ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

সাংবাদিকের জন্য বন্ধ হয়ে গেল ১০০ পাখি ব্যবসায়ীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট!

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:১৪, ১৯ জুলাই ২০২৫

সাংবাদিকের জন্য বন্ধ হয়ে গেল ১০০ পাখি ব্যবসায়ীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট!

ছবি: সংগৃহীত

করাচির ২৯ বছর বয়সী পাখি ব্যবসায়ী রোজি খান এপ্রিল মাসে ব্যবসার কাজে ইসলামাবাদে যান। কিন্তু এক এটিএম থেকে টাকা তুলতে গিয়ে বিস্মিত হয়ে পড়েন "ইনভ্যালিড ব্যাংক অ্যাকাউন্ট" এই বার্তা দেখতে পান তিনি।

ব্যস্ত হয়ে পরদিনই করাচি ফিরে গিয়ে ব্যাংক ম্যানেজারের সাথে দেখা করেন। জানতে পারেন, তার এক দশকের পুরনো ব্যবসায়িক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ১০ এপ্রিল ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (FIA)-এর আদেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ব্যাংক ম্যানেজারের দেওয়া একটি ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে খান অবাক হন FIA-এর একজন কর্মকর্তা তাকে জিজ্ঞেস করেন, তার সম্পর্ক কী সাংবাদিক আসাদ আলী তুরের সঙ্গে?

৪০ বছর বয়সী আসাদ আলী তুর ইসলামাবাদ-ভিত্তিক স্বাধীন সাংবাদিক ও ইউটিউবার, যিনি সরকারের, বিচার বিভাগের এবং সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক মতামতের জন্য পরিচিত। তার ইউটিউব চ্যানেলে রয়েছে ৩.৩৫ লাখ সাবস্ক্রাইবার এবং ৩.৫৫ লাখ ফলোয়ার রয়েছে X-এ।

তুরের তোতা পাখির প্রতি গভীর অনুরাগ রয়েছে, আর সে অনুযায়ী তিনি নিয়মিত পাখি কিনতেন। রোজি খান, নাদিম নাসিরসহ বহু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তিনি তোতা পাখি কিনেছেন। কিন্তু হঠাৎ তাদের সকলের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া হয়।

লাহোরের ব্যবসায়ী ৬০ বছর বয়সী নাদিম নাসির বলেন, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে তুর তার কাছ থেকে পাখি কিনেছিলেন। তারপর আর কোনো লেনদেন ছিল না। কিন্তু তবুও তার অ্যাকাউন্ট ১০ এপ্রিল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

তুরের নিজের, তার বাবা-মা, ভাই এবং ইউটিউব সহযোগী কাজিনের অ্যাকাউন্টও বন্ধ করা হয়। তুর বলেন, “আমি জানতে পারি আমার কাজিনের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হয়েছে আমার সঙ্গে লেনদেনের কারণে। তারপর দেখি আমার নিজের ও পরিবারের অ্যাকাউন্টও বন্ধ।”

আদালতে যাওয়ার পরে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট রায় দেন, তুরকে কোনো নোটিশ না দিয়ে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করাটা ‘আইনবিরুদ্ধ’। তবে রায় পাওয়ার পরও ব্যাংক একাউন্ট খুলতে সপ্তাহ খানেক লেগে যায়।

তুরের আইনজীবী জানজুয়া বলেন, “কোর্টের রায় পাওয়ার পরও ব্যাংক একাউন্ট খুলতে রাজি হয়নি যতক্ষণ না FIA লিখিতভাবে কিছু পাঠায়। শেষ পর্যন্ত আদালত অবমাননার হুমকির পর ব্যাংক নতিস্বীকার করে।”

FIA’র এক কর্মকর্তা আল জাজিরাকে বলেন, “তুর ইউটিউব থেকে আয় করেই তোতাপাখিতে লাখ লাখ রুপি খরচ করে, এটা কি স্বাভাবিক?” তারা এই কর্মকাণ্ডকে অর্থপাচার বা সন্ত্রাস অর্থায়নের সম্ভাব্য উৎস বলে দাবি করে। তবে তারা কেন নোটিশ না দিয়েই অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করল, তার কোনো সদুত্তর দেয়নি।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, পাকিস্তানে সাংবাদিকদের প্রতি নির্যাতন দিন দিন বেড়েই চলেছে। ২০২৫ সালে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস-এর সংবাদমাধ্যম স্বাধীনতা সূচকে পাকিস্তানের অবস্থান ১৫২ থেকে নেমে ১৫৮ হয়েছে।

অধিকারকর্মী ফারিহা আজিজ বলেন, “এটা এক ধরনের আইনগত হয়রানি ও সম্মিলিত শাস্তির সংস্কৃতি, যেখানে পুরো পরিবারকেই পঙ্গু করে দেওয়া হয়।”

মুমু ২

আরো পড়ুন  

×