
ছবি: সংগৃহীত
সমুদ্রতল বা তীরবর্তী মাটির গভীরে ভূমিকম্প অথবা টেকটোনিক প্লেটের আকস্মিক উত্থান-পতনের ফলে সমুদ্রের পানিতে কম্পন তৈরি হয়। এতে সৃষ্ট হয় বিশাল আকারের ঢেউ, যা যখন প্রবল বেগে ধাবিত হয়, তখন তাকে সুনামি বলা হয়।
এবার রাশিয়ায় এমন সুনামির আশঙ্কায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দেশটির প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার পরপরই এই সতর্কতা জারি করা হয়। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭.৪। মূলত পরপর তিনটি শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়।
সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে (USGS) বলেছে, এর মধ্যে একটি ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭।
USGS-এর তথ্যমতে, কামচাটকার পেত্রোপাভলোভস্ক-কামচাতস্কি শহরের উপকূলবর্তী একই এলাকায় মাত্র ৩২ মিনিটের ব্যবধানে তিনটি বড় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর মধ্যে দুটি ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৬.৭ এবং একটি ছিল ৭.৪। এরও আগে একই এলাকায় আরও একটি ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়।
পেত্রোপাভলোভস্ক-কামচাতস্কি হচ্ছে কামচাটকা অঞ্চলের প্রধান বন্দর ও প্রশাসনিক কেন্দ্র। শহরটিতে প্রায় ১ লাখ ৬৩ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস।
সাত মাত্রার বেশি শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে সাধারণত সমুদ্রের নিচে টেকটোনিক প্লেট সরে গিয়ে সুনামির আশঙ্কা থাকে। যদিও এখন পর্যন্ত বড় কোনো সুনামির খবর পাওয়া যায়নি, তবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে উপকূলবর্তী এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের সজাগ থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রশান্ত মহাসাগরের ভূকম্পন-সক্রিয় অঞ্চল রিং অব ফায়ার-এ অবস্থিত হওয়ায় এ ধরনের ভূমিকম্প এ অঞ্চলে প্রায়ই ঘটে থাকে। তবে একই স্থানে এত অল্প সময়ের ব্যবধানে তিনটি উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প বিরল ঘটনা।
রাশিয়ার প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ স্থানীয় পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং জরুরি প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। উপকূলবর্তী শহরটি সুনামির সম্ভাব্য আঘাত নিয়ে চিন্তিত স্থানীয় প্রশাসন।
এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণহানি বা বড় ধরনের অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি। ভূকম্পন বিশ্লেষক ও আবহাওয়া দপ্তরের কর্মকর্তারা সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। সাগরের পানির উচ্চতা বা প্রবাহে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দিলে সুনামি সতর্কতা জোরদার করা হবে।
উল্লেখ্য, সুনামি শব্দটি এসেছে জাপানি ভাষা থেকে। এর অর্থ হারবার ওয়েভ বা পোতাশ্রয়ের ঢেউ। এটিকে বিশাল আকারের শক্তিশালী জলচ্ছ্বাসও বলা হয়। সমুদ্রতলের আগ্নেয়গিরি থেকে হঠাৎ অগ্ন্যুৎপাতের কারণেও সুনামি সৃষ্টি হতে পারে।
যদিও সুনামি পানিতে তৈরি হয়, তবু প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই এর প্রধান কারণ হয় সমুদ্রের তলদেশে ভূমিকম্প। উপকূলের কাছে সমুদ্রের পানির গভীরতা কম থাকায় ঢেউগুলো যখন সেখানে পৌঁছে, তখন গতি কিছুটা কমলেও উচ্চতা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়ে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
শেখ ফরিদ