ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

সকালের রুটিন বদলে গেলে জীবন বদলে যায়

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২০ জুলাই ২০২৫

সকালের রুটিন বদলে গেলে জীবন বদলে যায়

ছ‌বি: প্রতীকী

সকালের শুরুটা যেমন হয়, পুরো দিনের মুডও অনেকটা তেমনই কাটে। তাই সকালের রুটিন যদি ইতিবাচক হয়, তাহলে সেটা আমাদের পুরো জীবনের গতিপথ বদলে দিতে পারে। যারা সফল, তারা প্রায় সবাই বলে থাকেন যে তাদের সফলতার পেছনে একটা বড় কারণ হলো সঠিক ও শৃঙ্খলিত সকালের রুটিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে কী করি, সেটাই ঠিক করে দেয় আমাদের শরীর, মন ও চিন্তার দিকনির্দেশনা।

সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা, হুড়োহুড়ি করে কাজে বের হওয়া বা ফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে সময় নষ্ট করা—এসব অভ্যাস অনেকের মধ্যে দেখা যায়। এতে করে দিনটা শুরু হয় এলোমেলোভাবে, মনোযোগ কমে যায়, আর কাজেও আসে না আনন্দ বা গতি। কিন্তু যদি ঠিকঠাক একটি পরিকল্পিত রুটিন বানানো যায়, তাহলে সকালটা হয় শান্ত, পরিপাটি ও কার্যকর। আর এমন সকাল মানেই ভালো একটা দিন, আর ভালো দিনগুলো মিলেই তো গড়ে ওঠে সুন্দর জীবন।

সকালের রুটিনে প্রথমেই থাকা উচিত সময়মতো ঘুম থেকে ওঠা। সূর্য ওঠার কিছু সময়ের মধ্যেই ঘুম থেকে জেগে উঠলে শরীর-মন ফ্রেশ থাকে। এরপর একটু সময় নিয়ে নরম ধীরে ধীরে দিন শুরু করা উচিত। যেমন, খালি পেটে হালকা গরম পানি খাওয়া, একটু ব্যায়াম বা হাঁটা, এবং কিছুক্ষণ মেডিটেশন বা প্রার্থনা করলে মন শান্ত হয়। এসব অভ্যাস সারা দিনের মানসিক চাপ সামলাতে সাহায্য করে।

অনেকে সকালে একটু বই পড়েন বা দিনের পরিকল্পনা করে নেন। এটা একটা ভালো অভ্যাস। এতে করে মনে স্বচ্ছতা আসে, কোন কাজটা আগে করতে হবে সেটা বোঝা যায়, আর সময়ের অপচয়ও কমে। আবার সকালের দিকে মস্তিষ্ক অনেকটা চটপটে থাকে, তাই কঠিন কাজগুলো সকালেই করে ফেলা সবচেয়ে ভালো।

সকালে যদি মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় নষ্ট করি, তাহলে মস্তিষ্কে অকারণ চাপ পড়ে। সেখানে অনেক ধরনের খবর, মতবিরোধ, তুলনা—সবকিছু মনকে নেতিবাচক করে তোলে। তাই সকালে যতটা সম্ভব ডিজিটাল জগৎ থেকে দূরে থাকা ভালো।

সকালের নাশতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই না খেয়ে কাজ শুরু করে দেন, যা শরীরের ক্ষতি করে। একটি পুষ্টিকর নাশতা শরীরকে শক্তি দেয়, মনকে সতেজ রাখে। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং কাজের মধ্যে ক্লান্তি আসতে দেয় না।

সকালের রুটিনে কিছুটা "নিজের জন্য সময়" রাখা দরকার। এ সময়টাতে নিজেকে নিয়ে ভাবা, জীবনের লক্ষ্য ঠিক করা, নিজেকে আরও ভালো করার চেষ্টা করা যায়। এভাবে নিয়মিত সকাল কাটালে একটা মানসিক ভারসাম্য তৈরি হয়। নিজেকে সময় দিলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে, এবং জীবনে ভালো কিছু করার শক্তি পাওয়া যায়।

যারা নিয়মিত সকালে উঠেন, তারা জীবনে বেশ কিছু পদক্ষেপে এগিয়ে থাকেন। কারণ তারা সময়ের মূল্য বোঝেন। একটা গোছানো সকাল মানেই একটা পরিকল্পিত দিন। এমন দিনগুলো যত বাড়ে, জীবনও তত নিয়ন্ত্রিত ও সফল হয়। সময়মতো কাজ করা, শরীর-মন ভালো রাখা, আত্মউন্নয়ন—সবকিছুর শুরুই কিন্তু একটা ভালো সকাল থেকে।

সুতরাং, নিজের জীবনকে বদলাতে চাইলে প্রথমেই বদলাতে হবে সকালের অভ্যাস। সকালে একটু আগে ঘুম থেকে ওঠা, নিজের যত্ন নেওয়া, মনকে শান্ত রাখা, সময়মতো খাওয়া ও কাজের পরিকল্পনা করা— এসব ছোট ছোট কাজই মিলিয়ে আমাদের জীবনে বড় একটা পরিবর্তন আনতে পারে।

সকালের রুটিন মানে শুধু একটা সময়সূচি নয়, এটা আসলে নিজের প্রতি প্রতিশ্রুতি। প্রতিদিন নতুন করে শুরু করার সুযোগ। সেই সুযোগ যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, তাহলে জীবনও নতুন করে সাজানো সম্ভব। সকালের রুটিন বদলালেই জীবন বদলে যায়—এটা শুধু একটি কথা নয়, এটি বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা। এখনই সময় নিজের রুটিনের দিকে নজর দেওয়ার। কারণ প্রতিটি সকাল একটি নতুন সুযোগ।

এম.কে.

×