তসলিমা
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার জোয়ারা নগরপাড়ার এতিম তসলিমা আকতার বাম হাতে লিখে এসএসসি পাস করে বর্তমানে চন্দনাইশ সদরে আমানতছফা বদরুন্নেছা মহিলা ডিগ্রী কলেজে এইচএসসিতে পড়ছে। সে পড়ালেখা করে শিক্ষক হতে চায়।
জোয়ারা নগরপাড়ার মৃত নজু মিয়ার ৮ ছেলে-মেয়ের মধ্যে তসলিমা চতুর্থ সন্তান। ২০০৬ সালে মা মারা যাওয়ার পর তার বাবা নজু মিয়া মাত্র দেড়’শতক জমির ওপর একটি ছোট ঘরে ৮ সন্তান নিয়ে অতিকষ্টে সংসার জীবন অতিবাহিত করছিলেন। ৪ মাস আগে নজু মিয়া পরপারে চলে গেলে এতিম তসলিমা এক ভাইয়ের সংসারে কোনভাবে জীবন কাটাচ্ছে। তাদের নিজস্ব কোন সম্পত্তি নেই।
তসলিমা জন্মের পর থেকে ডান হাত, ডান পা অচল। বাম হাত ও পা স্বাভাবিক নয়। তারপরও সে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য মনোশক্তির কারণে ২০১৭ সালে জেএসসি, ২০২০ সালে বাম হাতে লিখে দ্বিতীয়বারে এসএসসি পাস করে। বর্তমানে সে চন্দনাইশ সদরে আমানতছফা বদরুন্নেছা মহিলা ডিগ্রী কলেজে এইচএসসিতে অধ্যয়নরত। তার বাম হাত স্বাভাবিক না হওয়ার কারণে পরীক্ষার নির্দিষ্ট সময়ে সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরেও বি-গ্রেডে পাস করে। ১৯৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করে জীবনের শুরুতে টাইফটে আক্রান্ত হয়ে তসলিমার ডান হাত ও ডান পা অচল হয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে। অর্থ সঙ্কটের কারণে পরিবারের পক্ষ থেকে সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিতে না পারায় জীবনে প্রতিবন্ধীর তালিকায় নাম ওঠে তসলিমার।
সে প্রতিবন্ধী জীবনকে জয় করতে অঢেল সাহস নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে পড়ালেখা। তসলিমার তিন বোনের বিয়ে হলেও এক ভাই শহরে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ছোট ভাই বেকার, অপর ভাই উপজেলা চেয়ারম্যানের অফিসে মালি হিসেবে চাকরি করে। অভাবের সংসারে তসলিমা শিক্ষকদের আন্তরিকতা ও সহযোগিতার কারণে জেএসসি ও এসএসসি পাস করে বর্তমানে কলেজে পড়ছে। তসলিমা তার অচল শরীর নিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চাই।
এ ব্যাপারে সে এলাকার বৃত্তবানদের আর্থিক সহযোগিতা কামনা করেছে। সে বলে জেএসসি ও এসএসসি পড়াকালীন সময়ে ফতেনগর এসএন বালিকা বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক নোটন স্যার তাকে বিভিন্ন রকম সহযোগিতা করেছেন। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর শামীমা ম্যাডাম তার বেশকিছু বই দিয়েছেন, আরও অনেক বই তার কিনতে হবে।
তাছাড়া, কলেজের ভর্তি ও বেতনের টাকা তার পরিবার থেকে চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সে একজন প্রতিবন্ধী হিসেবে সামান্য প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়ে পড়ালেখা চালানো কঠিন হয়ে পড়ায়, তিনি আর্থিক সাহায্য কামনা করেছেন। সে পড়ালেখা শেষ করে একজন আর্দশবান শিক্ষক হতে চায়