.
‘বন্ধুত্ব’- শব্দটা শুনলেই মনের মধ্যে একটা সুখকর অনুভূতি জাগে। পরিবারের পর সবচেয়ে কাছের যে মানুষগুলো, তারা হচ্ছে ‘বন্ধু’। একজন ভাল বন্ধু সারাজীবন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে। সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনায় আঁকড়ে রাখে। বন্ধুত্ব মানে অকারণে খিলখিল করে হাসা, হঠাৎ পাগলামিতে মত্ত হয়ে যাওয়া। এই অভিমান তো এক্ষুণি আবারÑ তোকে ছাড়া আমার চলবে না বলে গলা জড়িয়ে ধরা।
বন্ধু দিবস ঘোষণার উৎপত্তি বা কারণ ঠিক কি, তা সঠিকভাবে বলা মুশকিল। তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা, বিশৃঙ্খলা ও হিংস্রতা মানুষের মধ্যে অনেকটাই বন্ধুর অভাব তৈরি করেছিল বলে অনেকের অভিমত। ফলে রাষ্ট্রীয়ভাবে বন্ধু দিবস পালন করার ধারণা এসেছিল বলে অনেকে মনে করেন। আরেক সূত্র বলছে, ১৯১৯ সালের আগস্টের প্রথম রবিবার বন্ধুরা নিজেদের মধ্যে কার্ড, ফুল, উপহার বিনিময় করত। ১৯৫৮ সালের ২০ জুলাই ‘ওয়ার্ল্ড ফ্রেন্ডশিপ ক্রুসেড’ এর প্রতিষ্ঠাতা ড. র্যামন আর্টেমিও ব্রাচো প্যারাগুয়েতে বন্ধুদের সঙ্গে নৈশভোজে এক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সে রাতেই এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা পায় এবং ৩০ জুলাই বিশ্বব্যাপী বন্ধু দিবস পালনের জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাব পাঠায়।
প্রায় ৫০ বছর পর ২০১১ সালে ২৭ জুলাই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৩০ জুলাইকে ‘বিশ্ব বন্ধু দিবস’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। তবে বন্ধু দিবস বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন তারিখে পালন করা হয়। বাংলাদেশ-ভারতসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে আগস্টের প্রথম রবিবারই বন্ধু দিবস পালিত হয়ে আসছে। ৩০ জুলাই হোক আর আগস্টের প্রথম রবিবার-ই হোক, ঘুরে ঘুরে চলে এসেছে আবার বন্ধু দিবস। তাই এই দিনে বন্ধুকে গিফট করতে পারেন। এখন বিভিন্ন বুটিক শপগুলো বিশেষ আয়োজন করে, থাকে বিশেষ ছাড়। সাধ আর সাধ্যের মধ্যে দিতে পারেন বন্ধুকে কিছু একটা গিফট। কাছাকাছি কোথাও গিয়ে কিছুটা সময়ও কাটিয়ে আসতে পারেন। বর্তমান ব্যস্ততার জন্য সেই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আর সময় কাটানো হয় না। তাই বিশেষ এই দিনটিকে কেন্দ্র করে নিজেদের জন্য একটু সময় বের করে নিন।
বন্ধুÑ বিশাল শক্তিশালী একটা শব্দ। বন্ধু মানে পরম নির্ভরতার একটা সম্পর্ক। বাবা-মা, ভাই-বোন আমাদের অনেক আপন। কিন্তু সব সময় সব কথা তাদের সঙ্গে শেয়ার করা যায় না। যা বন্ধুকে অকপটে বলা যায়। ছোটদের সঙ্গে বন্ধুত্ব আপনাকে নির্মলতা দেবে। বয়সে বড় কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন, আপনার তাদেরকে পরম নির্ভরতার একটা জায়গা মনে হবে।
যদিও আমরা বন্ধু বলতে সহপাঠী বা খেলার সাথীদেরই বুঝি। স্কুল আর বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা দীর্ঘ সময় একসঙ্গে থাকার কারণে তাদের সঙ্গেই সবচেয়ে মজবুত বন্ধুত্ব হয়। গত বছর সেপ্টেম্বরে দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর পর ফেইসবুকের মাধ্যমে একদিনে প্রায় ১০/১৫ জন স্কুলের বন্ধু খুঁজে পেলাম। সেদিন মনে হয়েছিল পৃথিবীর সব পাওয়া আমার হয়ে গেছে। আর কিছু পাওয়ার নেই। আমাদের সময় মোবইল ছিল না। তাই ২/৩ জন ছাড়া কারও সঙ্গেই যোগাযোগ রাখা যায়নি। ক’দিন আগেই ফেইসবুক গ্রুপে প্রকাশিত ৪৭ বছর আগে তোলা এক ছবির মাধ্যমে দিলখোশ বেগম খুঁজে পেলেন ৭ বান্ধবীর ৪ জনকে। বাকিদের খোঁজও পেয়েছেন। যারা হারানোকে খুঁজে পায় তারাই জানে এই পূর্ণতার অনুভূতি। যে কোন খারাপ পরিস্থিতিতে সবার আগে পাশে পাবেন বন্ধুদের। তারা আপনাকে আপনার মতো করে সামলাতে পারবে। আপনি যখন চরম হতাশায় অন্ধকারে তলিয়ে যেতে থাকবেন, তারা আপনাকে ডুবুরি হয়ে ভাসিয়ে রাখবে। আপনি যখন সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবেন, তারা আপনার টুকরোগুলোকে মজবুতভাবে জোড়া লাগিয়ে দাঁড় করাবে। আপনি যখন ঝড়ো হাওয়ায় বিধ্বস্ত, তারা তখন ঢাল হয়ে আপনাকে আগলে নেবে। কোন অবস্থাতেই তারা আপনাকে নিঃশেষ হতে দেবে না। আপনি যতই বলবেনÑ আমি আলো চাই না, আমি অন্ধকারে তলিয়ে যেতে চাই। সত্যিকারের বন্ধুরা আপনাকে কখনোই তলিয়ে যেতে দেবে না। টেনে-হিঁচড়ে তুলে ধরে বলবেÑ তোকে দাঁড়াতেই হবে, তোকে আলোতে আসতেই হবে।
শক্ত করে ধরে তারা আপনাকে আলোকিত জীবনে দাঁড় করিয়ে দিবে। সমস্ত হতাশা সরিয়ে জীবন অর্থবহ করে তুলবে। আমার কাছে বন্ধুত্ব মানে একটা আলোকিত জীবন। বন্ধুত্ব মানে গভীর সমুদ্রে তলিয়ে যেতে যেতে ভেলায় ভাসিয়ে তীরে নিয়ে আসা একটা মজবুত সম্পর্ক। বন্ধু ছাড়া জীবন সত্যিই অচল। কেউ যখন আপনার পাশে থাকবে না, একজন প্রকৃত বন্ধু দেখবেন ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। পৃথিবীর সব বন্ধুত্ব বেঁচে থাকুক এমন অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে। আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকুক বন্ধুত্ব।