
ছবি: সংগৃহীত
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন বিদেশে অর্থসহায়তা প্রদান বন্ধ করায় বিশ্বজুড়ে পানি ও স্যানিটেশন প্রকল্পগুলোর একটি বড় অংশ থমকে গেছে। এ অবস্থায় কোটি কোটি মানুষ পড়েছেন স্বাস্থ্যঝুঁকি ও মানবিক সংকটে।
রয়টার্সের অনুসন্ধানে জানা গেছে, অন্তত ১৬টি দেশে ২১টি পানি ও স্যানিটেশন প্রকল্প ট্রাম্প প্রশাসনের সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ার ফলে মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে। খনন বা নির্মাণ কাজ অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে; কোথাও কোথাও নির্মাণসামগ্রী ছড়িয়ে রয়েছে অনিরাপদভাবে, আর শ্রমিকরা কাজ হারিয়ে জীবিকার সংকটে পড়েছেন।
উদাহরণস্বরূপ, মালির একটি স্কুল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য নির্মাণাধীন পানিকল বহুদিন ধরে পরিত্যক্ত পড়ে আছে। নেপালে ১০০টির বেশি পানি সরবরাহ প্রকল্প বন্ধ হয়ে আছে, যেখানে ৬,৫০০ বস্তা সিমেন্ট অপ্রয়োজনীয়ভাবে গুদামে আটকে রয়েছে। লেবাননে সৌরবিদ্যুৎচালিত পানি সরবরাহ প্রকল্প বাতিল হওয়ায় অন্তত ৭০ জন কর্মহীন হয়েছেন।
কেনিয়ার তাইতা টাভেটা অঞ্চলে একটি অসমাপ্ত খাল এখন বন্যার হুমকি তৈরি করছে। ৭৪ বছর বয়সী কৃষক মেরি কিবাচিয়া জানান, “যে খাল আমাকে সাহায্য করার কথা ছিল, এখন সেটাই বন্যার কারণ হবে।” খালটির মাত্র ১৫% কাজ শেষ হয়েছিল, এখন এটি খোলা ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। স্থানীয় নেতারা জানান, এটি নিরাপদ করতে অন্তত ২,০০০ ডলার দরকার, যা সেই অঞ্চলের গড় বার্ষিক আয়ের দ্বিগুণ।
USAID বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে আফ্রিকা, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে, পাশাপাশি কোটি মানুষের জীবন দুর্ভোগে পড়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি অভ্যন্তরীণ নথিতে জানানো হয়েছে, এই অসমাপ্ত প্রকল্পগুলো কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তিই নয়, বরং বৈশ্বিক নিরাপত্তাও হুমকির মুখে ফেলছে।
পূর্ব কঙ্গোতে USAID’র একটি পানিকিওস্ক এখন শিশুদের খেলার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক মা জানিয়েছেন, “আমার ছেলে পানি আনতে গিয়ে আর বাড়ি ফিরে আসেনি।”
ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালের গবেষণা অনুযায়ী, এই সাহায্য বাতিলের ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে অতিরিক্ত ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে। Mercy Corps-এর সিইও মন্তব্য করেন, “এটা শুধু সাহায্য বন্ধ নয়; এটি মানব মর্যাদা, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির পতন।”
যদিও জর্ডানের একটি $৬ বিলিয়ন ডেসালিনেশন প্রকল্প ফের চালু হয়েছে, তবে ইথিওপিয়া, কঙ্গো, তানজানিয়া, আফগানিস্তানসহ অধিকাংশ দেশে পানি প্রকল্পগুলোর ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত।
মুমু ২