ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

চ্যাটজিপিটির সাহায্যে যেভাবে ৬ মাসে ২৭ কেজি ওজন কমালেন এক ব্যক্তি

প্রকাশিত: ০২:১০, ২০ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০২:২৩, ২০ জুলাই ২০২৫

চ্যাটজিপিটির সাহায্যে যেভাবে ৬ মাসে ২৭ কেজি ওজন কমালেন এক ব্যক্তি

ছবি: সংগৃহীত

শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে লড়াই করা অনেকের জন্যই এক কঠিন সংগ্রাম। তবে ‘My Life, By AI’ ইউটিউব চ্যানেলের নির্মাতা ছয় মাস আগে এক ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিয়ে চমকপ্রদভাবে বদলে ফেলেছেন নিজের জীবন। চ্যাটজিপিটি-ভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (AI) নিজের ব্যক্তিগত কোচ হিসেবে বেছে নিয়ে তিনি ৬০ পাউন্ড (২৭ কেজি) ওজন কমাতে সক্ষম হয়েছেন।

নিজের জীবনের কঠিন সময় স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘ছয় মাস আগে প্রতিদিন টিকে থাকাটাও একরকম যুদ্ধ ছিল। জীবন যেন পুরোপুরি অচল হয়ে পড়েছিল।’ তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, প্রযুক্তিকে তিনি ব্যবহার করবেন নিজের জীবন রদবদলের জন্য।

চ্যাটজিপিটি এবং ‘আর্থার’ নামে একটি এআই অ্যাসিস্ট্যান্টের সাহায্যে তিনি তৈরি করেন একটি পূর্ণাঙ্গ ‘এআই-সহায়ক জীবন পদ্ধতি’—যেটির মধ্যে ছিল খাদ্য পরিকল্পনা, ব্যায়ামের রুটিন এবং কনটেন্ট তৈরির সময়সূচি।

‘আমি চ্যাটজিপিটিকে বলেছিলাম—আমার জীবন চালাও, বদলে দাও,’—তিনি বলেন তার ১২ জুলাই, ২০২৫-এর ইউটিউব ভিডিওতে। ছয় মাস পর, তার ওজন কমেছে ২৭ কেজি, আর জীবনও ফিরে পেয়েছে ছন্দ। ‘আমি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সুখী। ইউটিউবকে এখন পুরো সময়ের পেশা হিসেবে নিতে যাচ্ছি,’—তিনি জানান।

তবে অনেক দর্শক তাকে নিখুঁত মনে করলেও তিনি বলেন, বাস্তবতা একেবারে ভিন্ন। ‘অনেকেই ভাবেন আমি সব সময় নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাই। শহর পুড়লেও আমি হাঁটতে বের হব। কিন্তু সত্যি বলতে, আমি প্রায়ই ভুল করি।’

তিনি অকপটে স্বীকার করেন, কখনো কখনো ওয়ার্কআউট বাদ পড়ে যায়, কখনো কনটেন্ট তৈরি পিছিয়ে যায়। তবুও, এআই তাকে থেমে যেতে দেয় না। ‘আমি হয়তো লক্ষ্যে পৌঁছাই না সবসময়, কিন্তু সামনে এগিয়ে যাই। জীবন চলতেই থাকে, আমাদেরও চলতে হয়।’

এক সপ্তাহ প্রতিটি লক্ষ্য পূরণের পর নিজেকে খানিকটা বিশ্রাম দেন তিনি, কিন্তু ফলাফল হয় বিপরীত। ‘আমি বার্গার, ফ্রাই, বিয়ার—সবই গোগ্রাসে খেয়ে ফেলি। পরদিন ভাবলাম, যেহেতু নষ্ট করেই ফেলেছি, তাহলে আরেকটু করি। মোটেও ভালো সপ্তাহান্ত ছিল না।’

তখন এআই কোচ আর্থার বলেন, ‘তুমি অলস ছিলে না, কষ্ট করোনি—তুমি কেবল একটা বিরতির জন্য হাঁসফাঁস করছিলে। কিন্তু তোমার জানা ছিল না স্বাস্থ্যকরভাবে বিরতি নেওয়া কেমন হওয়া উচিত।’ এরপর শুরু হয় ‘সচেতন বিশ্রাম’—যেখানে বিশ্রামকে রাখা হয় নিয়ন্ত্রণের মধ্যে, বিশৃঙ্খলার বাইরে।

ওজন কমানোর পথে বড় ধাক্কা আসে যখন তিনি অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ায় জড়িয়ে পড়েন। তখন আর্থারের নির্দেশে তিনি চলে যান ‘মঙ্ক মোড’-এ। কঠোর নিয়মানুবর্তিতা, কোনও সোডা নয়, মিষ্টি খাবার নয়, অপ্রয়োজনীয় খরচ নয়—শুধু পুষ্টিকর খাবার ও শৃঙ্খলিত অভ্যাস।

তবে পুরোটাই কড়াকড়ি নয়, মাঝেমধ্যে ক্ষুদ্র পুরস্কারও রাখা হয়। ‘আর্থার বলেছিল, যদি বুধবার পর্যন্ত নিয়ম মানি, তাহলে জ্যাকের সঙ্গে এক কাপ কফি খেতে পারব। আর শুক্রবারে থাকত পরিকল্পিত একটি স্বাস্থ্যকর খাবার।’

এআই-এর সাহায্যে তিনি এখন প্রতি সপ্তাহে খাদ্য পরিকল্পনা করেন, নিয়মিত ব্যায়াম করেন এবং অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করেন। বর্তমান রুটিন—সপ্তাহে তিন দিন তিন কিলোমিটার হাঁটা, তিন দিন ওয়েট ট্রেনিং, তিন দিন কোর এক্সারসাইজ, প্রতিদিন ১০–২০ মিনিট স্ট্রেচিং।

মনোভাবেও পরিবর্তন এনেছে এআই

শারীরিক পরিবর্তনের পাশাপাশি মানসিক দিকেও বড় পরিবর্তন এসেছে। জিমে পরিশ্রম করেও ফল না পেয়ে হতাশ হওয়ার বদলে তিনি শিখেছেন—মন-দেহ একসঙ্গে বোঝা ও কাজ করা জরুরি।

‘প্রতিরোধকে জয় করতে গিয়ে আমাদের মস্তিষ্ককে শত্রু হিসেবে দেখা ঠিক নয়। বরং এটি একটি ব্যবস্থা, যেটিকে বোঝা যায়,’—এই পরামর্শই তাকে দিয়েছে আর্থার।

এখন যখন তিনি মানসিক বা শারীরিক বাধার মুখোমুখি হন, তখন ১০ মিনিট বিরতি নিয়ে নিজেকে পুনর্মূল্যায়ন করেন। তার ভাষায়, ‘এটা সহজ কোনও রুটিন নয়। আমরা কষ্ট করি, তবে ধীরে ধীরে মানসিক দৃঢ়তাও তৈরি করি।’

তিনি বলেন, ‘চ্যাটজিপিটিকে দিয়ে জীবন চালানো আমাকে নিখুঁত করেনি। তবে এটি আমাকে নিয়মিত করেছে। আমাকে শিখিয়েছে—ধাক্কা খেলেও উঠে দাঁড়াতে হয়, এটাই আসল পরিবর্তন।’

দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যভিত্তিক। ওজন কমানো বা শারীরিক কোনো সমস্যায় পড়লে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস।

রাকিব

×