
ছবিঃ সংগৃহীত
ঘুমানোর আগে স্কিন কেয়ার, মাস্ক, ফেস টেপ আর নানা রকমের সাজগোজ। সকালবেলা উঠেই পারফেক্ট লুক! কিন্তু সত্যি কথা বলি, কেবল চেহারা সুন্দর হলেই কি মন বা শরীর ভালো থাকে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপনার সকাল কেমন যাবে, তা নির্ভর করছে আগের রাতের উপর। আর ঘুমই তার মূল চাবিকাঠি।
ঘুম বিশেষজ্ঞ ড. নিল স্ট্যানলি বলেন, “এক রাতের খারাপ ঘুমই আপনার শরীরে এমন প্রভাব ফেলতে পারে যে আপনি পরের দিন না জেনে শুনে আট চামচ বেশি চিনি খেয়ে ফেলবেন! ঘুম শুধু বিশ্রাম নয়, এটা আমাদের মেজাজ, শক্তি, এমনকি ওজন নিয়ন্ত্রণের সঙ্গেও জড়িত।”
তাই রাতটা যদি কাটানো যায় একটু যত্ন নিয়ে, তাহলে সকালে উঠে শুধু মুখে নয় – মনেও থাকবে আলোর ছোঁয়া। চলুন দেখে নিই, কোন পাঁচটি সহজ অভ্যাস সত্যিকারের বদল এনে দিতে পারে:
১. দিনশেষের ভাবনাগুলো লিখে ফেলুন
ঘুমাতে যান, অথচ মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে “আগামীকাল কী কী করব”? পরিচিত তো?
এই চিন্তাগুলোকে মাথা থেকে সরিয়ে ফেলতে একটা খাতা নিন, লিখে ফেলুন – কী করতে হবে, কী মনে রাখতে হবে।
ড. স্ট্যানলি বলেন:
“ঘুম না আসার সবচেয়ে বড় কারণ হলো অতিরিক্ত চিন্তা। যখন আমরা লিখে ফেলি, তখন মস্তিষ্ক একটা ‘ছুটি’ পায়।”
আরও ভালো লাগতে চাইলে, আজকের দিন থেকে তিনটি ছোট সাফল্য বা ভালো মুহূর্ত লিখে ফেলুন। গবেষণা বলছে, এই ধরণের গ্র্যাচিটিউড জার্নালিং আপনার রক্তচাপ কমায়, শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখে এবং ঘুমের আগে মনকে শান্ত করে।
২. রাতের খাবারের পর একটু হাঁটুন
খাওয়ার পর হাঁটতে বের হওয়াটা অনেকেই দাদু-নানির অভ্যাস বলে মনে করেন। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে, মাত্র ১০ মিনিট হেঁটে নিলে আপনার শরীরের ব্লাড সুগার পরদিন ২২% পর্যন্ত কম থাকতে পারে।
নিউজিল্যান্ডের University of Otago বলছে, খাবারের পর হালকা হাঁটার ফলে মাংসপেশি ব্লাড সুগার টেনে নেয় শক্তি হিসেবে, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে দারুণ।
আর পুরনো ধারণা ভুলে যান – রাতের সময় হালকা ব্যায়াম ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় না, বরং গভীর ঘুমকে বাড়িয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, এমন হাঁটার এনার্জি ও মেজাজে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে ২৪ ঘণ্টা ধরে।
৩. অন্ধকারে ঘুমান – হৃদয় ভালো থাকবে
শুধু বিছানার আরাম নয়, ঘরের আলোও ঘুমের বড় শত্রু।
২০২৪ সালের এক বড় গবেষণায় দেখা গেছে, যারা রাতে আলো জ্বালিয়ে ঘুমান, তাদের রক্তচাপ বেড়ে যায়, এবং হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়ে।
তাই, ঘর রাখুন ঠান্ডা (১৬-১৮°C), নিঃশব্দ আর একদম অন্ধকার। ব্ল্যাকআউট পর্দা বা একটা চোখ ঢাকার মাস্ক – যেটা সুবিধা হয়, সেটাই ব্যবহার করুন।
ড. স্ট্যানলি বলেন:
“ঘুমের জন্য পরিবেশ ঠিক করাটা খুব জরুরি। আলো আটকালে ঘুমের গুণগত মান অনেকটাই বাড়ে।”
৪. গরম পানিতে গোসল করুন, হালকা পাজামা পরুন
গরমে ঠান্ডা পানিতে গোসল, কিংবা নগ্ন হয়ে ঘুম – শুনতে ভালো লাগলেও, এতে ঘুম ভালো হয় না।
গরম পানিতে গোসল করলে শরীর নিজে থেকেই ঠান্ডা হতে শুরু করে, যা ঘুমের জন্য দরকারি। আর ঠান্ডা গোসল করলে শরীর নিজেকে গরম রাখার চেষ্টা করে, ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়।
আর নগ্ন হয়ে ঘুমালে, শরীর ঘামতে শুরু করে বটে, কিন্তু ঘাম ত্বকে লেগে থাকলে মস্তিষ্ক ভাবে শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে, ফলে আরও ঠান্ডা হওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।
সরাসরি কথা হলো – ঘুমানোর আগে একটা গরম গোসল নিন, তারপর ঢিলেঢালা সুতির বা শ্বাস নিতে পারে এমন পাজামা পরে ঘুমোতে যান।
৫. একটু ভালোবাসা ভাগ করুন
শুধু শারীরিক ঘনিষ্ঠতা নয়, ভালোবাসা ছুঁয়ে গেলে মন ভালো থাকে।
২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা রাতে ঘনিষ্ঠ হন, তারা পরদিন শুধু খুশিই না, বরং জীবনে একটা “অর্থ” অনুভব করেন।
মনোবিদ ডেভিড লাডেন বলেন,
“যৌন মিলনের পরে যে ‘আফটারগ্লো’ তৈরি হয়, তা এক-দু’দিন পর্যন্ত থাকে।”
হয়ত সেক্স সম্ভব নয় – তবুও হাত ধরা, আলিঙ্গন, কপালে চুমু – এই ছোট ছোট ছোঁয়াও শরীরে অক্সিটোসিন নিঃসরণ করে, যা মন শান্ত করে, স্ট্রেস কমায়। এমনকি সলো সময় কাটানোও ঘুমে সাহায্য করে, কারণ এতে প্রোল্যাকটিন হরমোন নিঃসরণ হয়, যা ঘুম নিয়ে আসে।
এই পাঁচটি সহজ অভ্যাসের জন্য ট্রেন্ডি হ্যাশট্যাগের দরকার নেই। শুধু একটু সচেতনতা আর নিজেকে ভালোবাসা দরকার।
সকালে উঠে যদি মনের মধ্যে শান্তি, শরীরে শক্তি আর চেহারায় উজ্জ্বলতা চান – তাহলে শুরু করুন রাত থেকেই। কারণ দিনের শুরু, রাতের যত্ন থেকেই হয়।
মারিয়া