে আদেশ দিয়েছিলেন রাজাকে হত্যা করে সেই রাজরক্ত দেবতার উদ্দেশ্যে আহুতি দিতে হবে। জয়সিংহ এই অন্যায় আদেশ পালন করতে দ্বিধাগ্রস্ত হন। তারপর দেবীপ্রতিমার সামনে নিজেই আত্মাহুতি দিয়ে রাজার প্রতি তাঁর আনুগত্য ও বিশ^াসের সত্য রক্ষা করেন।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘জাগরণ’ ছোটগল্পের জমিদার আলেখ্য রায়, পিতার জমিদারির দায়িত্ব পাবার পর সেরেস্তার সব বৃদ্ধ কর্মচারীদের ছাঁটাই করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর সেই নির্দেশের ফলে তের টাকা বেতনের বৃদ্ধ কর্মচারী নয়ন গাঙ্গুলি ছাঁটাই হয়েছিলেন। একটি বিধবা কন্যা আর নাবালক এক নাতি তাঁর উপর নির্ভরশীল ছিল।
এই তের টাকা বেতনই ছিল সংসারের একমাত্র আয়। সুতরাং নয়ন গাঙ্গুলি তাঁর চাকরি রক্ষার জন্য জমিদার কন্যার কাছে কাতর আবেদন করেছিলেন। শরৎবাবু লিখছেন ‘কিন্তু আলেখ্য রায়, তাহাদের সভ্য-সমাজের কতদিনের উৎসব, কত আহার-বিহার, গান-বাজনার আয়োজন, কত বস্তু, কত অলঙ্কার, কত গাড়ি-ঘোড়া, ফুলফল, কত আলোর মিথ্যা আড়ম্বরের জন্য জলের মত টাকা খরচ করিলেও সামান্য তেরো টাকা বেতনের কর্মচারী নয়ন গাঙ্গুলির আবেদন নিষ্ঠুরতার সহিত নামঞ্জুর করিয়া তাঁহার বাঁচিবার পথ রুদ্ধ করিয়া দিয়াছিলেন।
ফলে উপায়ন্তর বৃদ্ধ নয়ন গাঙ্গুলি আত্মহত্যা করিয়া জমিদারি ক্ষুধার পরিতৃপ্তি ঘটিয়েছিলেন’। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বিষবৃক্ষ’ উপন্যাসের কুন্দনন্দিনী, নগেন্দ্রনাথের প্রতি অভিমান করে বিষপান করে। মৃত্যুশয্যায় কুন্দ তার স্বামী নগেন্দ্রনাথকে বলছে ‘তোমাকে দেখিয়া মরিবার ইচ্ছা ছিল, সে সাধ পূর্ণ হইল, কিন্তু তোমাকে দেখিলে মরিতে আর ইচ্ছা হয় না’। কুন্দর ‘অপরাধ’ সে বিধবা হয়েও নগেন্দ্রনাথের প্রেমে পড়ে তাঁকে বিয়ে করেছিল।
উপন্যাসের ¯্রষ্টা বঙ্কিম বাবু লিখছেন ‘বিধবার বিয়ে শাস্ত্রে আছে। তাহার জন্য নয়। তবে কুন্দ ডুবিয়া মরিল না কেন? স্বচ্ছ বারি-শীতল জল-নিচে নক্ষত্র নাচিতেছে-কুন্দ ডুবিয়া মরিল না কেন?’ জীবনানন্দ দাশের মৃত্যু দুর্ঘটনা নাকি আত্মহত্যা এ নিয়ে অনেক কথাই হয়েছে। কিন্তু ১৩৪৪ বঙ্গাব্দে বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকার চৈত্র সংখ্যায় প্রকাশিত তাঁর ‘আট বছর আগের একদিন’ কবিতাটি সে রহস্যকে আরও গভীরে নিয়ে যায়।
‘অর্থ নয় কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয়/ আর এক বিপন্ন বিস্ময়/আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে/খেলা করে; আমাদের ক্লান্ত করে/আমাদের ক্লান্ত-ক্লান্ত করে’। জীবনানন্দ কি এই ভেবেই জীবনের সব ক্লান্তির ইতি টেনেছিলেন?
আমাদের চারপাশে প্রতিদিন ঘটে যাওয়া আত্মহত্যার ঘটনাগুলো সবটাই হয়তো তেমন কাহিনী বা কবিতার মত ছকে বাঁধা নয়।
কিন্তু যে সামাজিক আর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত বৈষম্য সৃষ্টি করে চলেছে, যেখানে ভোগবাদিতার কাছে ক্রমেই হেরে যাচ্ছে নৈতিকতা-মূল্যবোধ, সমষ্টি যখন ব্যক্তিত্বরহিত, তখন সেই শিথিল সমাজ কাঠামোতে নৈরাজ্য অবশ্যম্ভাবী। সেই নৈরাজ্য জন্ম দিচ্ছে আত্মকেন্দ্রিকতা, হতাশা, নিজের প্রতি অক্ষম আক্রোশ। তাই জীবন থেকে পালিয়ে বাঁচার জন্য কেউ কেউ স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নিয়ে সমাধানের উপায় খুঁজছে।
এ যেন পরাজিত জীবনের এক সহজ সমীকরণ। অনুশাসন বলছে ‘আত্মহত্যা মহাপাপ’! লিখিত আইন বলছে শুধু আত্মহত্যার চেষ্টা কিংবা এর প্ররোচনাকারী ব্যক্তি, উভয়কেই দ-বিধির আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা যাবে। কিন্তু যে সমাজকাঠামো, রাজনীতি আর অর্থব্যবস্থা প্রতিনিয়ত এই পরিণতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে তার বিচারের জন্য কোনো কাঠগড়া আছে কি?
ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুরখেইম (১৮৫৮-১৯১৭) ‘থিওরি অব সুইসাইড’ লিখেছিলেন ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে। যা সে-সময় একটি অনবদ্য বিশ্লেষণ বলে স্বীকৃত হয়েছিল। আত্মহত্যা নিয়ে তাঁর চিন্তাধারা আজও প্রাসঙ্গিক। তিনি লিখেছিলেন আত্মহত্যা একটি সামাজিক প্রপঞ্চ। সমাজের সঙ্গে ব্যক্তির সম্পৃক্ততা, অতিসম্পৃক্ততা কিংবা বিচ্ছিন্নতা বা আত্মকেন্দ্রিকতা এই সবই তার জীবনকে প্রভাবিত করে।
আত্মহত্যাকে তিনি আত্মকেন্দ্রিক,পরার্থপর ও নৈরাজ্যমূলক এই তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করেছিলেন। তিনি বিশ^াস করতেন সমাজকাঠামোর মধ্যে এর কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। তিনি আত্মহত্যাকে শ্রমবিভাজনের নেতিবাচক দিক হিসাবে ব্যাখ্যা করেন যা সামাজিক সংহতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তাঁর সমকালীন সমাজচিন্তক ও দার্শনিক কার্ল মার্কস একইভাবে শ্রমবিভাজনে অসাম্য, শ্রমের উদ্বৃত্ত মূল্যের তত্ত্ব বিশ্লেষণ করে শোষনের সর্বগ্রাসী রূপ, আর শ্রেণি সংগ্রামের অনিবার্যতা তুলে ধরেছিলেন।
এসবই হয়তো তত্ত্বকথা,যা প-িতজনের ভাবনার বিষয়। কিন্তু বিরাজমান বাস্তবতায় বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি এখন হাজারো এনজিওর ঋণ আর কিস্তির জালে আটকা পড়ে আছে। তাই কিস্তির জ্বালা মেটাতে দিশেহারা কৃষক তথা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি যখন আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার শ্রমিক কাজ জোটাতে না পেরে সন্তানদের মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে নিজেও সেই পথ অনুসরণ করে, কিংবা যৌতুকের দাবি মেটাতে অসমর্থ পিতার রাজকন্যাটি যখন গলায় রশি লাগিয়ে পরদিন সংবাদপত্রের মফস্বল পাতায় এক স্লিপ জায়গা করে নেয়; তখন সব কাব্য আর তত্ত্বকথার আড়ালে থাকে সমাজের নিষ্ঠুরতা,সাধারণের অসহায়ত্ব, আর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে যায় শোষণের ভূমি এখনো কতটা উর্বর।