ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

মানুষ মিথ্যা বলে কেন?—মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে চমকপ্রদ ব্যাখ্যা

প্রকাশিত: ১৭:৫৩, ২০ জুলাই ২০২৫

মানুষ মিথ্যা বলে কেন?—মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে চমকপ্রদ ব্যাখ্যা

ছবি: সংগৃহীত

মানুষ মিথ্যা বলে—এই সত্যটি সবাই জানে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন বলে? শুধুই কি নিজেকে বাঁচাতে? না কি এর পেছনে আরও গভীর কোনো মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়া কাজ করে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই বিশ্বজুড়ে মনোবিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন গবেষণা চালিয়ে আসছেন।

মিথ্যার মূল কারণ কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, মিথ্যা বলা মানুষের স্বভাবগত আত্মরক্ষার একটি প্রক্রিয়া, যা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। মানুষ যখন মনে করে সত্য বলা তাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে, তখন মস্তিষ্ক একটি বিকল্প পথ খোঁজে—সেটিই হচ্ছে মিথ্যা।

মনোবিজ্ঞানীরা মিথ্যা বলার পেছনে কয়েকটি সাধারণ কারণ চিহ্নিত করেছেন—
১. আত্মরক্ষা: নিজেকে শাস্তি, লজ্জা বা সামাজিক অপমান থেকে বাঁচাতে মিথ্যা বলে মানুষ।
২. নিজেকে ভালোভাবে উপস্থাপন: নিজের ইমেজ বা ব্যক্তিত্ব আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য অনেকে সত্যের কিছু অংশ চেপে গিয়ে বা রঙ চড়িয়ে কথা বলেন।
৩. ব্যক্তিগত লাভ: অর্থ, সুযোগ বা সুবিধা পেতে কেউ কেউ পরিকল্পিতভাবে মিথ্যার আশ্রয় নেন।
৪. অপরকে কষ্ট না দেওয়া: মিথ্যার একটি রূপ হলো "সাদা মিথ্যা"—যেটা বলা হয় কেবল অন্যকে দুঃখ না দেওয়ার জন্য।

যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, “প্রতিদিন একজন মানুষ গড়ে ১ থেকে ২ বার মিথ্যা বলেন, আর অনেক ক্ষেত্রে তা এতটাই স্বাভাবিক যে নিজেরাও বুঝতে পারেন না।”

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, অতিরিক্ত মিথ্যা বলা মানুষের মধ্যে স্ট্রেস, অপরাধবোধ, আত্মবিশ্বাসহীনতা ও সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি করে। এমনকি এটি Pathological Lying এ পরিণত হতে পারে—যা একধরনের মানসিক অসুস্থতা।

কীভাবে কমাবেন মিথ্যা বলার প্রবণতা?
নিজের ভেতরের ভয় ও অনিরাপত্তাকে চিহ্নিত করুন
সত্য বলার অভ্যাস গড়ে তুলুন—even if it's uncomfortable
‘না’ বলার সাহস রাখুন
প্রয়োজনে থেরাপিস্টের সাহায্য নিন

মিথ্যা বলা হয়তো জীবনের অংশ, কিন্তু সেটি অভ্যাসে পরিণত হলে তা আত্মবিনাশের পথও তৈরি করতে পারে। তাই মনোবিজ্ঞান বলছে—সত্য শুধু নৈতিক বিষয় নয়, মানসিক সুস্থতারও পূর্বশর্ত।

ফারুক

×