ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মা-শিশুর চিরন্তন বন্ধন

ওসমান গনি

প্রকাশিত: ০১:৪৫, ৭ অক্টোবর ২০২২

মা-শিশুর চিরন্তন বন্ধন

শিশুকে মায়ের দুধ না খাওয়ালে নিউমোনিয়াজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৫ গুণ

শিশুর খাদ্য হিসেবে মায়ের দুধের বিকল্প কিছু নেই। মায়ের দুধ শিশুর জন্য মৌলিক অধিকার। মায়ের দুধ শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধে শারীরিক গঠন ও মেধা বিকাশে বিশাল ভূমিকা রাখে। একজন শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তার মায়ের বুকের শাল দুধই তাকে প্রথম খাওয়ানো হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর প্রথম ছয় মাস শিশুকে শুধু মায়ের বুকের দুধই খাওয়ানো উচিত।

কেননা এ সময় শিশুকে যদি সঠিকভাবে বুকের দুধ খাওয়ানো হয় তা হলে তার শরীরে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হবে তা তার ভবিষ্যতে সুস্থ শরীর ও দেহ গঠনে বিশাল ভূমিকা রাখে। মাঝে মাঝে সে এমন সর্দি কাশি ও কফে আক্রান্ত হয়ে থাকে অনেক সময় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। শিশুর অনেক সয়ম শ্বাস-প্রশ্বাস পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। এমন কি শিশু মারাও যায়। শিশু যখন দুনিয়াতে আসে তখন সে দুনিয়াটা হয় সম্পূর্ণ নতুন একটা জগত।

শিশু মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় যে তাপমাত্রায় ছিল এবং যে তাপমাত্রার খাদ্য খেয়েছে হঠাৎ করে এ জগতে আসার পর সে তাপমাত্রা ও খাদ্য সে কখনও পায়নি। তারপর যখন তাকে পানি মিশ্রিত বিভিন্ন শিশু খাদ্য খাওয়ানো হয় তখন তার শরীর সেটা মানিয়ে নিতে পারে না। কিন্তু আমাদের দেশে বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় দেখা যায় মায়েরা তার শিশুকে বুকের দুধ পান না করিয়ে বাজারের প্যাকেটজাত দুধ খাওয়াচ্ছেন শুধু নিজের শরীরের গঠন ঠিক রাখার জন্য।

এসব শিশুর আসলে কপাল খারাপ, তারা জন্ম নেয়ার পর মায়ের বুকের দুধ পায় না, মায়েরও কপাল খারাপ সন্তানকে নিজের বুকের দুধ পান করাতে পারেননি। খেয়াল রাখতে হবে মায়েদেরকে যেন শিশুরা যেন কোনভাবেই মায়ের বুকের দুধ থেকে বঞ্চিত না হয়। শিশুকে বুকের দুধ না খাওয়ানোর একটা কারণ উল্লেখ করে থাকেন যে, তারা চাকরি করার কারণে শিশুকে বাসার কাজের লোকের কাছে রেখে চাকরি করেন। যার কারণে শিশুকে সঠিকভাবে বুকের দুধ খাওয়াতে পারছেন না। এটা একটা খোঁড়া যুক্তি। যেটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

একজন শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোটা সবটাই নির্ভর করে একজন মায়ের মনমানসিকতার ওপর। একজন মা যে কোন জায়গায় যে কোন ভাবেই শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন। মায়েরা যেখানে চাকরি করেন সেখানে মায়ের জন্য শিশুর ব্রেস্টফিডিং আলাদা জায়গা থাকে। মা যখন শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান তখন উভয়ের মধ্যে আন্তরিক সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। শিশুকে মায়ের দুধ না খাওয়ালে নিউমোনিয়াজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৫ গুণ, ডায়রিয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১১ গুণ, শিশুদের অপুষ্টি ও অন্যান্য কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৪ গুণ শঙ্কা বৃদ্ধি পায় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা।

বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের বিজ্ঞানীদের মতে, দুই বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ পান করা শিশুর সংখ্যা বেড়ে ৮৭.৩ শতাংশে পৌঁছেছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে থাকা শ্রীলঙ্কা এবং কিউবায় এর হার যথাক্রমে ৮৮ ও ৮৭.৫ শতাংশ। জন্মের ৬ মাস পর শিশুকে পারিবারিক খাবার থেকেই আলাদা করে (নরম ও গুঁড়া করে মাখিয়ে) শিশুকে দেয়া যায়।
পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, শিশু বয়স ৬ মাস পূর্ণ হওয়ার পর থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুকে মায়ের বুকের পাশাপাশি সঠিক পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। শিশুকে প্রতিদিন কমপক্ষে চার ধরনের খাবার খাওয়ানো উচিত। প্রাণিজ, ভিটামিন সমৃদ্ধ ফলমূল ও শাক-সবজি, দুগ্ধজাত, তেল ও চর্বি জাতীয়, মটরশুঁটি ও ডাল এবং শস্যদানা জাতীয় খাবার থাকা প্রয়োজন।

প্রাণিজ খাবারের মধ্যে ডিম, মাংস, কবুতর, কলিজা এবং মাছ থেকে দৈহিক ও মেধা বৃদ্ধির জন্য অত্যাবশ্যক শক্তি এবং ভিটামিন ও খনিজ উপাদান (আয়রন ও উচ্চ মানের আমিষ) পাওয়া যায়। শিশু ও মাকে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ খাবার মাছ, গাজর ও গাঢ় শাক-সবজি খাওয়ানো উচিত। আয়রনের ঘাটতি রক্ত স্বল্পতার একটি প্রধান কারণ। রক্ত স্বল্পতার ফলে শারীরিক, মানসিক এবং বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ বাধা পায়।

×