ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুদের খাবার দিতে না পেরে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়াচ্ছেন মা

ক্ষুধায় কাতর আফগানরা

প্রকাশিত: ২১:৪৬, ২৫ নভেম্বর ২০২২

ক্ষুধায় কাতর আফগানরা

খাবার কিনতে ইটভাঁটিতে কাজ করছে এক আফগান শিশু

ক্ষুধায় কাতরাচ্ছে তালেবান শাসিত আফগানিস্তান। খাবার দিতে না পেরে শিশুদের ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখছেন বাবা-মা। কেউ কেউ খাবার কিনতে অর্থ জোগাড়ে বিক্রি করে দিচ্ছেন দেহের অঙ্গ। কেউ বিক্রি করছেন যুবতী মেয়ে। তালেবানের অধীনে সাধারণ আফগানদের এই দুরবস্থা চলছে। দেশটির লাখ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। খবর বিবিসি অনলাইনের।
গত বছর মার্কিন সমর্থিত সরকারকে উৎখাত করে দ্বিতীয়বারের মতো আফগানিস্তানের ক্ষমতা কব্জা করে তালেবান। মানবাধিকারের নানা ইস্যুতে তালেবানকে বাধ্য করতে দেশটির জন্য বারাদ্দ বিদেশি তহবিল আটকে দেওয়া হয়েছে। তাতে সবচেয়ে বিপদে পড়েছে দেশটির দরিদ্র জনগোষ্ঠী। যারা দীর্ঘদিন ধরে নানা বিদেশী ত্রাণের ওপর জীবন নির্বাহ করছিল। এমনই একজন ভুক্তভোগী আব্দুল ওহাব। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিশুরা কাঁদতেই থাকে, ক্ষুধার যন্ত্রণায় তারা এমনকী ঘুমায় না। কিন্তু আমাদের কাছে কোনো খাবার নেই। তাই আমরা ওষুধের দোকানে গিয়ে ট্যাবলেট কিনে এনে তাদের খেতে দেই। ওষুধ খেয়ে তারা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে থাকে। হেরাত নগরীর ঠিক বাইরেই একটি আশ্রয়কেন্দ্রে বাস আব্দুলের। হেরাত দেশটির তৃতীয় বৃহৎ নগরী। ওহাব যে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকেন সেখানে ছোট ছোট মাটির ঘরে দশকের পর দশক ধরে যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে গৃহহীন মানুষরা আশ্রয় নিয়ে আছেন। আব্দুলের মতো আরও অনেকের কাছে প্রশ্ন করা হয়, তাদের মধ্যে কারা কারা শিশুদের শান্ত রাখতে ওষুধ খাওয়ান। জবাবে তারা বলেন, ‘আমাদের অনেকে, আমাদের প্রায় সবাই। তাদের একজন গুলাম হজরত তার জামার পকেটে হাত ঢুকিয়ে ওষুধের একটি পাতা বের করে আনেন। সেটি ছিল ‘আলপ্রাজোলাম’। অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার বা উদ্বেগজনিত মনোরোগের চিকিৎসায় এই ওষুধ ব্যবহার হয়। ছয় সন্তানের বাবা গুলামের ছোটটির বয়স এক বছর। বলেন, ‘আমি এমনকী তাকেও ওষুধ দেই।’

অন্যদের কারও কারও পকেট থেকে নার্ভ শিথিল করার অন্যান্য ওষুধ বের হয়। যেগুলো মূলত বিষণ্ণতা ও উদ্বেগের মতো মনোরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ক্ষুধার্ত শিশুদের এসব ওষুধ দেওয়ার কারণে তাদের লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমনকী মাথাঘোরা, ঝিমুনি এবং আচরণে অস্বাভাবিকতাও দেখা দিতে পারে বলে জানান চিকিৎসকরা। আফগানিস্তানের যে কয়টি পরিবারের সঙ্গে বিবিসি কথা বলতে পেরেছে তারা প্রতিদিন মাত্র কয়েকটি রুটি ভাগ করে খান। এক নারী বলেন, তারা সকালে শুকনো রুটি খান এবং রাতে সেগুলো পানিতে ভিজিয়ে রাখেন যেন নরম হয়। জাতিসংঘ থেকেও আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, দেশটিতে মানবিক ‘বিপর্যয়’ শুরু হয়ে গেছে। হেরাতের বাইরে বেশিরভাগ পুরুষ দিনমজুর। তারা বছরের পর বছর ধরে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করে আসছে। কিন্তু তারপরও তাদের জীবন চলছিল। কিন্তু গত বছর আগস্টে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক কোনো মহল তাদের স্বীকৃতি দেয়নি। দেশটির জন্য বরাদ্দ বৈদেশিক তহবিলও আটকে দেওয়া হয়েছে।

যার ফলে দেশটির নাজুক অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। এখন বেশিরভাগ দিনমজুরই প্রতিদিন কাজ পান না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, তিনমাস আগে তিনি কিডনি বিক্রি করেছেন। জামা তুলে তিনি তার পেটের কাটা দাগ দেখান। যেটি এখনো পুরোপুরি শুকায়নি। তার বয়স কুড়ির কোঠায়। তিনি জানেন না তার জন্য ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করছে। তিনি বলেন, ‘কোনো উপায় ছিল না। কিডনি বিক্রি করে দুই লাখ ৭০ হাজার আফগানি পান ওই তরুণ। যার বেশিরভাগই ঋণ পরিশোধে ব্যয় হয়ে গেছে। পরিবারের জন্য খাবার কিনতে তিনি ওই ঋণ করেছিলেন।

 

×