ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

ইউক্রেন সরকারে বড় রদবদল: নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিলেন জেলেনস্কি

প্রকাশিত: ১৮:৫০, ১৯ জুলাই ২০২৫

ইউক্রেন সরকারে বড় রদবদল: নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিলেন জেলেনস্কি

ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের তিন বছর পর ইউক্রেন সরকারে এল বড় ধরনের পরিবর্তন। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নতুন প্রধানমন্ত্রীসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন এনেছেন। এই রদবদলকে যুদ্ধকালীন প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা।

৩৯ বছর বয়সী ইউলিয়া সিভিরিদেঙ্কো ইউক্রেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিহালের স্থলাভিষিক্ত হলেন। গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) পার্লামেন্টের অনুমোদনের পর সিভিরিদেঙ্কো আনুষ্ঠানিকভাবে এ দায়িত্বে আসীন হন। উল্লেখ্য, শ্যামিহাল ২০২০ সাল থেকে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

এর আগে সিভিরিদেঙ্কো উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেই সময়েই তাঁর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে হওয়া গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ চুক্তির অন্যতম নেপথ্য কারিগর ছিলেন তিনি। বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তিই ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে শীতল সম্পর্ক গলাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

নতুন প্রধানমন্ত্রী সিভিরিদেঙ্কো এক বার্তায় জানিয়েছেন, তাঁর অগ্রাধিকার থাকবে দেশীয় অস্ত্র উৎপাদন বৃদ্ধি, সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করা এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে সহায়তা করা।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার এমন একটি ইউক্রেন গড়ার পথে এগোচ্ছে, যা নিজস্ব সামরিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভিত্তির ওপর দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে। যুদ্ধের কারণে আমাদের সময় নেই—দ্রুত ও কার্যকরভাবে কাজ করাই এখন মূল লক্ষ্য।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিহাল এখন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। এই মন্ত্রণালয় সম্প্রতি একাধিক দুর্নীতির অভিযোগের মুখোমুখি হয়, ফলে সেখানে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আশা তৈরি হয়েছে।

অন্যদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রিয়ি সিবিহা তাঁর পদেই বহাল থাকছেন। তবে আইনমন্ত্রী ওলহা স্তেফানিশিনাকে যুক্তরাষ্ট্রে পরবর্তী ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তাঁর নিয়োগ এখন ওয়াশিংটনের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়। স্তেফানিশিনা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন এবং খনিজ সম্পদ চুক্তিতেও সরাসরি যুক্ত ছিলেন।

বর্তমান রাষ্ট্রদূত ওক্সানা মার্কারোভা সরে দাঁড়াচ্ছেন। তাঁর প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের অসন্তুষ্টির খবর প্রকাশ পেয়েছিল, কারণ তিনি মূলত বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতেন।

সম্প্রতি কয়েকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভকেও যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠানো হতে পারে। তবে বিরোধী দলের সংসদ সদস্য ইয়ারোস্লাভ ঝেলেজনিয়াক দাবি করেন, ওয়াশিংটন উমেরভের মনোনয়ন অনুমোদন করেনি।

এছাড়াও নতুন মন্ত্রিসভায় অর্থনীতি, কৃষি, পরিবেশ ও ইউরোপীয় সংযুক্তিকরণবিষয়ক বিভিন্ন দায়িত্ব পেয়েছেন ওলেক্সি সোবোলেভ ও তারাস কাচকা।

তবে বিরোধী দল ও সমালোচকরা বলছেন, এই রদবদলে মন্ত্রিসভায় কিছু নতুন মুখ আসলেও বেশিরভাগই আগের সরকারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাদের মতে, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি মূলত নিজের ঘনিষ্ঠ ও অনুগতদের দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো পূরণ করে তাঁর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ আরও দৃঢ় করছেন।

 

সূত্র: আল জাজিরা।

রাকিব

×