ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

অ্যালোপেশিয়া বা চুল পড়া প্রতিরোধে ঘরোয়া কিছু সহজ উপায়

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:৫২, ১৯ জুলাই ২০২৫

অ্যালোপেশিয়া বা চুল পড়া প্রতিরোধে ঘরোয়া কিছু সহজ উপায়

ছবি: সংগৃহীত

চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে? ব্যয়বহুল চিকিৎসার আগে মৃদু ও প্রাকৃতিক কিছু ঘরোয়া প্রতিকার একবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। নারকেল তেল এবং পেঁয়াজের রস মাথার ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে এবং চুলের ফলিকল উদ্দীপিত করতে সহায়তা করে। রোজমেরি তেল রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, আর ডিমের মাস্ক চুলের গোঁড়া মজবুত করে। জবা ফুল ও গ্রিন টি-ও চুলের জন্য বেশ উপকারী। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ। এই তিনটি দিকও গুরুত্বপূর্ণ। তবে গুরুতর চুল পড়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

যদি আপনি ব্রাশে অতিরিক্ত চুল দেখতে পান বা মাথায় ছোট ছোট টাক পড়ে যাচ্ছে (হ্যালো, অ্যালোপেশিয়া!), তাহলে আপনি একা নন। এত ব্যয়বহুল চিকিৎসা ও পণ্য দেখে দিশেহারা হয়ে পড়া স্বাভাবিক। তবে ক্লিনিকে যাওয়ার বা দামি প্রোডাক্ট কেনার আগে ঘরোয়া কিছু প্রাকৃতিক সমাধান চেষ্টা করাই ভালো। এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলো স্ক্যাল্পের জন্য কোমল এবং রাসায়নিকমুক্ত উপায়ে চুল গজাতে সহায়তা করতে পারে।

একটি জনপ্রিয় ঘরোয়া মিশ্রণ হলো নারকেল তেল ও পেঁয়াজের রস। নারকেল তেল স্ক্যাল্পকে হাইড্রেট রাখে এবং গোঁড়া শক্ত করে, আর পেঁয়াজের রসে থাকা সালফার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলের ফলিকলকে সক্রিয় করে। ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল হালকা গরম করে তাতে ১–২ টেবিল চামচ টাটকা পেঁয়াজের রস (কুচিয়ে ছেঁকে নেওয়া) মেশান। তারপর মাথার ত্বকে আলতোভাবে মালিশ করুন। ৩০ থেকে ৬০ মিনিট রেখে ভালোভাবে শ্যাম্পু করুন—প্রয়োজনে দু’বার। সপ্তাহে একবার নিয়মিত এটি ব্যবহার করলে কিছুদিনের মধ্যে স্ক্যাল্পে পুষ্টির পরিবর্তন টের পাবেন।

পরবর্তী প্রতিকার রোজমেরি তেল—এটি জনপ্রিয় কারণ এর মধ্যে প্রশমিত ও উদ্দীপনক্ষম গুণ রয়েছে। এটি স্ক্যাল্পে রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে চুল গজাতে সাহায্য করতে পারে। ৫–৬ ফোঁটা রোজমেরি এসেনশিয়াল অয়েলের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ জোজোবা বা বাদাম তেল মিশিয়ে মাথায় কয়েক মিনিট মালিশ করুন। প্রায় ৩০–৪৫ মিনিট অথবা চাইলে সারারাত রেখে দিন, তারপর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ১–২ বার করলে ভালো ফল মিলবে।

আরও একটি জনপ্রিয় উপায় হলো ডিমের মাস্ক। ডিমে থাকে প্রোটিন, বায়োটিন ও উপকারী ফ্যাট, যা চুলকে শক্ত ও উজ্জ্বল করে তোলে। একটিমাত্র ডিমের সঙ্গে এক টেবিল চামচ করে অলিভ অয়েল ও মধু মিশিয়ে মাথার গোঁড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগান। শাওয়ার ক্যাপ পরে ২০–৩০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। ১০ দিনে একবার ব্যবহার করলে দুর্বল চুল শক্ত হবে।

চুলের জন্য দারুণ উপকারী জবা ফুল ও পাতা। এতে থাকে ভিটামিন সি ও অ্যামিনো অ্যাসিড, যা চুল শক্ত করে, ভাঙা কমায় এবং প্রাকৃতিক রঙ বজায় রাখতে সাহায্য করে। কয়েকটি জবা ফুল ও পাতা পেস্ট করে সামান্য পানি বা নারকেল তেল মিশিয়ে স্ক্যাল্পে লাগান। ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার ব্যবহার করুন।

এছাড়াও গ্রিন টি মাথার ত্বকের জন্য আশীর্বাদ। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা চুল পড়া কমাতে ও স্ক্যাল্প ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। ২টি গ্রিন টি ব্যাগ ২ কাপ গরম পানিতে চুবিয়ে ঠান্ডা করে নিন। শ্যাম্পু করার পর স্ক্যাল্পে ঢেলে দিন, ১০–১৫ মিনিট রেখে সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২–৩ বার ব্যবহার করতে পারেন।

এই প্রতিকারগুলো ছাড়াও দৈনন্দিন অভ্যাসেও নজর দিতে হবে। ডিম, বাদাম ও শাকসবজির মতো বায়োটিন সমৃদ্ধ খাবার খান। আয়রন ও জিঙ্ক এর জন্য মসুর ডাল, কুমড়োর বীজ ও গমজাত খাদ্য অন্তর্ভুক্ত করুন। পর্যাপ্ত পানি পান করুন, ঘুম ঠিক রাখুন এবং স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করুন—হাঁটা, লেখালেখি বা শ্বাসপ্রশ্বাস অনুশীলন সহায়ক হতে পারে।

নতুন কিছু ব্যবহারের আগে সব সময় প্যাচ টেস্ট করে নিন, বিশেষ করে এসেনশিয়াল অয়েল বা পেঁয়াজের মতো উপাদান ব্যবহার করলে। মনে রাখবেন, ধৈর্য জরুরি। প্রাকৃতিক প্রতিকার ধীরে কাজ করে, কিন্তু নিয়মিত ব্যবহার করলে অনেকটা কার্যকর হতে পারে। তবে যদি চুল পড়া হঠাৎ বেড়ে যায় বা গুরুতর হয়, দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

চুলের যত্ন আপনার প্রতিদিনের রুটিনের একটি শান্তিদায়ক ও ক্ষমতাবান অংশ হতে পারে। এই সহজ, রান্নাঘর-ভিত্তিক প্রতিকারগুলো চুলের যত্নে প্রাকৃতিক, সাশ্রয়ী এবং কেমিকেলমুক্ত এক বিকল্প হতে পারে। একবার চেষ্টা করে দেখুন, আর জানাতে ভুলবেন না—এই পদ্ধতিগুলো আপনার কতটা উপকারে এসেছে।

শহীদ

×