ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

একাকিত্ব আর একা থাকা এক জিনিস নয়— নিজেকে সময় দিন

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২০ জুলাই ২০২৫

একাকিত্ব আর একা থাকা এক জিনিস নয়— নিজেকে সময় দিন

ছ‌বি: প্রতীকী

আমাদের জীবনে অনেক সময় আসে যখন আমরা একা থাকি। আবার এমন সময়ও আসে যখন মনে হয় কেউ আমাদের বুঝছে না, পাশে নেই, আমরা একা হয়ে গেছি। এই দুই অনুভূতি দেখতে একইরকম মনে হলেও, বাস্তবে একাকিত্ব আর একা থাকা এক জিনিস নয়।

একাকিত্ব মানে হলো একধরনের মানসিক শূন্যতা। মানুষ ঘরে, অফিসে, বাজারে কিংবা বন্ধুদের ভেতর থাকলেও তার ভেতরে একটা ফাঁকা ফাঁকা অনুভূতি কাজ করে। মনে হয়, কেউ তার কথা শুনছে না, বুঝছে না বা গুরুত্ব দিচ্ছে না। এই একাকিত্ব মনকে ভারী করে তোলে, বুকের ভেতর চাপ সৃষ্টি করে। মানুষ তখন হাঁপিয়ে ওঠে, কখনও হতাশায় ডুবে যায়।

অন্যদিকে, একা থাকা অনেক সময় ইচ্ছাকৃতও হতে পারে। কেউ হয়তো নিজের জন্য একটু নিরিবিলি সময় চায়। কাজের চাপে ক্লান্ত হয়ে, মানুষের ভিড় থেকে একটু দূরে গিয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিতে চায়। একা থাকলে মানুষ নিজের সঙ্গে সময় কাটাতে পারে। নিজের চিন্তা, অনুভূতি আর চাওয়া-পাওয়াকে বুঝে নিতে পারে। এটা মানসিক স্বাস্থ্য আর আত্মউন্নয়নের জন্য অনেক দরকারি।

যখন আমরা একা থাকি, তখন নিজের সঙ্গে কথোপকথনের সুযোগ তৈরি হয়। নিজের ভেতরের দুঃখ, আশা, ভয় বা স্বপ্নগুলোকে বুঝে নিতে পারি। এই সময়টাতে আমরা পড়তে পারি, গান শুনতে পারি, লিখতে পারি বা হেঁটে যেতে পারি নিজের মতো করে। এতে করে মন শান্ত হয়, চিন্তা পরিষ্কার হয়। একা থাকা মানেই যে কষ্ট পাওয়া, তা নয়। বরং এই সময়টা যদি ভালোভাবে কাজে লাগানো যায়, তাহলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং নিজের প্রতি ভালোবাসাও বাড়ে।

কিন্তু সমস্যা হয় তখন, যখন মানুষ নিজের ভেতর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। যখন চারপাশে অনেক মানুষ থাকলেও মনে হয়, কেউ নেই। এই অনুভূতিটাই হলো একাকিত্ব। এটা ধীরে ধীরে বিষণ্ণতা ডেকে আনে। তখন কোনো কাজেই মন বসে না, জীবন অর্থহীন মনে হয়। এই অবস্থায় মানুষ নিজেকে অবমূল্যায়ন করতে থাকে, আর আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। একাকিত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কাউকে পাশে পাওয়া দরকার হয় – হয় বন্ধু, নয় আত্মীয়, নয়তো কাউন্সেলর।

এই দুই অবস্থার পার্থক্য বোঝা খুব জরুরি। কেউ যদি বলে, “আমি একা থাকতে চাই,” সেটা মানে এই নয় যে সে দুঃখে আছে। সে হয়তো নিজেকে সময় দিচ্ছে, নিজেকে ভালোবাসার চেষ্টা করছে। আবার কেউ সারাদিন বন্ধুদের সঙ্গে থেকেও যদি বলে, “আমি খুব একা অনুভব করছি,” তাহলে বুঝতে হবে সে মানসিকভাবে কষ্টে আছে। এই জায়গায় এসে আমাদের সহানুভূতি ও বোঝাপড়া দরকার।

নিজেকে সময় দেওয়া কোনো স্বার্থপরতা নয়। এটা একটা দায়িত্ব। আমরা যতটা সময় অন্যের কথা ভাবি, তাদের খুশি রাখতে চেষ্টা করি, ততটাই সময় নিজেদের জন্যও দরকার। প্রতিদিন অন্তত কিছু সময় নিজের সঙ্গে কাটানো উচিত। নিজের অনুভূতিগুলোকে বুঝতে শেখা দরকার। এতে করে আমরা আরও স্থির, সচেতন ও ইতিবাচক মানুষ হতে পারি।

একাকিত্ব দূর করতে হলে মানুষের সংস্পর্শে আসা দরকার, খোলামেলা কথা বলা দরকার। আবার নিজের সঙ্গে ভালো সময় কাটাতে হলে একা থাকাটাও দরকার। তাই এই দুইয়ের পার্থক্য বোঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ। একা থাকা মানেই একাকিত্ব নয়। অনেক সময় একা থাকাই আমাদের মানসিকভাবে শক্ত করে তোলে।

সুতরাং, মাঝে মাঝে নিজের জন্য একটু সময় রাখুন। ভিড় থেকে সরে এসে নিজের মনকে শুনুন। কী চায়, কী অনুভব করছে – তা বোঝার চেষ্টা করুন। দেখবেন, আপনি অনেক হালকা লাগছে। নিজেকে ভালোবাসুন, নিজের ভেতরের শিশুটিকে সময় দিন। কারণ, আপনি যদি নিজেকে সময় না দেন, কেউ তা আপনার হয়ে করবে না।

এম.কে.

×