
ছবি:সংগৃহীত
কফি – অনেকের সকাল শুরুই হয় এক কাপ গরম কফি ছাড়া কল্পনা করা যায় না। শুধু ঘুম তাড়াতেই নয়, কফিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রাকৃতিক উপাদান আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। এটি মস্তিষ্ককে সচল রাখে, বিপাকক্রিয়া উন্নত করে, এমনকি টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও পার্কিনসনের মতো রোগের ঝুঁকিও কমায়।
তবে জানলে অবাক হবেন, প্রতিদিনের কিছু সাধারণ কফি খাওয়ার অভ্যাসই আমাদের অজান্তে শরীরের ক্ষতি ডেকে আনছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কফির উপকার পেতে হলে আমাদের অভ্যাসগুলোতেও একটু পরিবর্তন আনতে হবে। নিচে দেওয়া হলো এমন ৫টি অভ্যাস, যা না বদলালে ভালো কফিও হয়ে উঠতে পারে শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
১. দেরিতে কফি খাওয়া – ঘুমের শত্রু
অনেকেই অফিস বা কাজের শেষে সন্ধ্যায় বা রাতে কফি খান, কিন্তু এতে ঘুমের মান নষ্ট হতে পারে। কফিতে থাকা ক্যাফেইন শরীরে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত থেকে যায়, যা ঘুম আসতে দেরি করায় বা ঘুমের গভীরতা কমায়।
বিশেষজ্ঞের টিপস:
ঘুমানোর অন্তত ৬ ঘণ্টা আগে থেকে কফি পান বন্ধ রাখুন। এতে ঘুম হবে আরামদায়ক, মনও থাকবে সতেজ।
২. ফিল্টার ছাড়া কফি – হার্টের ঝুঁকি বাড়ায়
ফ্রেঞ্চ প্রেস, তুর্কিশ কফি বা এসপ্রেসোর স্বাদ যেমনই হোক, এগুলো ফিল্টার ছাড়া তৈরি হয়। এতে থাকা কাহওয়েওল ও ক্যাফেস্টল নামের উপাদান রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বাড়ায়, যা হার্টের রোগের আশঙ্কা তৈরি করে।
বিশেষজ্ঞের টিপস:
ফিল্টার কফি যেমন ড্রিপ বা পোর-ওভার পদ্ধতি বেছে নিন। এতে কফির স্বাদও বজায় থাকবে, আবার হৃদরোগের ঝুঁকিও কমবে।
৩. অতিরিক্ত চিনি – উপকারের বদলে ক্ষতি
অনেকে কফিকে মজাদার করতে চিনি, ফ্লেভার সিরাপ বা ক্রীমার ব্যবহার করেন। কিন্তু এতে কফির স্বাস্থ্যগুণ ম্লান হয়ে যায়। অতিরিক্ত চিনি শরীরে বাড়তি ক্যালোরি যোগ করে, যা ওজন বাড়ায়, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি তো আছেই।
বিশেষজ্ঞের টিপস:
চেষ্টা করুন ব্ল্যাক কফি খাওয়ার বা প্রাকৃতিক মিষ্টি যেমন সামান্য মধু, দারুচিনি ব্যবহার করার। এতে স্বাদও থাকবে, স্বাস্থ্যও।
৪. ঘুম থেকে উঠেই কফি খাওয়া – ঠিক নয়
অনেকেই ঘুম ভাঙার পরই কফি খান। কিন্তু তখন শরীরে কর্টিসল নামে একটি প্রাকৃতিক হরমোন তৈরি হয়, যা নিজেই শরীরকে জাগিয়ে তোলে। সেই সময় কফি খেলে শরীরের স্বাভাবিক রিদম বিঘ্নিত হয়, এবং কফির প্রভাবও কমে যায়।
বিশেষজ্ঞের টিপস:
ঘুম থেকে ওঠার পর অন্তত ৩০-৬০ মিনিট পরে কফি খান। এতে ক্যাফেইনের কাজ হবে আরও কার্যকর।
৫. কফি দিয়ে খাবার বাদ দেওয়া – বিপজ্জনক অভ্যাস
ওজন কমানোর আশায় অনেকে সকালের নাশতা বা দুপুরের খাবার বাদ দিয়ে কফি খান। কফি সাময়িক ক্ষুধা দমন করলেও, এতে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ফাইবার ও পুষ্টি নেই। এতে শরীর দুর্বল হয়, মন খারাপ থাকে, ক্লান্তিও বাড়ে।
বিশেষজ্ঞের টিপস:
খাবার বাদ দিয়ে কখনও কফি খাবেন না। বরং পুষ্টিকর নাশতা বা খাবারের সঙ্গে কফি খান – এতে শরীরও থাকবে চাঙা, মেজাজও ভালো থাকবে।
কফিকে বানান সুস্থ জীবনের সঙ্গী
কফি যদি ঠিকভাবে খাওয়া যায়, তবে তা হতে পারে আপনার দৈনন্দিন জীবনের এক অসাধারণ শক্তির উৎস।
- দেরিতে না খাওয়া
- ফিল্টার পদ্ধতি বেছে নেওয়া
- চিনি কমানো
- ঘুম ভাঙার কিছুক্ষণ পর খাওয়া
- কফিকে খাবারের বিকল্প না বানানো
এই সহজ অভ্যাসগুলো মেনে চললে কফির উপকারিতা আপনি পুরোপুরি উপভোগ করতে পারবেন।
আপনার এক কাপ কফি, হতে পারে সুস্থ জীবনের সঙ্গী – যদি খান ঠিকভাবে।
মারিয়া