ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

 শরীর ক্লান্ত অথচ ঘুম পাচ্ছে না? জেনে নিন এর পিছনের কারণ

প্রকাশিত: ০০:০৩, ২০ জুলাই ২০২৫

 শরীর ক্লান্ত অথচ ঘুম পাচ্ছে না? জেনে নিন এর পিছনের কারণ

রাতভর ঘুম আসে না, কিন্তু সকাল হতেই চোখে ঘুম আর শরীরে ক্লান্তি এই অভিজ্ঞতা কি পরিচিত লাগছে? ঘুমের এমন গোলমেলে অবস্থা বহু মানুষেরই নিত্য সঙ্গী। আপনি হয়তো ভাবছেন, কেন দিনের পর দিন এমন হচ্ছে? আর কী করলে ফিরবে সেই শান্ত ঘুম আর সতেজ সকাল? আজ জানুন এর পেছনের কারণগুলো আর ঘরোয়া কিছু কার্যকর সমাধান।

ঘুম নষ্টের প্রথম অপরাধী: বিকেলের বেশি ঘুম
বিকেলে দীর্ঘ সময় ধরে ঘুমালে রাতে আর ঘুম আসে না এটা অনেকেই জানেন না। ছোট্ট একটা ‘পাওয়ার ন্যাপ’ তো ঠিক আছে, কিন্তু এক ঘণ্টা বা তার বেশি ঘুম হলে শরীর রাতের ঘুমের জন্য তৈরি হতে চায় না। তাই বিকেলে ২০-৩০ মিনিটের বেশি ঘুম থেকে বিরত থাকাই ভালো।

উদ্বেগ: মনকে ঘুমাতে দেয় না
দিনের মানসিক চাপ, উদ্বেগ, ভয় সবকিছু মিলে আমাদের ঘুমের শত্রুতে পরিণত হয়। রাতে বিছানায় গেলেও মন ঘুরপাক খেতে থাকে পুরোনো চিন্তায়। এর ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়, ঘুম হলেও মাঝরাতে বারবার জেগে উঠি। মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশন বা ডিপ ব্রিদিং অভ্যাস করতে পারেন।

কফি প্রেমীদের সাবধানবার্তা
চা-কফি আমাদের ঘুমের বড় শত্রু। বিশেষ করে বিকেলের পর কফি খেলে তার প্রভাব শরীরে থেকে যায় রাত অবধি। এতে ঘুমের গভীরতা কমে যায়। যারা রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না, তাঁদের বিকেলের পর থেকে কফি একেবারেই এড়িয়ে চলা উচিত।

মোবাইল স্ক্রিনই ঘুমের বড় শত্রু?
রাতের বেলায় ঘুমানোর আগে মোবাইল ঘাঁটেন? তবে জেনে রাখুন, স্ক্রিনের আলো মস্তিষ্ককে ‘এখনো দিন’ ভাবিয়ে তোলে! ফলে মেলাটোনিন নামের ঘুম–উদ্দীপক হরমোনের ক্ষরণ কমে যায়। চেষ্টা করুন অন্তত ঘুমানোর এক থেকে দুই ঘণ্টা আগে মোবাইল-ল্যাপটপ সব বন্ধ রাখতে।

কোভিড–পরবর্তী ঘুমের সমস্যা
করোনার সংক্রমণ এবং পরবর্তী মানসিক ও শারীরিক ধকল অনেকের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড থেকে সুস্থ হলেও অনেকের মধ্যে অনিদ্রা ও দিনের ক্লান্তি লেগেই থাকে। এ ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা এবং ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।

ঘুমের রোগ? অবহেলা নয়
আপনি যদি দিনে অসম্ভব ক্লান্ত থাকেন, অথচ রাতে ঘুম আসে না তবে ঘুমের সমস্যার পেছনে স্লিপ অ্যাপনিয়া, রেস্টলেস লেগস সিনড্রোম কিংবা ঘুমের বডি ক্লকের গোলমালও থাকতে পারে। এতে শরীর ঘুমাতে চায় না, বা ঘুম এলেও তা ভেঙে যায় বারবার। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।

শরীরের ভেতরের ঘড়ি কাজ করে ঠিকঠাক?
আমাদের শরীরে এক ধরনের প্রাকৃতিক ঘড়ি থাকে, যাকে বলে ‘সার্কেডিয়ান রিদম’। আলো-অন্ধকারের ওপর নির্ভর করে এই ঘড়ি আমাদের ঘুম, মেলাটোনিন উৎপাদন ও শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। রাতে আলো কমলে শরীর ঘুমের জন্য প্রস্তুত হয়, আর সকালে আলো পেলে ঘুম ভাঙে। এই স্বাভাবিক ছন্দে বিঘ্ন ঘটলে ঘুমেও গলদ হয়।


আপনি যদি দিনের পর দিন সকালে ক্লান্ত বোধ করেন, আর রাতে ঘুমাতে না পারেন তাহলে একে অবহেলা করবেন না। এটি আপনার দৈনন্দিন জীবনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন, ঘুমের সময় নির্দিষ্ট রাখা এবং প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই হতে পারে শান্ত ঘুমের চাবিকাঠি।

ঘুমই তো জীবনের রিচার্জ বোতাম। সেটাই যদি বারবার বিঘ্ন ঘটে, তাহলে শরীর-মনের ভারসাম্যও হারিয়ে যেতে পারে। তাই এখনই সময় ঘুমকে গুরুত্ব দেওয়ার।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/3dxu2h5a

আফরোজা

×