ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১

সৈয়দ হকের নেপেন দারোগার দায়ভার

প্রদীপ দত্ত

প্রকাশিত: ০১:৪২, ২৯ জুলাই ২০২২

সৈয়দ হকের নেপেন দারোগার দায়ভার

সৈয়দ হকের

হিমালয় থেকে নেমে এসেছে এই নদী, এর নাম আধকোষাবর্ষাকালে যখন ঢল নামে তখন রাতারাতি এই নদী ফুলে ফেঁপে চারগুণ হয়ে যায়তাই হয়তো নদীর নাম আধকোষাতবে চৈত্র মাসে শুকিয়ে একেবারে উপবাসী সাধুর  মতোএই আধকোষা সৈয়দ শামসুল হকের কল্পনার নদীকল্পনার জনপদ জলেশ্বরীর মতই তার গল্প-উপন্যাসে মূর্ত হয়ে আছেউত্তরের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার আর ব্রহ্মপুত্র পাড়ের দারিদ্র্যপীড়িত মানুষ, তাদের প্রকৃতির মতই সরলতা, প্রেম, জীবন-সংগ্রাম, দ্রোহ সবকিছুই যেন এক বিশাল ক্যানভাসে চিত্রিত হয়েছে সৈয়দ হকের অসামান্য সৃষ্টি নৈপুণ্যে

নেপেন দারোগার দায়ভারগল্পে সৈয়দ হক যেন ইতিহাসের এক বিশাল দায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেনআঠারো শতকের শেষভাগে বৃটিশের রাজত্বে এ অঞ্চলের ইজারাদার দেওয়ান দেবী সিংহের অত্যাচারে অতিষ্ঠ কৃষক-প্রজারা জোট বাঁধেবর্ধিতহারে খাজনা আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়, যা ইতিহাসে রংপুরের প্রজা বিদ্রোহ কিংবা ফকির- সন্ন্যাসী বিদ্রোহ নামে খ্যাতসাহিত্য সম্রাট বঙ্কিম চন্দ্র সেই সংগ্রামের মধ্যমণি দেবী চৌধুরাণী, ভবানী পাঠক, ফকির মজনু শাহ প্রমুখের নাম ইতিহাসে অমর করে রেখে গেছেন তার দেবী চৌধুরাণী আর আনন্দমঠ উপন্যাসে

নূর উদ্দিন বাকের জং, দয়াশীলের গৌরবজনক সংগ্রাম নিয়ে সৈয়দ হকের নূরুলদীনের সারাজীবননাটকটি আমাদের এক মহাজাগরণের ডাক দিয়ে যায়রংপুরের এই কৃষক বিদ্রোহের এক প্রতীকী চরিত্র দেবেশ বকশিআধকোষা নদী পেরুলেই তার গ্রামগ্রামের নাম কাঁঠালবাড়িগল্পের আর এক চরিত্র নেপেন দারোগা, শ্রী নৃপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য্যব্রিটিশের অন্নে প্রতিপালিত, যার কাছে প্রভুর আজ্ঞাবহ হয়ে থাকটাই জীবনের সার্থকতাদেশপ্রেম, স্বজাতিবোধ, সাধারণ মানুষের জন্য আবেগ ভালোবাসা, কোনো কিছুই তাকে স্পর্শ করে না

কৃষক বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ, ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামসহ সকল শ্রেণীসংগ্রামেই জোতদার-জমিদার, আমলা-মুসুদ্দি, দারোগা এদের অবস্থান ছিলো সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধেমুক্তি সংগ্রামের পথে এক বিশাল বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল তারাবাংলায় ব্রিটিশ রাজত্বকে দীর্ঘায়িত করার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকাই ছিলো মুখ্যসৈয়দ হক এই ছোটগল্পটির কাহিনী বিন্যাসে এর কেন্দ্রীয় চরিত্র নেপেন দারোগাকে তুলে ধরেছেন এমনই এক আত্মকেন্দ্রিক, প্রভুর আজ্ঞাবহ, আর কঠিন হৃদয়ের একজন মানুষ হিসেবেগল্পে সে একজন বিদ্রোহী কৃষকের লাশ বয়ে নিয়ে যাচ্ছে কাঁঠালবাড়ী গ্রামে

জেল হাজতে পুলিশের নির্মম নির্যাতনে যার মৃত্যু হয়েছেগরুর গাড়ীতে তার লাশ বহন করে নিয়ে যাচ্ছে দুজন হিন্দুস্তানী সেপাই, শিউশরণ আর রামদাসপাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে চেপে চলেছে নেপেন দারোগাতারা যখন এই আধকোষা নদীর ঘাটে এসে উপস্থিত হয় তখন ঘাটে কোন মাঝি ঘাটিয়াল কেউ নেইসবাই প্রাণভয়ে পালিয়েছেসম্পূর্ণ জনশূন্য হয়ে পড়েছে এই এলাকাদেবেশ বকশির হাজতে মৃত্যুর খবর জেনে আতঙ্কিত হয়েছে গ্রামের লোকতারা জেনেছে লাশের সাথে একশ গোরা সেপাই আসছে গ্রাম জ্বালিয়ে দিতে

নয়ত এমন বিরান হওয়ার কথা নয় এই গ্রাম এদিকে রংপুরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বেল সাহেব হুকুম দিয়েছেন আজ রাতের মধ্যেই দারোগাকে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এই লাশ দাহ করতে হবেযতরাত্রিই হোক রক্তমুখো বেল সাহেব নিজ বাংলোয় অপেক্ষা করবেন শেষ রিপোর্ট নেয়ার জন্যএদিকে কর্তব্যের দায় অথচ এই সুনসান নীরবতায় প্রায় অন্ধকার নদীতীরে ক্ষুধা পিপাসা আর সারাদিনের পথক্লান্তিতে কাতর নেপেন দারোগার কণ্ঠে বিরক্তির ঝাঁজ, ‘ইংরেজদের সাথে লড়তে আসেছোঃ হাজতে দুটো রামডলা খেয়েই লীলাসাঙ্গ! রাগে সে হাতের ছড়ি নিজের উরুতেই মারতে থাকে

এদিকে শিউশরণ ও রামদাস ঘাটের অদূরে বাঁধা একটা নৌকা নিজেরাই ঠেলে নিয়ে আসেসেইসাথে গ্রামের নেংটিপরা এক ছেলেকে পাকড়াও করে আনেছেলেটি লাল পাগড়ি সেপাই, বিশালগোঁফ দারোগা, ঘোড়া সবকিছু দেখে থরথর করে কাঁপতে থাকেভয়ে সে প্রস্রাব করে দেয়দারোগা হুঙ্কার ছেড়ে বলে, ঘাটিয়াল কই? লোকজন কই? কোথায় গেল সব? ছেলেটি ভয়ে যা বলতে থাকে তার একবর্ণও বোঝা যায় নাশুধু বলে- কাইও নাই, কাইও নাই, সোওগ চলি গেইছে! সে ভয়ার্ত চোখে গরুর গাড়ীর দিকে তাকিয়ে মৃত দেবেশ বকশির লাশের পা দুটো দেখতে পায়তখন নেপেন দারোগার হাতের চাবুকটি সজোরে ছেলেটির পিঠে আছড়ে পড়ে

আবার গর্জে ওঠে নেপেন দারোগা- ভাগো হিঁয়াসে! এখানে ব্রিটিশ রাজত্বে দারোগা-পুলিশের ক্ষমতা, উর্দির দম্ভ, অসহিষ্ণুতা আর সাধারণের প্রতি তুচ্ছতাচ্ছিল্য প্রকাশে সৈয়দ হক আমাদের যেন সেই সময়ে ফিরিয়ে নিয়ে যান তাঁর নিজস্ব অসামান্য অনুভূতি দিয়েসিপাহি দুজন ধরাধরি করে লাশ নৌকায় তোলেএকটা ময়লা চাদর দিয়ে ঢাকা লাশটির মুখের উপর থেকে হঠা চাদর সরে গেলে দেখা যায় তার চোখদুটো যেন বিস্ফোরিতএই হারামজাদা! বলে নেপেন দারোগা নিজের হাতের ছড়ি দিয়ে লাশের মুখটি আবার ঢেকে দেয়এই বিস্ফোরিত চোখদুটো যেন সহ্য করতে পারছিল না সেকারণ, সেই চোখ দুটোয় ছিল প্রচন্ড ঘৃণা আর বিদ্রোহের আগুননৌকায় লাশের সাথে এখন সে নিজে আর দুজন সিপাই

নেপেন দারোগার ঘোড়াটি পানিতে নেমে সাঁতরে চলেছেএভাবে নদী পার হয়ে গ্রামে পৌঁছে তারাএটাই দেবেশ বকশির গ্রামপুরো গ্রাম এক অদ্ভুত অন্ধকারে ঢেকে আছে ! বোঝা গেল সম্পূর্ণ জনশূন্য সেই গ্রামএই অন্ধকারেই ঘোড়ার পিঠে চেপে গ্রামের একেবারে ভেতরে চলে যায় নেপেন দারোগাহৃদয়হীন আক্রোশে খুঁজতে থাকে, গ্রামবাসী কাউকে ধরে আনা যায় কিনাকিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেচিকার করে বলতে থাকে- সব শালা ভাগলবা, আওরত মরদ সব ভাগ গিয়াএকঠো কুত্তাভি হ্যায় নেহি’  এই নিঃসঙ্গ ভয়ার্ত পরিবেশে হিন্দুস্থানী সিপাহিদের ভাষায় কথা বলে সে যেন তাদেরই একজন হতে চায়

প্রবল আক্রোশে নেপেন দারোগা আরো বলতে থাকে শালা আন্দোলন কর, চাষীদের সমান ভাগ হবে, ব্রিটিশ রাজত্বের অবসান হবে গরিবের রাজত্ব হবে, খুব দরদ! এখনতো কেউ নেই তোমার পাশে! এই ইংরেজ সরকারকেই তো তোমার লাশ দাহ করার দায়িত্ব নিতে হচ্ছেএখানে সৈয়দ হক তাঁর অসামান্য বর্ণনা রীতিতে আন্দোলনের দুর্বল দিকগুলো ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেনগ্রাম থেকে আধ মাইল দূরে শ্মশান ঘাটলাশ সিপাহিদের কাঁধে চাপিয়ে নিজেই ঘোড়া ছুটিয়ে একা চলে যায় শ্মশানেসেখানে একটা পোড়া কাঠের গুঁড়ির উপরে একাকী বসে অপেক্ষা করতে থাকে

এমন গা ছমছম করা শ্মশানে বসে থাকতে থাকতে তার মনে পড়ে, বহু বছর আগে এমনই একটা শ্মশানে সে বসেছিল, আর চিতার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছিল তার হাঁপানিতে ভোগা মৃত পিতার দেহটিকিছুক্ষণের মধ্যেই সিপাহিরা লাশ নিয়ে হাজির হয়গ্রামের পথে তারা খুঁজে পায় ডোম সুখিয়াকেতার কাঁধেই দেবেশ বকশির লাশমদের নেশায় চুর হয়ে আছেলাশ নামিয়ে হাতজোড় করে দাঁড়ায়আমি সুখিয়া আছি লাঠ বাহাদোরসে বলতে থাকে গ্রামের সবাই পালিয়ে গেছে কিন্তু সে জানে আজ তার প্রিয় দেবু দাদা আসবে তার চিতা সাজানো ও দাহ করার জন্য কেউই থাকবে না

তাই নিজ হাতে এই কাজটি করার জন্য সে গ্রামেই থেকে যায়ভয় দূর করার জন্য দুবোতল মদ খেয়ে নদীর ধারেই বসে ছিলদাঁত মুখ খিঁচিয়ে ধমকে ওঠে দারোগা নৃপেন্দ্রনাথ, ‘চুপ হারামজাদা! দেবু দাদা তোমায় স্বর্গে নেবে’! কাঠ জোগাড় করতে চলে যায় শিউশরণ আর রামদাস, সাথে যায় ডোম সুখিয়া

দারোগা একা বসে থাকে নিস্তব্ধ শ্মশানেমুহূর্তে যেন অস্বাভাবিক নিস্তব্ধতা নেমে আসেএকজন মৃত মানুষকে একা পাহারা দিচ্ছে সেকুলকুল শব্দে বয়ে চলেছে আধকোষাকিন্তু জনশূন্য গ্রাম-প্রান্তর, একের পর এক বাড়ী, কুঁড়েঘর, মন্দির, দোকান যেন পৃথিবী থেকে মানুষ নামের সমস্ত প্রাণী ভোজবাজির মত মিলিয়ে গেছেঅন্ধকারে দেবেশ বকশির লাশের দিকে তাকায় নেপেন দারোগাভাবে, কি আছে এই মৃত মানুষটির মধ্যে? কোথায় সেই শক্তির উ?

অমন যে লাল টকটকে ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট বেল সাহেব, তিনিও বারবার বলে দিয়েছেন ঐ লাশ যেন কিছুতেই গ্রামবাসীর হাতে না পৌঁছায়লাশ নিয়ে কোন মিছিল যেন না আসে সদর পর্যন্তনিস্তব্ধ শ্মশানে অনেক নিশাচর প্রাণী আর তাদের অবাধ চলাফেরা নেপেন দারোগার মনে ভয় আরও বাড়িয়ে দেয়হঠা নিস্তব্ধ রাত্রির অন্ধকারকে ছাপিয়ে এক বিলাপধ্বনি যেন কাছাকাছি আসতে থাকেসেইসাথে ঝোপঝাঁড় পাতাপত্রের উপর দিয়ে হেঁটে কিংবা ছেঁচড়ে একটা কিছু আসার শব্দ পাওয়া যায়টর্চের আলো ফেলতেই দেখা যায় কঙ্কালসার লোলচর্ম এক বুড়িটর্চের আলোর তীব্রতা আড়াল করার জন্য সে নিজের শীর্ণ হাত দিয়ে চেষ্টা করতে থাকে, সেই সাথে তার বিলাপ ভেসে আসে, তুই কোনটে গেলুরে দেবু ! তুই কোনটে গেলু ! তাকে দেখে মনে হয় কোন অশরীরী কিছু

দারোগা-পুলিশ দেখে ভয় পাবার বয়স তার নেই, তাই সে তীব্র ভাষায় অভিশাপ দিতে থাকে -মনোত দয়া নাই তোমার? ব্যাটা নাই তোমার? মুখ দিয়া রক্ত উঠি মইরবে তোমার একেক বেটা, কয়া দিলামআমার দেবুক তোমরা মারি ফেলাইছেননির্বংশ হন তোমরা, কুষ্ঠ হয়া ভিক্ষা করেন, মুই চোখ মেলি দ্যাখো !নেপেন দারোগার ইচ্ছা হয় লাথি মেরে বুড়িকে ঠাণ্ডা করে দেয়কিন্তু তার সমস্ত শক্তি যেন এখন কোথায় হারিয়ে গেছেমনে পড়ে, তার পিতার মৃত্যুর পর মায়ের বিলাপ এভাবেই অন্ধকারে মাথা কুটে মরেছিল

নিজের মনের ভেতর যে একটা বিবেকবান চৈতন্যের অস্তিত্ব রয়েছে, তা যেন কিছুক্ষণের জন্য জেগে উঠেগলা নরম করে নেপেন দারোগা জিজ্ঞেস করে, দেবেশ বকশি কে হয় তোমার? বুড়ি কোন উত্তর করে নাটর্চটা নিভিয়ে ফেললে মনে হয়, যেন হাজার হাজার মানুষ চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে তাকেএক্ষুনি হাজারটা মশাল জ্বালিয়ে লাল নিশান হাতে এগিয়ে আসবে তারাএই লাশ নিয়ে যাবে সদরেএই ভাবনায় ভয়ে শিউরে ওঠে নেপেন দারোগাএই উদ্বেগ-উকণ্ঠার দোলাচলেই ছিল ব্রিটিশ শাসন আর তার আজ্ঞাবহ প্রশাসনযন্ত্রতা স্পষ্টভাবে রূপ পেয়েছে এই গল্পে

মৃত দেবেশ বকশির লাশ চিতায় ভস্মীভূত হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তা যেন পাঠকের চেতনায় ঘা মেরে যেতে থাকেকাঠ নিয়ে আসে শিউশরণ ও রামদাসনেশার ঘোরে থাকা সুখিয়া পরম যত্নে চিতার শেষ কাঠটি বিছিয়ে দিয়ে বলে ইনি মা আছেন বটে! দেবুদাদার মা লয় লাঠ বাহাদোর, ই গেরামে বুড়িকে মা বোলায় মানুষেনেপেন দারোগা আবার আতঙ্কে ঘামতে থাকেসুখিয়াকে তার এখন বিপদজনক বলে মনে হয়আকাশে চাঁদ উঠেছে কিন্তু তার রঙ এখন পচা রক্তের মত মনে হয়এর মধ্যে সুখিয়া নিজেই ঘুমন্ত শিশুর মত দেবেশ বকশির লাশ চিতায় সাজিয়ে দেয়

লাশের মুখ ঢাকা চাদরটি সরিয়ে বলে আয়, মুখ দেখবি মা, জনমের মত দেখেলেতারপর হো-হো করে কেঁদে ওঠে সুখিয়াবুড়ি পরম মমতায় দেবেশ বকশির মুখে হাত বুলিয়ে বলতে থাকে আবার ঘুরি আসিবু দেবুকিন্তু চিতায় আগুন দেবে কে? নেপেন দারোগা ধমক দিয়ে সুখিয়াকে বলে ম্যাচের কাঠি জ¦ালিয়ে আগুন দিতেবেঁকে বসে সুখিয়া, হাহাকার করে বলে, ‘আরে রাম রাম ! সি হবেক নাই, হামার নরক হবে বটে, হামি যে ডোম হইলমসুখিয়া নিচু জাতের মানুষ ডোম, সে চিতায় আগুন দিয়ে দেবু দাদার অসম্মান করতে পারে নাশিউশরণ ও রামদাস নিশ্চল দাঁড়িয়ে থাকে

অবশেষে চিতায় আগুন দেয়ার দায় এসে পড়ে নেপেন দারোগার উপরসাহস সঞ্চয় করে চিতায় আগুন দেয় দারোগা, নৃপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য! চিতার আগুন রক্তিম চাঁদের আলোর দিকে লকলক করে ওঠে, কাঠ পোড়ানোর চরচর শব্দে শত কণ্ঠের চিকার শোনা যায়গল্পের শেষ বাক্যটি যেন গণ-মানুষের সংগ্রামের অবিনাশী আহ্বানব্রিটিশের আজ্ঞাবহ হলেও স্বজাতির দায় যেন অনিবার্যভাবে মাথা পেতে নিতে হয় নেপেন দারোগাকেইতিহাসের দায় নিয়ে সৈয়দ হক এভাবেই রংপুরের কৃষক বিদ্রোহকে তার গল্পে হৃদয়স্পর্শী মমতা দিয়ে জীবন্ত করে গেছেন

×