ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কার্ল স্যান্ডবার্গের কবিতা

ভূমিকা ও অনুবাদ : তূয়া নূর

প্রকাশিত: ০১:৪১, ১৮ নভেম্বর ২০২২

কার্ল স্যান্ডবার্গের কবিতা

কার্ল স্যান্ডবার্গ

কার্ল স্যান্ডবার্গ বিংশ শতাব্দীর এক অন্যতম মার্কিন কবি, লোক-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বক্তা, গল্পকার এবং সঙ্গীতজ্ঞ। তার বাবা ম্যা সুইডেন থেকে এসে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের অভিবাসন গড়ে তোলেন। কার্ল স্যান্ডবার্গ জন্মেছিলেন গ্যাইলসবার্গ শহরে জানুয়ারির ৬ তারিখ, ১৮৭৮ সালে।
১৯১৩ সালে স্পেনের বিরুদ্ধে আমেরিকার যুদ্ধে তিনি ছিলেন একজন সৈনিক। এরপর শিকাগোতে সাংবাদিকতা করেন ও কবিতা পত্রিকায় কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে। আমেরিকার শ্রমিক জীবন নিয়ে লেখা তাঁর মুক্ত ছন্দের কবিতাগুলো খুব জনপ্রিয়। আমেরিকান জীবনযাপনকে কবিতায় চমৎকারভাবে তুলে আনবার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। জীবদ্দশায় তিনি শিকাগো পোয়েমস (১৯১৬), কর্ন হাস্কারস (১৯১৮) এবং স্মোক এ্যান্ড দ্য স্টিল কাব্যের জন্য সমধিক প্রসিদ্ধ ছিলেন।
দারিদ্র্যের কারণে তেরো বছর বয়সে স্কুল ছাড়তে হয় তাকে। পরিবারকে সাহায্য করেন ইট বিছানো থেকে শুরু করে থালা ধোয়ার মতো কাজ করে। পোর্টোরিকোতে তিনি স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধের সময় আট মাস দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে কাজ করার সময়, লোমবার্ড কলেজের একজন ছাত্রের সঙ্গে তার পরিচয় হয়, স্যান্ডবার্গের নিজ শহরে অবস্থিত ছোট কলেজ। যুবকটি স্যান্ডবার্গকে যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর লম্বার্ডে নাম লেখাতে রাজি করায়।

স্যান্ডবার্গ কলেজে তার কাজ দিয়ে দৃষ্টি কাড়েন অধ্যাপক ফিলিপ গ্রিনের। তিনি স্যান্ডবার্গকে লেখায় উৎসাহিত করেন। তার প্রথম খণ্ড কবিতার প্রকাশের জন্য আর্থিক সাহায্য করেছিলেন। কার্ল স্যান্ডবার্গ ছিলেন সমাজতন্ত্রী। উইসকনসিনে সোশ্যাল-ডেমোক্র্যাট পার্টির হয়ে কাজ করেছিলেন। কার্ল স্যান্ডবার্গ-ই প্রথম শ্বেতাঙ্গ যিনি কৃষ্ণাঙ্গ অধিকার আন্দোলনে বীরোচিত অংশগ্রহণ করে সিলভার প্ল্যাক এওয়ার্ড প্রাপ্ত হন।
স্যান্ডবার্গ শিকাগোতে চলে আসেন। সেখানে শিকাগো ডেইলি নিউজের সম্পাদকীয় লিখতে শুরু করলেন। কবিতা প্রকাশ করতে শুরু করলেন হ্যারিয়েট মনরোর কবিতা পত্রিকায়। এই সময়কালেই স্যান্ডবার্গ শিকাগো সাহিত্যের পুনর্জাগরণের সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন বেন হেচট, থিওডোর ড্রেইজার, শেরউড অ্যান্ডারসন এবং এডগার লি মাস্টার্স।
দীর্ঘ তিরিশ বছর ধরে তিনি কাজ করে আব্রাহাম লিংকনের ওপর। লিখলেন ছয় খণ্ডের জীবনী। শিশুদের জন্যও লিখেছেন তিনি। তিনবার তিনি পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছেন, দু’বার কবিতার জন্য ও একবার পেয়েছেন আব্রাহাম লিংকনের ওপর জীবনী গ্রন্থের জন্য। প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন বলেন, ‘কার্ল স্যান্ডবার্গ ছিলেন আমেরিকার কণ্ঠের চেয়েও বেশি, কবির চেয়েও বেশি তার শক্তি এবং প্রতিভা। তিনি ছিলেন নিজেই একটা আমেরিকা। স্যান্ডবার্গ ২২ জুলাই, ১৯৬৭ সালে মারা যান।
বিখ্যাত ‘শিকাগো’ কবিতায় তিনি এই শহরে গরিমা ও তাৎপর্য তুলে ধরেছেন। কবিতাটা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯১৪ সালে ‘পোয়েট্রি’ পত্রিকায়।

শিকাগো
কার্ল স্যান্ডবার্গ

সারা পৃথিবীর শুকরের কসাই,
যন্ত্র নির্মাতা, গমের দানা চাতালে পালাকারী কামলা,
রেলপথ ও জাতির মাল পরিবহনের কর্মী;
ঝড়ো, পেশল, সংগ্রামী,
চওড়া কাঁধের শহর:

তারা আমাকে বলে তুমি নষ্ট আর আমি তা বিশ্বাস করি,
কারণ আমি দেখেছি সাজগোজ করে তোমার মেয়েরা
গ্যাস বাতির নিচে খামারের ছেলেদের ফুসলায়।
তারা বলে তুমি দাগী, আর আমি বলি, হ্যাঁ, সত্যি তো
আমি বন্দুকধারীদের খুন করতে দেখেছি, মুক্ত হয়ে আবার খুন করতে ছুটে।
তারা বলে তুমি নৃশংস আর আমি উত্তরে বলি, আমি নারী ও শিশুদের মুখে অসহায় ক্ষুধার মাতম দেখেছি।
আমি উত্তর দিয়ে আরও একবার তাদের দিকে ফিরে আসি যারা এই শহরটাকে উপহাস করে,
আমি তাদের উপহাস ফিরায়ে দিয়ে বলি :
আসো এবং দেখাও আমাকে আরেকটা শহর যেখানে মানুষ মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার
আনন্দে গান করে, তারা চাঁছাছোলা, শক্তিমন্ত ও সুচতুর।
চৌম্বকীয় অভিশাপের ভেতরেও মাটি খোঁড়ার মতো তারা পরিশ্রমী কাজ করে,
এখানে একজন লম্বা সাহসী মুষ্টিযোদ্ধা অন্য সাজানো গোছানো শহরগুলোর চেয়েও বেশি প্রাণশক্তির প্রতিবিম্ব।
কুকুরের মতো হিংস্র, সুচতুর এক বিধ্বসী লড়াকু অসভ্যতার বিরুদ্ধে।
খালি মাথায়
বেলচা হাতে
ভেঙে ফেলছে
পরিকল্পনা করছে
গড়ছে, ভাঙছে আবার গড়ছে
ধোঁয়ায় আবৃত, ধুলো সারা মুখ জুড়ে, হাসছে সাদা দাঁত বের করে,
হাসছে তারা তরুণদের মতো নিয়তির ভয়ানক পরিণতির ভেতর।
একজন অনভিঙ্গ যোদ্ধার মতো হাসে যে কখনো কোন যুদ্ধে হারেনি,
লাফায় আর হাসে কব্জির ধমনীর কম্পনের নিচে, এবং তার পাঁজরের নিচে যেখানে মানুষের হৃদয় থাকে, চির হাস্যময়।
হাসছে ঝড়ো, পেশল, সংগ্রামীর তরুণের হাসি,
অর্ধ নগ্ন, ঘর্মাক্ত,
গর্বিত শুকরের কসাই
যন্ত্র নির্মাতা, গমের দানা চাতালে পালাকারী কামলা,
রেলপথ ও জাতির মালামাল পরিবহনের কর্মী হতে পেরে।

×