ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

গরমকালেও যারা গরম কফি খান, তাদের ব্যক্তিত্বে দেখা যায় এই ৮টি বৈশিষ্ট্য

প্রকাশিত: ১৭:১১, ২০ জুলাই ২০২৫

গরমকালেও যারা গরম কফি খান, তাদের ব্যক্তিত্বে দেখা যায় এই ৮টি বৈশিষ্ট্য

ছবিঃ সংগৃহীত

গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়। বাইরে রোদের তেজে হাঁসফাঁস, ক্যাফের এসি কাজ করলেও যেন যথেষ্ট নয়। চারপাশের সবাই ঠান্ডা আইস কফি ধরে আছে, যেন সেটাই বাঁচার শেষ আশ্রয়। কিন্তু কোণের টেবিলে বসে একজন নিশ্চিন্তে ধোঁয়া ওঠা গরম কফিতে চুমুক দিচ্ছেন।

এই দৃশ্য আমাদের পরিচিত। গ্রীষ্মে ঠান্ডা কফির জয়জয়কার, কিন্তু কিছু মানুষ আছেন—যারা বছরের ১২ মাসই গরম কফিতেই বিশ্বাস রাখেন।

প্রথমে মনে হতে পারে, তারা হয়তো জেদ করে করছেন, অথবা তাদের শরীর বুঝতে পারে না এখন গরম। কিন্তু বছরের পর বছর খেয়াল করে দেখা গেছে, এমন মানুষদের মধ্যে কিছু অভিন্ন মানসিক ও ব্যক্তিত্বগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাদের এই অভ্যাস শুধু কফির ব্যাপার না—এটি তাদের জীবনদর্শনেরই প্রতিফলন।

চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই ৮টি বৈশিষ্ট্য—

১. তারা জীবনকে সহজ ও ধারাবাহিক রাখেন
ঋতু বদলায়, ট্রেন্ড পাল্টায়, কিন্তু তাদের পছন্দ একই থাকে। সকালে যে মগে কফি খান, সেটা বছরের ৩৬৫ দিনই একই। তারা নতুন কিছুর পেছনে না ছুটে, যা ভালো কাজ করে সেটাই বারবার বেছে নেন। এই ধারাবাহিকতা শুধু কফিতে নয়—জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্তে দেখা যায়।

২. বাইরের তাপমাত্রার চেয়ে নিজেদের আরামকে গুরুত্ব দেন
তারা জানেন, শরীর কখন কী চাইছে। গরমে গরম কফি খেলে ঘাম হয় ঠিকই, কিন্তু সেই ঘামই শরীরকে ঠান্ডা করতে সাহায্য করে। এরা এমন মানুষ, যারা এয়ার কন্ডিশনড রুমে জ্যাকেট পরে থাকেন অনায়াসে, কিংবা অন্যদের মত সময়ের চাপে নয়—ঘুমান যখন ঘুম পায়।

৩. ধৈর্য ও অপেক্ষার অভ্যাস তাদের স্বভাবজাত
গরম কফি তাড়াহুড়ো করে খাওয়া যায় না। ধীরে ধীরে চুমুক দিতে হয়। এই অভ্যাস তাদের জীবনের আরও অনেক কাজে প্রতিফলিত হয়—তারা জমিয়ে টাকা খরচ করেন, ধীরে ধীরে কোনো প্রকল্পে নিখুঁততা আনেন, আর খাবারের বেলায়ও তাজা রান্নাকে প্রাধান্য দেন।

৪. তারা জীবনের ছোট ছোট রুটিনে শান্তি খুঁজে পান
গরম কফি খাওয়ার সেই নিয়মিত অভ্যাসটাই তাদের জন্য একধরনের ধ্যান। শুধু কফির মগ নয়—তাদের জীবনে থাকে নিয়ম করে হাঁটা, হাতে লেখা ডায়েরি, শোবার আগে বই পড়া বা সকালে নিজেকে সময় দেওয়ার মতো আত্মস্থ রুটিন।

৫. তারা সচেতন না হয়েও ট্রেন্ডের বিরুদ্ধে হাঁটেন
গরমে গরম কফি খাওয়া এখন 'আনকুল' ভাবা হলেও, তারা সেভাবে ভাবে না। তারা নিজের মতো চলেন—ডিজিটাল নয়, এখনো কাগজের ডায়েরিতে প্ল্যান করেন। ম্যাসেজ নয়, কল করেন। নতুন রেস্টুরেন্ট নয়, পুরনো প্রিয় দোকানেই বারবার যান। তারা নতুনকে অস্বীকার করেন না, তবে নিজের পছন্দের সঙ্গে আপসও করেন না।

৬. চাপ বা বিশৃঙ্খলার সময়ে তারা নিয়মকেই আঁকড়ে ধরেন
যখন চারপাশে অস্থিরতা, তখন তারা নিজের চেনা অভ্যাসকে কাজে লাগান শান্ত থাকার জন্য। অনেকেই দুর্যোগে কিছুই করতে পারেন না, কিন্তু এরা তখন চা বানান, ঘর গোছান, বা ব্যায়াম চালিয়ে যান—চেনা নিয়মই তাদের মানসিক ভারসাম্য ধরে রাখে।

৭. বাহ্যিক চাকচিক্যের চেয়ে কাজের দিকটা বেশি গুরুত্ব পায়
আইসড কফি দেখতে সুন্দর, ছবি তোলার জন্য পারফেক্ট। কিন্তু গরম কফি? সেটা যতটা না দেখানোর জন্য, তার চেয়ে বেশি নিজের জন্য। এই ধরনের মানুষরা সাধারণত বাহ্যিক চটক নয়, ব্যবহারিক দিককেই গুরুত্ব দেন—আরামদায়ক জুতো, নির্ভরযোগ্য গাড়ি, চেনা খাবারের দোকান—এইসবই তাদের পছন্দ।

৮. তাদের আত্মবিশ্বাস নীরব কিন্তু গভীর
এরা জানেন কী তাদের ভালো লাগে এবং অন্যদের দেখানোর বা বোঝানোর প্রয়োজন বোধ করেন না। গ্রীষ্মে স্যুপ খান, শীতে ঠান্ডা সালাদ, পার্টি থেকে নিজের ইচ্ছামতো বেরিয়ে আসেন, পোশাক পরেন নিজের আরামে।

তাদের আত্মবিশ্বাস চিৎকার করে জানান দেয় না, বরং প্রকাশ পায় নিজের পছন্দে অটল থাকার মধ্যে।

সব মানুষের পছন্দের পেছনে যুক্তি বা অনুভূতি থাকে। কেউ কফি গরম খায়, কেউ ঠান্ডা। কিন্তু এমন সময়ে, যখন প্রত্যেকটা জিনিস—পোশাক, খাবার, গান এমনকি ব্যক্তিত্বও—ঋতুর সঙ্গে বদলে নিতে বলা হয়, তখন কারো নিজের পছন্দে স্থির থাকা একধরনের চুপচাপ বিদ্রোহ।

গরমে গরম কফি খাওয়া শুধু স্বাদ নয়, এটা আত্মবিশ্বাসেরও পরিচয়। এমন মানুষদের দেখে আমরা শিখতে পারি—সবচেয়ে বড় আরাম আসলে বাইরের পরিবেশ নয়, নিজের ভেতর থেকেই আসে।
 

 

মারিয়া

×