
ছবি: সংগৃহীত।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণ শুরু করেছে চীন। প্রকল্পটি ব্রহ্মপুত্র নদীর উজানে, ভারতের অরুণাচল সীমান্তঘেঁষা তিব্বতের নিয়েনচিং শহরের কাছে। এর প্রভাব ভারত ও বাংলাদেশের পানিনিরাপত্তা ও পরিবেশের ওপর মারাত্মক হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
চীনা প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াংয়ের উপস্থিতিতে ১৯ জুলাই এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ও এএফপির বরাতে জানা যায়, ১.২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ১৬৭.৮ বিলিয়ন ডলার) ব্যয়ে নির্মিতব্য এই বাঁধ পাঁচটি পৃথক হাইড্রো স্টেশন নিয়ে গঠিত। এটি সম্পন্ন হলে চীনের 'থ্রি জর্জেস ড্যাম'-কেও ছাড়িয়ে যাবে—যা বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
চীন দাবি করছে, এই বাঁধ প্রকল্প মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদন ও তিব্বতের উন্নয়নের জন্য এবং তারা কার্বন নিরপেক্ষতার লক্ষ্য পূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু বিশ্লেষকরা এটিকে কেবল পরিবেশবান্ধব প্রকল্প মনে করছেন না, বরং দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের জল-ভিত্তিক কৌশলগত আধিপত্য বিস্তারের অংশ হিসেবে দেখছেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা চীনকে অনুরোধ করেছে, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার ভাটির দেশগুলোর স্বার্থ যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ভারতের গণমাধ্যমগুলোতে দাবি করা হয়েছে, এই বাঁধ প্রকল্প ভাটির দিকে পানিপ্রবাহে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে—যা পরিবেশ, কৃষি ও জনজীবনে বিপর্যয় নামিয়ে আনতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য এই বাঁধ প্রকল্প আরও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদ তিস্তা ও যমুনার মাধ্যমে পদ্মায় মিলিত হয়ে দেশের পানিপ্রবাহ, কৃষি, মাছ, জীববৈচিত্র্য এবং খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শুষ্ক মৌসুমে যদি পানি আটকে রাখা হয়, তাহলে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ কমে যেতে পারে, আবার বর্ষায় অতিরিক্ত পানি ছাড়া হলে ভয়াবহ বন্যার ঝুঁকি বাড়বে।
পরিবেশ ও পানিবিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের একতরফা প্রকল্পের ফলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে খরা ও বন্যা দুটো ঝুঁকিই বাড়বে, এবং দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য উৎপাদন ও জনজীবনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
চীনের অতীত অভিজ্ঞতা এবং নদী ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতার অভাবের কারণে বিশ্লেষকরা এই প্রকল্প নিয়ে দ্বিধান্বিত। চীন যদিও বলছে তারা প্রতিবেশীদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখবে, তবুও বাস্তবে অনেক সময় পানি সংক্রান্ত প্রকল্পে তথ্য আদান-প্রদান সীমিতই থাকে।
এই বাঁধ কি শুধুই বিদ্যুৎ প্রকল্প, নাকি দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের এক নতুন জলকূটনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যম? বাংলাদেশের মতো নদীনির্ভর দেশের জন্য এটি নিছক একটি উন্নয়ন প্রকল্প না হয়ে উঠতে পারে এক গভীর রাজনৈতিক ও পরিবেশগত সংকটের ইঙ্গিত।
নুসরাত