ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুরাইয়া বসছেন বিচারকের আসনে

ফারহানা ইয়াসমিন

প্রকাশিত: ২১:৪৮, ৬ আগস্ট ২০২২

সুরাইয়া বসছেন বিচারকের আসনে

সুরাইয়া

ধন্য জীবন তাহারি, যে জন নিজে বিচারিয়া নিজের তরে নীতি ও নিয়ম করি প্রণয়ন, আমরণ তাহা পালন করেসত্যেন্দ্রনাথ দত্তের এই উক্তিটি আমরণ পালন করার লক্ষ্যে যশোর জেলার অভয়নগর থানার কৃতী সন্তান হিসেবে সাফল্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন সুরাইয়া তিনি  এবারের ১৪তম বিজেএস এ সহকারী জজ (জুডিশিয়াল) পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেনসদ্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে অভয়নগরের ১ম নারী জজ হিসাবে তার অনুভূতি এবং জজ হওয়ার পিছনে দীর্ঘ পথচলার অভিজ্ঞতাগুলো সাক্ষাতকারের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী- ফারহানা ইয়াসমিন

 

আপনি অভয়নগর থানা থেকে প্রথম সুপারিশপ্রাপ্ত নারী জজআপনাকে নিয়ে আপনার পরিবার, আত্মীয়স্বজন এমনকি এলাকার মানুষের অনেক প্রত্যাশা রয়েছেতাদের উদ্দেশে আপনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাই

আলহামদুলিল্লাহআমি নিজের ও পরিবারের সবার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছিআমার এলাকার মানুষের মাঝে আমাকে নিয়ে যে উচ্ছ্বাস দেখেছি তা আমাকে আরও অনেক বেশি আনন্দিত করেছে এবং তাদের প্রতি আমার দ্বয়িত্ববোধ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে

শুনেছি, হাতেখড়ি থেকে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত আপনার পড়াশোনার ভিত্তি গড়ে উঠেছে গ্রামের মাদ্রাসা থেকেআপনি হয়ত জানেন, এখনও অধিকাংশ মানুষ মনে করেন মাদ্রাসায় পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থী আর জেনারেল লাইনে পড়ুয়া আরেকজন শিক্ষার্থীর লেবেল একই হয় নাএক্ষেত্রে আপনি মাদ্রাসা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার প্রতি মানুষের গোঁড়ামি ভেঙ্গে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেনএটা করা আপনার পক্ষে কতটা কঠিন ছিল? এবং কিভাবে এটি করতে সক্ষম হলেন ?

কিছু ভাবনা দিয়ে তো আর জীবনযাপন হয় না, তবে আমি নিজে এটা কখনও সম্মুখীন হইনি আমাকে কেউ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী বলে আলাদা করে দেখেননি আর সমাজের ইতিবাচক দিকগুলো আমাকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করে

লক্ষ্যবিহীন জীবন আর নোঙ্গরবিহীন নৌকা দুটোই অর্থহীন বিষয়লক্ষ্য ছাড়া মানুষের জীবন প্রদীপ অন্ধকারে মুড়ানোতাই তো, জীবনকে অর্থবহ করতে আপনিও বিচারক হওয়ার লক্ষ্য করেছিলেনকার অনুপ্রেরণা এবং উসাহে আইনে ভর্তি হয়ে বিচারক হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন?

আসলেই লক্ষ্য ছাড়া কাক্সিক্ষত গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব নাআলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাকে এমন একজন বড় ভাই দিয়েছেন যিনি আমাদের ভাই -বোনদের কা-ারিউনার অনুপ্রেরণাই আমাদের চলার পাথেয় ছিলআমি যখন মাদ্রাসায় পড়তাম তখন জানতাম না উচ্চশিক্ষার প্রকৃত অর্থতিনিই আমাকে ঢাবিতে ল পড়ে জজ হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার পাশ করার পর বেশ একটা দীর্ঘ বিরতির পরও আপনি আপনার স্বপ্ন পূরণ করেছেনএর মধ্যে আপনি একটি সন্তানের জননীও হয়েছেনএক্ষেত্রে সংসার-বাচ্চা এগুলো সামলিয়ে আপনার স্বপ্ন পূরণের যাত্রাটা কেমন ছিল আর কতটা মসৃণ ছিল?

আমার মেয়ে সালওয়া আমার জীবনের সেরা উপহারআমি ঢাবিতে পড়াকালীন ওর জন্ম হওয়াতে নিজের শারীরিক কারণে একাডেমিক একটা গ্যাপ পড়ে যায়তারপর বাচ্চাকে ভালভাবে সময় দেয়া এবং নিজেকে গুছিয়ে আবার পড়াশোনা শুরু করতে অনেকটা সময় লেগে যায়তবে এক্ষেত্রে আমার স্বামী, বাবা-মা,ভাইবোন আমার পাশে ছিলেন সবসময়তারা আমাকে বারবার সাহস দিয়েছেন, আমার জন্য দোয়া করেছেনআমি অনুরোধ করব এভাবে অন্য মেয়েদের পরিবার বিশেষভাবে বিয়ের পর স্বামী ও তার পরিবারের লোকেরা যেন মেয়েদের পাশে থাকে

জাজ হওয়ার প্রস্তুতি নেয়া কালে সব থেকে স্মরণীয় কিংবা কঠিন কোন পরিস্থিতি পার করছেন ? যেটি আপনাকে আরও বেশি   সাহসী করেছে জজ হওয়ার ক্ষেত্রেসেরকম কিছু অভিজ্ঞতা শুনতে চাই

বেশ লম্বা বিরতির পর থেকে ১৪তম জুডিসিয়ারি পর্যন্ত এই লম্বা সময়ে আমি কোচিং, গ্রুপ স্ট্যাডি সবই করেছিপাশাপাশি দুটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হিসেবে কাজে যোগদানও করেছিলামতবে ঘরে বাইরে যেখানেই আমি যাই করি না কেন আমার মেয়ে ছিল আমার সবচেয়ে বড় শক্তি ও অনুপ্রেরণা

সবেমাত্র জীবনের সমীকরণ থেকে একটি স্বপ্ন পূরণ করলেন এরপর আপনার পরবর্তী উদ্দেশ্য কি ?

প্রথমত এই পেশায় থেকে সততার সঙ্গে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চাইবৃহ পরিসরে এলাকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষ বিশেষ করে নারী এবং দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু করতে চাই

নিজের এলাকা এবং দেশের উন্নয়নে নিজের কাজের জায়গাগুলো কিভাবে সঠিক রাখবেন ?

উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমার মনে হয় খুব বেশি  একটা করা দরকার হয় না প্রত্যেকে সততার সঙ্গে নিজের কাজটা করলেই আমরা আমাদের পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ ও দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারি আমিও সেভাবেই একজন কন্যা-জায়া-জননী এবং পেশাজীবী মানুষ হতে চাই

সর্বোপরি নিজের কাজের প্রতি বেশি যতœশীল হয়ে কিভাবে আপনার প্রতি চেয়ে থাকা অভয়নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করবেন ?

হ্যাঁ, এলাকার সন্তান হিসাবে পুরো এলাকাবাসীর প্রতি নিজের পারিবারিক বন্ধন অনুভব করি, সে জায়গা থেকে আমি সর্বদা আমার পরিবারের সদস্যদের মতো তাদের পাশে থাকব

×