ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

একঘরে ইসরাইল, অস্ত্র দেবেনা ১২ দেশ

প্রকাশিত: ২০:১৭, ২০ জুলাই ২০২৫

একঘরে ইসরাইল, অস্ত্র দেবেনা ১২ দেশ

ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েল যতই নিজেকে পশ্চিমাদের বন্ধু ভাবুক না কেন, ফিলিস্তিনে বর্বরতার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটির ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ কার্যক্রমের কারণে আন্তর্জাতিক জনমত ধীরে ধীরে তাদের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে।

ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডে ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। গেল সপ্তাহেই ইসরায়েলি মন্ত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কয়েকটি দেশ। যৌথ বিবৃতি দিয়ে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং কানাডা।

শুধু তাই নয়, এই সপ্তাহের শুরুতেই গ্লোবাল সাউথভুক্ত দেশের সংগঠন দা হেগ গ্রুপ ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। গাজায় একটি ক্যাথলিক গির্জায় ইসরায়েলি হামলার পর দেশটির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন ধর্মীয় নেতারাও। রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ মানুষের প্রতিবাদও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক জোট ‘দা হেগ গ্রুপ’ আন্তর্জাতিক আইন রক্ষা এবং ফিলিস্তিনিদের পাশে থাকার লক্ষ্যে সমন্বিত কূটনৈতিক ও আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই গ্রুপে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, বলিভিয়া, কলম্বিয়া, কিউবা, হন্ডুরাস, মালয়েশিয়া, নামিবিয়া ও সেনেগাল। সম্প্রতি কলম্বিয়ার বগোটায় ইসরায়েলি বর্বরতা নিয়ে আয়োজিত এক বৈঠকে অংশ নেয় চীন, স্পেন, কাতারসহ প্রায় ৩০টি দেশ।

দুই দিনের সেই সম্মেলন শেষে ১২টি দেশ ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে অন্তত ছয়টি পদক্ষেপে একমত হয়। এর মধ্যে রয়েছে:

ইসরায়েলি অস্ত্র সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা

অস্ত্রবাহী জাহাজ চলাচলে বাধা প্রদান

দখলদারী কার্যক্রমে উপকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সরকারি চুক্তি পুনর্বিবেচনা

এদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে স্লোভেনিয়া গত বুধবার ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভীর এবং চরমপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচকে নিজ ভূখণ্ডে প্রবেশে বাধা দিয়েছে। এর আগে জুনে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং নরওয়ে তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কারণ, তারা গাজায় অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনের পক্ষে বড় ভূমিকা রেখেছেন।

এছাড়া ইসরায়েলের গাজা অভিযান ও মানবিক বিপর্যয়ের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং কানাডা। হামলা বন্ধ না হলে চোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছে দেশগুলো। এরপর যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য আলোচনায় বিরতি ঘোষণা করে।

অন্যদিকে, তুরস্ক ঘোষণা দিয়েছে, গাজায় মানবিক পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ থাকবে। এমনকি গাজার গির্জায় হামলার ঘটনায় মিত্রদেশ যুক্তরাষ্ট্র-ও ইসরায়েলকে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছে।

পশ্চিম ইউরোপের জরিপকারী সংস্থা ইউগাভের জরিপ অনুযায়ী, ইসরায়েলের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নজিরবিহীনভাবে কমে গেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর জরিপেও দেখা গেছে, বর্তমানে মাত্র ২৩ শতাংশ মানুষ মনে করেন গাজায় ইসরায়েলের পদক্ষেপ যৌক্তিক। অথচ ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৫০ শতাংশ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যদিও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র একচেটিয়াভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন করে যাচ্ছে, কিন্তু সময়ের সাথে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একঘরে হয়ে পড়ছে ইসরায়েল। আর তখন অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা সামাল দেওয়া তাদের জন্য আরও কঠিন হয়ে উঠবে।


শেখ ফরিদ 

×