ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নষ্টজন্মে-কুকুর নাগরী

শাহমুব জুয়েল

প্রকাশিত: ০০:০৩, ১৫ জুলাই ২০২২

নষ্টজন্মে-কুকুর নাগরী

.

মানুষের মুখের দুপাশে পেরেকের শক্ত ঠাঁসা। চোখে সানি পড়ছে। কানের ছিদ্রে গিট্টুওয়ালা বাঁশ, হাতের তালুতে চুপরেখা। মনের ইচ্ছে ডিলিট হয়ে গেছে। কী আজবরে বাপ! কেউ মুখে কথা ওঠায় না। আঙুল দিয়ে মোবাইলে ডাঙ্গুলি খেলতে খেলতে চোখে মেঘ জমাচ্ছে। তবুও এই খেলাতে পরম সুখ। বড়ো অসুখ যেÑ নারীকে খাবলানো ও ধর্ষিতা-তাতে কী? ক্যামনে ধর্ষিতা হয়েছে মাথা উজিয়ে দেখতে দেখতে রাস্তার পাশকেটে মুখে কাপড় দিয়ে পালাচ্ছে একদল পথিক। বুনোপথিকের সংখ্যা আনুপাতিকের বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। চওড়া সূর্য খাঁড়া হয়ে পড়ছে। মাথা গরম বোবা মাতিনের। দৌড়ে আসে সে। পাকা রাস্তার ধারে দেখে বুকখসা বয়সি মেয়ে। চোখে হাত রেখে বিড়বিড় করে ওঠে মাতিন। মাথার গামছাটা দিয়ে বুক ঢেকে দেয়। মেয়েটি মাতিনের দিকে ফিরে দেখেনি। মাতিন এদিক-ওদিক দৌড়াতে থাকে। কারো দেখা পায় না। একটু আগেই আধবয়সি বাইকারকে দ্রুত যেতে দেখেছে। দক্ষিণে গেছে সে। মেয়েটি উত্তরের রেল রাস্তায়, আধমরা ও উচ্ছিষ্ট। বিধ্বস্ত চুল, খানাখন্দে ভরা মুখ, হাত-পা গুটিয়ে বসা মেয়েটির হাতে বড়ো কালির বলপেনে লেখা রোমিসা। তারপর কমা দিয়ে লেখা- মিছিলের সম্মুখে থাকা ওই ছেলেটা আমাকে সর্বনাশ করছে।
বোবা মাতিন বাংলা অক্ষর দেখলে কড়া নজরে পড়ে। মুখে কথা নেই, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের সুভার মতো ছায়া তার মুখে। রোমিসার হাতের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস নেয়। একবার উত্তরে আরেকবার দক্ষিণে দৌড়ে । কারো দেখা পায় না। মাতিন হাতে ভর করে ওঠায় রোমিসাকে। পৃথিবীজুড়ে পাপের ভার। নীতি ডুবে গেছে, টুপ করে ডুবে যাচ্ছে সবকিছু। চোখে দেখে এখনো মাতিন, সে জানে অঙ্গ-হারানো কতটা কষ্টের। বারবার হাত ধরে ওঠানোর চেষ্টা করে কিন্তু রোমিসা নুয়ে পড়ছে। একটু দূরে রেলস্টেশন ছেড়ে আসা বাচ্চাগুলো আমগাছে ঘনঘন ঢিল ছুড়ছে। তাদের মধ্যখান থেকে চিটাদেহের পেরু মাতিনকে দেখে দৌড়ে আসে।
রোমিসা সোজা হতে পারে না। পেরু কাছে ঘেঁষে। পুটলিতে পাওরুটি, একটা কলম ও রুল করা খাতা। না বলা কথাগুলো খাতায় লিখে রাখে সে। খাতা ও কলমটা রোমিসার হাতে দিয়ে পেরু বলল, যে কথা পৃথিবীর কারোরে কইতে পারো না ; হেডা এহানে লেখবা, পৃষ্ঠা ওলটাতে ওলটাতে দেখায় তার জমা লেখা। এভাবে লিখে রাখে সে । পুটলির রুটি বের করে রোমিসার  মুখের সম্মুখে ধরে। একটু একটু করে রোমিসা খেতে খেতে পেটের ওপর হাত বুলায় আর হাসতে থাকে।
স্বামী পরিত্যক্তা রোমিসা। অন্ন অভাবে নয়, ডিম্বাণু ধারণের অভাবে। শূন্য শরীরের ওপর কারো মায়া নেই। ঝাঁড়পিটা দিয়ে ঘর থেকে বাহিরে নিক্ষেপ করেছে তার জেদি স্বামী । অন্যত্র ডিম্বাণু পেয়ে মহাসুখী স্বামী। দ্বিতীয় ঘরে ফুটফুটে সন্তান দিয়েছে ওই সৃষ্টিধর।
ইন্টার কমপ্লিট করার আগেই বিয়ে হয়েছিল রোমিসার। সংসারে বাবা নেই, বিয়ের পরপরই মারা গেল বাপজান। ভাইদের সংসারে সুখ নেই। পাতিলভাঙা সংসার। ওরা বউ- বেটি, বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। ভাইবোনের সম্পর্ক সরু হয়ে উঠেছে। দায়ভার খোদার কাঁধে চেপে ওরা মুক্তি নিয়েছে। শেষভরসা হচ্ছে খাঁটুনি আর ওই খোদা। স্বামীছাড়া হয়ে দুমুঠো ডালে-ভাতে থাকার ভাগ্য আলগা হয়ে গেল। নির্দয় সময়ে ঠায় হলো না। যে নির্যাতনে স্বামীর সংসার ছেড়েছে এখানেও শারীরিক অবহেলা লেগেই আছে।
অভাগীর সব দুয়ারই বন্ধ। ঈশ্বরও কী চাবিহীন।
দুপুরবেলা। খইফোটা রোদে খুব খিদে পেয়েছে রোমিসার। প্লেট হাতে ভাতের পাতিলে হাত বসাতেই পেছন থেকে খাঁড়া লাথি দেয় সংসারের বড়ো ভাইয়ের বউ। হুমড়ে পড়ে রোমিসা। চুলের মুঠি ধরে চ্যাঁচড়াতে  চ্যাঁচড়াতে বাড়ির সদর দরজা পার করে। রোমিসার দু’চোখ বিষাক্ত নদীর ঢেউয়ের মতো উপচাতে থাকে। মাটিমাখা কাপড়-চোপড় নিয়ে বের হয়ে গেল। বড়ো রাস্তায় পা রাখতেই সম্মুখে পড়ে বন্ধু জারিফ। এনজিও কর্মী সে। ঋণের টাকা তুলে নিতে বাড়ি বাড়ি ঘুরছে। দেখা পায় পুরনো বন্ধু রোমিসার। সাইকেল থামিয়ে রোমিসার দিকে এগিয়ে গেল। রোমিসার শুষ্ক মুখ দেখেও চিনতে কষ্ট হয়নি। কারণ, বছর ছয়েক হাইস্কুলে একইসঙ্গে পড়েছে দুজন। একই পথে দুজনের যাতায়াত ছিল। চিরচেনা গাঁয়ে চেনাজানা দুজন।
কীরে রোমিসা?
সে থামে। কোন্হানে যাইয়ুন?
চোখ ওঠায় রোমিসা। শিশিরবিন্দুর মতো জল টলমল করছে। কীরে এই হাল ক্যান? রোমিসা দু’চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি। পোড়া মনের কষ্টগুলো বন্ধু জারিফের কাছে বলল, জারিফও জল ধরে রাখতে পারেনি। রোমিসার কাজ চাই, ঝিঁ-ঝেঁটি, যে কোনো কাজ করবে সে। জারিফ যদি দয়া পরবশ হয়ে একটা কাজ  জুগিয়ে দেয় তাহলে আপাতত সে বেঁচে যায়। বাঁচিয়ে রাখা ঈশ্বরের কাজ। শুনবে কী মহান ঈশ্বর।
জারিফের আশ্বাসে এনজিও অফিসে গেল। মহামারীর পর অফিসের লোকসমাগম এক্কেবারে কম। কিস্তি পরিশোধের চাপে চাকরি ছাড়ে বহুলোক। এখনো নতুন লোক পায়নি। লোকের অভাবে রোমিসাকে নিতে সমস্যা হয় না। এনজিওতে কাজ নিয়েছে সে। কাজে খুব মনোযোগী হওয়ায় অফিসে তার বেশ কদর হয়ে ওঠে। দেহে শক্তি থাকলে পাশফেরা মানুষ সামান্য নুনও এগিয়ে দেয়। নোনতা সময় পেরিয়ে এলো সে।
একদিন অফিসে অডিটের লোক আসে। রোমিসা কিস্তি নিয়ে অফিসে পা রাখে। দুই হাতে কিস্তির ফাইল ইনচার্জের টেবিলের ওপর সাজিয়ে রাখছে। আচমকা অডিট অফিসার জানেবুল মাথা ওঠায়- রোমিসার দিকে তাকিয়ে ইনচার্জকে বলল, কে? নতুন কর্মী। কাছে ডাকে। অনেক প্রশ্ন করে কিন্তু প্রশ্নগুলোর ঝরঝরে উত্তর দেয় রোমিসা এবং দুষ্টুহাসি দিয়ে বলল, স্যার আর কিছু? ঘনঘন দৃষ্টি পড়ে জানেবুলের। এবার বিব্রত হয় রোমিসা। তেমন কী আছে। চাকরি নেয়ার পর শরীরের চর্বি একটু-আধটু বেড়েছে। মুখের গর্ত ভরাট হয়ে গেছে। তাতেই বাড়তি লাবণ্য পেয়েছে। দুষ্টুহাসিতে তিলকের গর্তটা তারার মতো হয়ে উঠেছে। এতটুুকুই।
লাল টকটকে চোখে তাকায় জানেবুল, মুখ নাড়া দেখে মনে হচ্ছে তার জলতেষ্টা পেয়েছে। জানেবুলের কথার চেয়ে রোমিসার হাসি সুন্দর। যে কেউ সহজে পটে যায় এবং দরদি হয়ে ওঠে। জানেবুলও কেমন রপ্ত হয়ে গেল। মনে আবেশী ঢেউ।
কথার শেষে বলল, শহরের ব্রাঞ্চে একটা পোস্ট খালি- যাবে? রিসিপশনে থাকবে। বাহিরে ঘুরঘুর করতে হবে না; অফিস টাইম ডিউটি।
রোমিসা মাথা ঝাঁকায়। গ্রাম থেকে ছুটতে পারলে সে বেঁচে যায়। গাঁয়ে কত কথা কয় মানুষ। মুখফোড় মানুষের সংখ্যা বেশি। মেয়ে মানুষের চাকরি নিয়ে টিটকারি করে। বেফাঁস মন্তব্য ছাড়ে। ওদের কথায় তেমন কান না দিলেও ইচ্ছে মরে যায়। সুযোগ থাকতে হাতছাড়া করবে কেন!
রোমিসা সম্মতি দেয়। জারিফের মুখে গাঢ় মেঘ জমা হয়ে গেল।
মাসের প্রথমে যোগ দেয় শহরের ব্রাঞ্চে। অফিসের রূপ চেঞ্জ হয়ে যায়। রোমিসার কথাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখে জানেবুল। অনেক কিছুই বদলে যায়। কোথায় কোন্ টেবিলটা সাজানো দরকার তা হাসিভরা মুখে দেনাদেন সাজায়। অফিস জমে ওঠে। যে একবার আসে সে দ্বিতীয়বার এসে জিজ্ঞেস করে- অমুক স্যারের টেবিলটা কোন্দিকে। মিষ্টি হাসি দিয়ে পথটা বাতলে দেয়। হাসির বর্ণচ্ছটায় গুণিতক মৃত ইচ্ছে বাস করছে। সে খবর রোমিসার মনে মনেই আছে।
রোমিসার নতুন অফিসে মায়নেটা একটু মোটা। খেয়ে দেয়ে একপায়ী জীবন হরদম চলছে । শরীরের স্থূলমাংস চোখে লাগছে। শহরের ছোট রুমে থাকে সে। ব্যাচেলার ভাড়া কম হলেও বাড়ির মালিক কী মনে করে রোমিসাকে ফেরায় না। পৃথিবীতে মায়া তৈরি করার কৌশল সবার থাকে না ; রোমিসার চোখেমুখে মায়ার নমুনা স্পষ্ট। বাসা ঠিক করে দিয়েছে জানেবুল। খোঁজ-খবরে মাঝেমধ্যে বাসায় ভিড়ে সে। ভালো সময়ই কাটছে তার। অতীতের সব হাওয়ায় ওড়ানোর তীব্র চেষ্টা করছে সে।
সাজগোজ খুব পছন্দ রোমিসার। রিসিপশনের ডিউটিতে একটু আলাদা সাজ থাকা লাগে, নইলে মানায় না। শাড়ি পরা অভ্যাস ছিল না। নতুন কর্মস্থলে আসার পর শাড়িই তার ডিউটি পোশাক হয়ে গেল। শাড়ি ছাড়া  চিরায়ত অস্তিত্ব থাকে না। নারীর শাড়িতে বাঙালিয়ানা টিকে থাকে। আজ বৃহস্পতিবার হাফবেলা ডিউটি। সকাল সকাল আড়মোড় দিয়ে ঘুম থেকে ওঠে। ঘুম ঘুম চোখে কমনীয় রূপ, মুখের ওপর হাই তুলতে তুলতে ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকায়। হাতে সময় নেই। দ্রুত ওঠে স্নান সেরে ডেসিং টেবিলের সম্মুখে দাঁড়ায়। মুখ ভারি লাগছে তার। ঘুম ভারি হলে মুখের ভাঁজ চ্যাপটাও তরতাজা দেখায়। সাজগোজ করতে করতে বের হলো সে। পরনে গাড়ো  বেগুনি রঙের শাড়ি। অফিসে পা রাখতেই জানেবুল ঠাহরে-ঠোহরে নানান কথা কয়। সে তেমন মনে নেয় না। হাসিমাখা মুখে সব উড়িয়ে দেয়। হাসির আড়ালে রোদমাখা মেঘ আছে, শ্রাবণের মেঘ। জানেবুলের মন ভিজতে থাকে।
বড়োসড়ো অফিসার জানেবুল, কত মানুষের সঙ্গবাস। রোমিসাকে খুব পছন্দ, রোমিসাও বুঝতে পারে কিন্তু দ্বিতীয় রঙমহড়ার কথা মাথায় এলে তার মন আলাগা হয়ে যায়। পুরনোতে তার বড় ভয় ছিল। সে মনে করে পেছনফেরা দিন কোনদিনই ফিরে আসবে না ; বাজারে তরতাজা সবজিটা সবার নজর কাড়ে, ঘাটতি তেলে কেউ হাত লাগায় না। জানেবুলের চোখে কুয়াশা কিংবা অবুঝ সে। বিগত অতীত তার কচিডগার মতো মনটাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে। ক্যামনে ঠকাবে রোমিসা। অসম্ভব!
সবমানুষই জীবনের খাঁটি ও সেরা মুহূর্তটা চায় এবং অনুভব করে। মাঝেমধ্যে কথা হতো তাদের কিন্তু সম্পর্কের কথা উঠলে একটু থেমে যেত রোমিসা। জানেবুল শ্রাবণ বর্ষার মতো রিনঝিনিয়ে কথা বলেই যেত। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যকার সম্পর্কটা জল-ঢেউয়ের মতো দৃশ্যমান হতে লাগল। রোমিসার মনে প্রচন্ড রকম ধাক্কা লাগতো কিন্তু জানেবুলের ভালোলাগার দোল খাওয়া মহুয়ামন তাকে কিছুতেই আলগা হতে দেয়নি।
জানেবুল এলো। চোখ পড়ে রোমিসার। আপনভোলা হয়ে গেল সে। জানেবুল কানের কাছে এসে বলল, বের হও! আগেও তারা ছুটির দিনে বিভিন্ন সময়ে বাইরের ধুলো হাওয়ায় গিয়েছিল। জানেবুলের কথায় রাজি হয়ে কাঁধের ব্যাগটা গুছিয়ে বের হয়ে গেল। পা ফেলতে ফেলতে দূরে চলে যায়। স্টেশন থেকে বহুদূর। সন্ধ্যার সূর্য অন্ধকারের ঘুম ভাঙাতে শুরু করল। আকাশও ভারি হয়ে গেল। মেঘের গাড় অন্ধকার! কুন্ডুলি মেঘ। এলোমেলো বাতাসে আকাশী গাছের বীজ ক্লিপের মতো রোমিসার চুলে বিঁধেছে। জানেবুল খোঁপা থেকে বীজ সরাতেই হেসে ওঠে রোমিসা, দুষ্টুহাসি।
সন্ধ্যা ও মেঘের গাঢ় অন্ধকারে জনবিচ্ছিন্ন রেললাইনের পাশে আতকা জোরে টানছে কেউ। গায়ে-মাথায় স্পর্শকাতর স্থানে আঘাত করছে- চিৎকার করছে রোমিসা। সাপের লেজের মতো আঁকড়ে ধরাতে ঠেকানোর প্রাণপণ চেষ্টাও কাজে লাগেনি; অর্ধমৃত রোমিসা। বিজলির পলকে জানেবুলকে খোঁজে সে কিন্তু তাঁর অস্তিত্ব নেই। খিলখিল করে হাসছে তিনতিনটে ছেলে। ওদের চেনে না ; কখন, কোথায়, কীভাবে তারা রোমিসাকে খেয়াল করল কিচ্ছু মনে নেই। মনে হচ্ছিল, আস্ত জন্তু, তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে তুলতে চলে যাচ্ছে। প্রবলঘৃণায় নীরব অশ্রুস্রোতে মাথা নুইয়ে বসে রইলো রোমিসা।
রাতভর কাঁদতে কাঁদতে রোমিসার জল শুকিয়ে গেছে। বাকরুদ্ধ, অবস শরীর। পা ভর করে দাঁড়াবার কোমরে বিন্দু পরিমাণ শক্তি নেই। মাছশিকারিরা তার আঁচলের ওপর দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে গেছে কিন্তু  কেউ হয়তো পাগলি ভেবে হাত ধরেনি। মুখে স্বর ছিল না রোমিসার। ভোর হতেই ফুর্তি রোদ নুইয়ে থাকা রোমিসার মুখে ঝাঁকিয়ে পড়ছে। আলুথালু চুলে বীভৎসমুখ, উঠিয়ে দেখে পিঁপড়েটোপের মতো অচেনা মানুষের ভিড়। রাতে হয়ত ঘুমে ছিল পিঁপড়েগুলো । মানুষ গহীন জঙ্গলে ছিল। মহাসঙ্কটে কেউ এগিয়ে এলো না ; কত মুখ। খোঁয়া সময়ে হায় ...হায় করা মানুষের অভাব হয় না ; এটিই মাটি-জোছনায় চলনসই মানুষের নমুনা। নিন্দাচিৎকারে টলে ওঠে রোমিসা।
কথাগুলো লিখতে লিখতে একটা মিছিল আসে। ধর্ষিতা নারীর বিচার চেয়ে স্লোগান দিচ্ছে মহল্লার ছেলেগুলো। খাতা কলম রেখে খাঁড়া হয়ে মিছিলের দিকে উঁকিঝুঁকি দেয় রোমিসা। পেছন থেকে ভিড় ঠেলে ঠেলে সম্মুখে যেতে যেতে দেখে মাতিন ও পেরু। রাতে খামছানো তিনটা কুকুর দৌড়াচ্ছে। গলাছেঁড়ে রোমিসা হাসতে হাসতে বলছে, মানুষ কুকুর হয়ে গেছে... মানুষ কুকুর হয়ে গেছে...

×