
ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরানে সামরিক হামলা চালাচ্ছিল, তখন তেহরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই মিত্র চীন এবং রাশিয়া নিজেদের নীরব অবস্থান রেখেছিল। সম্প্রতি চীনের তিয়ানজিন শহরে ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি মন্তব্য করেন যে, আঞ্চলিক জোটগুলো উচিত ছিল মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যৌথভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো। তিনি আরও জানান যে, ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলি আক্রমণের শিকার হলে, তার পুরনো মিত্রদের উচিত ছিল পাল্টা জবাব দেয়া। যদিও তেহরান এমন আশায় ছিল, বাস্তবে সেরকম কিছু ঘটেনি।
চীন ও রাশিয়া ইরানের প্রতি তাদের বন্ধুত্বের গভীরতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এই প্রশ্নটি উঠে এসেছে যে, ইরান কি মস্কো এবং বেইজিং এর সাহায্য পাবে? ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ থাকলেও চীন সরাসরি ইরানের পক্ষ নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। চীন কৌশলে একটি নিষ্ক্রিয় অবস্থান বজায় রেখেছে, এমনকি সাম্প্রতিক ব্রিক্স সম্মেলনেও ইরানের বিরুদ্ধে হামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরাইলের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চীন স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, তারা অন্যের সংঘাতে নিজেকে জড়াতে চায় না। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, ইরান চীনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারী, এবং চীন ইরান থেকে প্রায় 90 শতাংশ অপরিশোধিত তেল কেনে। এই সম্পর্কের মাধ্যমে, 2024 সালে ইরান প্রায় 40 বিলিয়ন ডলার মুনাফা অর্জন করেছে। তবে, চীন এবং ইরান এর মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক সামরিক চুক্তি নেই। রাশিয়াকেও চীন সরাসরি বড় অস্ত্র সরবরাহ করেনি; তবে, জ্বালানি এবং রিনিউয়েবল এনার্জি সরবরাহের মাধ্যমে মস্কোর সামরিক শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান যতই চীনের দিকে ঝুঁকুক না কেন, বেইজিং এর মূল লক্ষ্য হলো মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। চীন, রাশিয়া, ইরান, এবং উত্তর কোরিয়ার মধ্যে কোনো সামরিক জোট নেই, এবং পশ্চিমা বিরোধী অসন্তোষের ভিত্তিতে শক্তিশালী কোনো জোট গঠন সম্ভব নয়। ফলে, ভবিষ্যতে ইরানকে একাই নিজেদের লড়াইয়ে জড়াতে হবে।
চীন আন্তর্জাতিক মহলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হুমকি এবং দখলদারীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে কথা বললেও, সরাসরি ইরানের পক্ষে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী নয়। অন্যদিকে, রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনে যুদ্ধরত থাকায়, ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো সরাসরি সংঘাতে জড়াতে চায় না। সবদিক বিবেচনায়, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, আগামীতে ইরানকে একাই লড়তে হবে, এবং চীন বা রাশিয়া তেহরানের পক্ষে সরাসরি কোনো পদক্ষেপ নেবে না।
রাজু