ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

কেন বিয়ে এড়িয়ে গিয়েছিলেন রানী প্রথম এলিজাবেথ?

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:১৩, ২০ জুলাই ২০২৫

কেন বিয়ে এড়িয়ে গিয়েছিলেন রানী প্রথম এলিজাবেথ?

ছবি: সংগৃহীত

১৭শ শতকের ইংল্যান্ডে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন রানী এলিজাবেথ প্রথম, যিনি ইতিহাসে ‘ভার্জিন কুইন’ নামেই বেশি পরিচিত। তিনি ইংল্যান্ডের একমাত্র রানী যিনি সারা জীবন বিয়ে করেননি। কিন্তু কেন? এর পেছনে কি শুধুই ব্যক্তিগত পছন্দ, নাকি এর মধ্যে ছিল রাজনীতি, ক্ষমতা রক্ষা ও নারীর আত্মরক্ষার অদৃশ্য লড়াই?

রানী এলিজাবেথ সমগ্র ইংল্যান্ডের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। একা শাসন করার বিষয়টি ১৬শ ও ১৭শ শতাব্দীর পুরুষশাসিত সমাজে ছিল অভাবনীয়। সংসদ এবং উপদেষ্টারা বারবার তাঁকে বিয়ের জন্য চাপ দেন। কারণ তাঁদের বিশ্বাস ছিল, এক নারী শাসক রাজনীতিতে দুর্বল হবেন এবং ইংল্যান্ডের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকার অনিশ্চয়তায় পড়বে।

তবে এলিজাবেথ জানতেন, বিয়ে করলে হয়তো রাজ্যক্ষমতা হাতছাড়া হতে পারে। একজন স্বামী বিশেষত কোনো বিদেশি রাজপুত্র বা ইংরেজ অভিজাত রাজনীতির ভার নিতে চাইতেন, যা তাঁর একক শাসনের পথে বাধা হতো। তাই তিনি একদিকে যেমন রোমান্টিক সম্পর্কে আবদ্ধ হতে পেরেছিলেন, তেমনি সচেতনভাবে কখনো বিয়ের বন্ধনে জড়াননি।

রবার্ট ডাডলি ছিলেন রানি এলিজাবেথ প্রথমের শৈশবের বন্ধু, ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক মিত্র। তিনি ইংল্যান্ডের এক প্রভাবশালী অভিজাত পরিবার থেকে এসেছিলেন এবং এলিজাবেথ সিংহাসনে আরোহণের পর থেকেই তার সবচেয়ে কাছের লোকদের একজন হয়ে ওঠেন। ডাডলির স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যুর পর অনেকেই ধারণা করেছিলেন, রানী তাকে বিয়ে করবেন। তবে তা কখনো হয়নি। রাজদরবার ও ইউরোপের রাজনীতি এই সম্পর্ককে ঘিরে নানা গুঞ্জনে মুখর ছিল। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, ডাডলিকে রানীর ভালোবাসার মানুষ হিসেবে দেখা যায়, কিন্তু রাজকীয় দায়িত্ব, কেলেঙ্কারির সম্ভাবনা ও রাজনৈতিক ভারসাম্যের কারণে এলিজাবেথ কখনো তাকে বিয়ে করেননি। তবুও ডাডলি আজীবন রানীর প্রতি অনুগত ছিলেন এবং তাঁর শেষ চিঠিটিও রানী মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিজের কাছে সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন।

১৫৭৫ সালের এক গ্রীষ্মের সন্ধ্যায়, ৪১ বছর বয়সী রানী এলিজাবেথ পৌঁছান কেনিলওয়ার্থ দুর্গে। এটি ছিল তার দীর্ঘতম ও শেষ সফর। এই দুর্গটি তিনি দিয়েছিলেন তার প্রিয়জন ও শৈশবের বন্ধু রবার্ট ডাডলিকে। ডাডলি এই সফর উপলক্ষে দুর্গে ব্যয়বহুল সংস্কার করেন।

এই উৎসব ছিল একপ্রকার “বিয়ের প্রস্তাব”। ইতিহাসবিদ এলিজাবেথ গোল্ডরিং বলেন, এটি ছিল ডাডলির শেষ চেষ্টা রানীর মন জয় করার জন্য।

তবে পরিকল্পনায় ছন্দপতন ঘটে ২০ জুলাই। ঐদিনের মুখ্য আকর্ষণ ‘মাস্ক’ নাটকটি বাতিল হয়ে যায়। সরকারি ভাষ্যে ‘খারাপ আবহাওয়া’ দায়ী করা হলেও গুঞ্জন, নাটকের বিষয়বস্তু রানীর চক্ষুশূল হয়। এতে ছিল কুমারীত্বের দেবী ডায়ানা তাঁর নির্দোষ সাথী ‘জাবেত্তা’কে খুঁজছেন—যা রানীর প্রতিচ্ছবি। নাটকের শেষে রানীকে পরামর্শ দেওয়া হয়, তিনি যেন বিবাহ করেন। রানী হয়তো নিজেকে অপমানিত মনে করেন।

রানীর অবিবাহিত জীবনের নেপথ্যে ছিল তাঁর রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও নারীর আত্মসম্মান রক্ষা। তাঁর বাবা হেনরি অষ্টম তাঁর মা অ্যান বোলিনকে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে শিরশ্ছেদ করেন। রানী তখন মাত্র তিন বছরের। তিনি বলেছিলেন, "আমি হব শুধুই একজন নারী কর্ত্রী, আমার কোনো প্রভু থাকবে না।"

তিনি ছিলেন পাঁচটি ভাষায় পারদর্শী, ইতিহাস ও রেটোরিক্সে শিক্ষিত। তার রাজত্বে ইংল্যান্ডে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে। সংসদ বহুবার তাঁকে বিয়ে করতে বললেও তিনি বলেন, "আমার স্বামী হচ্ছে ইংল্যান্ড।" 

মুমু ২

×