
ছবি: সংগৃহীত
ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়া ইয়েমেনে এক নাগরিককে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হলেও আপাতত তার সেই সাজা স্থগিত রেখেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। তবে নিহত ইয়েমেনি নাগরিক তালাল আব্দো মাহদির পরিবার স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, তারা কেবলমাত্র ইসলামি শরিয়া আইনের ‘কিসাস’ অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডই গ্রহণ করবে। অন্য কোনো প্রকার সমঝোতা বা শাস্তি তারা মানবে না।
সম্প্রতি বিবিসি আরবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাহদির ভাই আব্দেলফাতাহ্ মাহদি বলেন, "আমাদের দাবি একটাই—আল্লাহ্ প্রদত্ত আইন ‘কিসাস’ কার্যকর করতে হবে। কোনো ক্ষতিপূরণ বা মীমাংসা নয়।" তিনি জানান, ‘ব্লাড মানি’র প্রস্তাব হিসেবে প্রিয়া পরিবার ১০ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ জমা করলেও তারা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
২০১৭ সালে ইয়েমেনে টুকরো টুকরো অবস্থায় তালাল মাহদির মরদেহ উদ্ধার হওয়ার পর ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে, যা ২০২৩ সালে দেশটির সুপ্রিম কোর্টেও বহাল থাকে। ইয়েমেনের হুথি প্রশাসনের অনুমোদন অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কথা ছিল চলতি সপ্তাহে, তবে তা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।
আব্দেলফাতাহ মাহদি অভিযোগ করেন, ভারতীয় গণমাধ্যমে বিষয়টি বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। তার দাবি, "প্রিয়া পরিবার এবং ভারতীয় সংবাদমাধ্যম যেভাবে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডকে পরিস্থিতির শিকার হিসেবে তুলে ধরছে, তা জনমত প্রভাবিত করার কৌশল ছাড়া কিছু নয়।"
তিনি আরও বলেন, “যে কোনো বিবাদ বা বিরোধই একজন মানুষকে খুন করার বৈধতা দিতে পারে না। তালালকে শুধু হত্যা করাই হয়নি, তার দেহ বিকৃত করে পানির ট্যাংকে লুকানো হয়েছিল। এটি একটি ঘৃণ্য অপরাধ।”
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ইয়েমেনের হুথি প্রশাসন, সৌদি আরব, ইরানসহ কয়েকটি আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “এই সংবেদনশীল ঘটনায় সরকার প্রিয়ার পরিবারকে আইনি সহায়তা দিয়েছে, কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে, এবং সময়ক্ষেপণেরও চেষ্টা চালানো হয়েছে।”
ইসলামি শরিয়া আইনে ‘কিসাস’ হলো অপরাধের সমান শাস্তি। প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ—এই নীতির ভিত্তিতে দণ্ড কার্যকর হয়। ইয়েমেনে শরিয়া আইনের প্রাধান্য থাকায় আদালত এই নীতিকে অনুসরণ করে।
ইসলামি চিন্তাবিদদের মতে, ‘কিসাস’ কার্যকর না করতে চাইলে একমাত্র নিহতের পরিবারই ক্ষমা করতে পারে। তবে মাহদি পরিবার বারবার বলেছে, তারা কোনোভাবেই ‘কিসাস’ ছাড়া কিছু মানবে না।
নিমিশা প্রিয়ার পরিবার দাবি করছে, মাহদি তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন, এমনকি পাসপোর্ট আটকে রেখে বন্দুকের ভয়ও দেখান। তারা বলছে, প্রিয়ার উদ্দেশ্য ছিল শুধু পাসপোর্ট উদ্ধার করা, মাহদিকে হত্যা নয়। ঘুমের ওষুধের অতিরিক্ত ডোজ দিয়ে মাহদিকে অচেতন করার চেষ্টা করায় তার মৃত্যু হয় বলে দাবি তাদের।
নিমিশার মায়ের নেতৃত্বে একটি প্রচার ও তহবিল সংগ্রহ কমিটি গঠন করা হয়েছে—‘সেইভ নিমিশা প্রিয়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন কাউন্সিল’। এই গ্রুপ আন্তর্জাতিক মহলে কূটনৈতিক ও মানবিক ভিত্তিতে নিমিশাকে বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
যদিও নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড আপাতত স্থগিত, তবে মাহদি পরিবারের অনমনীয় অবস্থান এবং ইয়েমেনের কিসাসভিত্তিক বিচারব্যবস্থার কারণে তার জীবন এখনও চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছে। ভারত সরকারের জন্যও এটি কূটনৈতিক ও মানবিকভাবে একটি জটিল এবং স্পর্শকাতর ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ছামিয়া