আরাফাত ময়দান
শুরু হয়েছে হজের চূড়ান্ত পর্ব। বাংলাদেশসহ বিশ্বের কমপক্ষে ১০ লাখ মুসল্লি ফজরের নামাজ শেষে আরাফাত ময়দানের দিকে রওনা হন। সারা দিন খুতবা শুনে আসরের নামাজের আগে মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও কল্যাণ কামনায় মোনাজাত করবেন হাজিরা।
মিনা থেকে আরাফাত ১৫ কিলোমিটারের পথ। সাদা পোশাকে হেঁটে কেউবা বাসে করে এই পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছেছেন কাঙ্ক্ষিত স্থানে।
হাজিদের ‘লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক’ ধ্বনিতে এখন মুখরিত গোটা অঞ্চল। এখানেই সারা দিন চলবে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা।
সূর্যাস্তের পর কাছের মুজদালিফায় যাবেন তারা। খোলা আকাশে রাত কাটিয়ে শনিবার সেখানে তারা ‘শয়তানের দিকে পাথর নিক্ষেপ’ করবেন।এই আনুষ্ঠানিকতার পর তীর্থযাত্রীরা মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদে চূড়ান্ত ‘তাওয়াফ’ বা কাবার প্রদক্ষিণ করতে ফিরে আসবেন। সবশেষে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের হজ।
তীব্র গরম উপেক্ষা করে আরাফাতের পাথুরে ময়দানে কোরআন তেলাওয়াতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মুসল্লিরা। বিদায় হজের ভাষণ মহানবী (সা.) এই স্থানেই দিয়েছিলেন।
আরাফাত ‘রহমতের পাহাড়’ নামেও পরিচিত। চলতি বছর সাড়ে ৮ লাখ বিদেশি নাগরিকসহ প্রায় ১০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটেছে মক্কায়।
করোনার কারণে গত হজে অংশ নেয়াদের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছিল হজ কর্তৃপক্ষ। এবার সংক্রমণ কিছুটা কমে আসায় তা শিথিল করা হয়।
মিসরের নাগরিক নাগতক সাদ ফারহাত খলিলের বয়স ৪৯। তিনি বলেন, ‘এখানে আসতে পেরে খুব খুশি, ঠিক অন্য সবার মতো। করোনভাইরাস যুগে এটি সবচেয়ে বড় সমাগম।
‘আজ এখানে ১০ লাখ মানুষ আছে। যদি সৌদিরা অনুমতি দিত, তবে এক কোটি মানুষের সমাগম হতো।’
হজ ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সৌদি সরকার। নিরাপত্তা বিবেচনায় মক্কার আকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে হেলিকপ্টার। স্বেচ্ছাসেবকরা ব্যস্ত আগতদের নানাভাবে সাহায্য করতে। পানির বোতল সরবরাহের পাশাপাশি আবর্জনা দ্রুত সরিয়ে ফেলায় ব্যস্ত তারা।
তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট) থাকায় বাড়তি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন আগতরা। তাই আনুষ্ঠানিকতা শেষে পুরুষদের টুপি খুলে ফেলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যদিও স্কার্ফ দিয়ে মাথা ঢেকে রাখতে বাধ্য নারীরা।
লায়লা, ৬৪ বছরের ইরাকি তীর্থযাত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা (তাপ) সহ্য করতে পারি। আমরা যত বেশি সহ্য করি, ততই আমাদের তীর্থযাত্রা গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।’
হজ বিশ্বের বৃহত্তম বার্ষিক ধর্মীয় সমাবেশগুলোর একটি। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি এই আনুষ্ঠানিকতা। মুসলমানদের অবশ্যই জীবনে অন্তত একবার হলেও হজ করা ফরজ; তবে এই শর্ত কেবল সামর্থ্যবানদের জন্য।
২০১৯ সালে সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ২৫ লাখ মানুষের সমাগম ঘটেছিল মক্কায়। পরের বছর হানা দেয় মহামারি করোনা। সে বছর কেবল সৌদি আরবে বসবাসকারীরা অনুমতি পেয়েছিলেন হজের। পরের বছর সে সংখ্যা দাঁড়ায় ৬০ হাজারে।
করোনা সংক্রমণ কমে এলেও, সতর্ক অবস্থানে আছে হজ কর্তৃপক্ষ। অংশগ্রহণকারীদের টিকার ফুল ডোজ নেয়ার সনদের পাশাপাশি পিসিআর পরীক্ষার রিপোর্ট জমা দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া মিনায় তাঁবুতে অবস্থান করাদের মাস্ক এবং স্যানিটাইজার সরবরাহ করছে কর্তৃপক্ষ।