ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

বর্ষাকালে চুলের যত্ন

-

প্রকাশিত: ২১:০৪, ২০ জুলাই ২০২৫

বর্ষাকালে চুলের যত্ন

মডেল : ফারহানা জাহান

বর্ষা প্রকৃতির এক অনন্য উপহার। তপ্ত গ্রীষ্মের পর এই ঋতু যেমন নিয়ে আসে ঠান্ডা প্রশান্তি, তেমনি আমাদের ত্বক ও চুলের জন্য আনে বাড়তি চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে চুলের স্বাভাবিক গঠন, উজ্জ্বলতা ও স্বাস্থ্য বজায় রাখা বর্ষায় হয়ে ওঠে বেশ কঠিন। অতিরিক্ত আর্দ্রতা, ধুলোবালি, বৃষ্টির পানি এবং ঘাম এই চারটি জিনিস চুলের শত্রুতে পরিণত হয় এ সময়ে।
তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। সঠিক যত্নে, নিয়মিত রুটিনে এবং কিছু কার্যকরী ঘরোয়া উপায়ে আপনি সহজেই পেতে পারেন সিল্কি, শাইনি ও হেলদি হেয়ার। চলুন দেখে নেওয়া যাক বর্ষাকালে চুলের সমস্যাগুলো কী, তার প্রতিকার এবং কীভাবে এই মৌসুমেও নিজেকে রাখতে পারবেন স্টাইলিশ ও আত্মবিশ্বাসী।
বর্ষায় চুলের সাধারণ সমস্যা ও কারণ
* আর্দ্রতার কারণে চুল পড়া বাড়ে, স্ক্যাল্প বেশি ঘামে, ফলে হেয়ার ফলিকল দুর্বল হয়ে চুল পড়ে যায়।
*রুক্ষতা ও জট হিউমিড আবহাওয়ায় চুলের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ব্যাহত হয়, চুল হয়ে পড়ে রুক্ষ ও জট বাঁধা।
*ফ্রিজি ও ভলিউমহীন চুল বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্যে ‘পাফি’ বা ‘চিপচিপে’ করে তোলে, স্টাইলও স্থায়ী হয় না।
*অপরিষ্কার পানি ও ঘাম থেকে স্ক্যাল্পে ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে, যার ফলে চুলকানি, খুশকি ইত্যাদি দেখা দেয়।
*অপরিষ্কার স্ক্যাল্প এবং সঠিকভাবে চুল না শুকানোয় গন্ধ ও স্ক্যাল্পে সমস্যা বৃদ্ধি পায়।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
চুলে বৃষ্টির পানি লাগলে দ্রুত শ্যাম্পু করে ফেলুন। নোংরা পানিতে থাকা রাসায়নিক উপাদান চুলের পিএইচ ব্যালান্স নষ্ট করে। সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার হালকা, সালফেট-মুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোয়া জরুরি।
কন্ডিশনার ব্যবহার বাধ্যতামূলক
বর্ষায় হিউমিডিটি চুলকে ফ্রিজি করে তোলে। প্রতিবার শ্যাম্পুর পর ভালো মানের কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এটি চুলের ময়েশ্চার লক করে রাখে এবং জট কমায়।
হালকা তেল ম্যাসাজ
তেল ম্যাসাজ রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুলের গোড়া মজবুত করে। তবে বর্ষাকালে ভারী তেল নয়, নারিকেল, অলিভ বা আর্গান অয়েল হালকা গরম করে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন। রাতে তেল দিয়ে ঘুমানো বর্ষায় এড়িয়ে চলুন।
মাসে ২ বার ঘরোয়া হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন। যেমন মেথি বাটা ও টক দই একসঙ্গে মিলিয়ে দিলে খুশকি ও চুল পড়া কমে। অ্যালোভেরা জেল ও নারকেল তেলের মিশ্রণ দিলে চুলে প্রাকৃতিক চকচক ভাব আনে। আমলকী গুঁড়া ও লেবুর রস স্ক্যাল্প পরিষ্কার করে এবং ফাঙ্গাল প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
চুল বাঁধার কৌশল
খোলা চুল বর্ষায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাইরে বের হওয়ার সময় চুল হালকা করে বাঁধুন। চিকন বেণি, ঢিলা পনি টেল বা হেয়ার বান চমৎকার অপশন। কখনোই ভেজা চুল বেঁধে রাখবেন না।
সুরক্ষিত স্টাইলিং
বর্ষাকালে হেয়ার স্টাইল করতে গেলে চুলের স্বাস্থ্য মাথায় রাখতে হবে। হিট স্টাইলিং কমিয়ে ফেলে বরং চেষ্টা করুন ওয়াটার-বেজড হেয়ার সিরাম ব্যবহার করার। হিট প্রোটেক্ট্যান্ট ছাড়া স্ট্রেইটনার ব্যবহার করবেন না। 
বর্ষার জন্য উপযুক্ত হেয়ার ক্লিপ, ব্যান্ড ও রাবার ব্যান্ড বেছে নিন। বর্ষাকালে চুল কাটা ছোট ও মিডিয়াম হলে ভালো হয়, কারণ শুকানো ও ম্যানেজ করা সহজ হয়।
খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা
চুলের সৌন্দর্য বাইরের চেয়ে অনেক বেশি নির্ভর করে আপনার খাদ্যাভাসের ওপর। এজন্য ডায়েটে থাকা উচিত প্রচুর পানি এবং আয়রন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার (ডিম, মুসুর ডাল, মাছ)। 
বাদাম ও বীজ (আলমন্ড, চিয়া, ফ্ল্যাক্স সিড)। টাটকা শাকসবজি ও ফল বিশেষ করে আমলকী, পেঁপে, কলা।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজের যতœ নেওয়া হলো ফ্যাশন সচেতনতাবোধ। বর্ষার মেঘলা দিনগুলোতে চুল যেন আপনার আত্মবিশ্বাস কমিয়ে না দেয়। বরং আপনি হয়ে উঠুন আরও উজ্জ্বল ও স্টাইলিশ। 
নিজের চুলের যতœ নেওয়া শুধু স্টাইল স্টেটমেন্ট নয়, এটা আত্মপ্রেমের প্রকাশ। তাইতো কবি জীবনানন্দ দাস সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে প্রথমেই লিখেছেন-
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য।

ফ্যাশন প্রতিবেদক

×