
ছবি: প্রতীকী
হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগ আগে শুধু বয়স্কদের সমস্যা বলে ধরা হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, এখন তরুণ-তরুণীরাও হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, বিশেষ করে নারীরা। ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের হার ৬৬ শতাংশ বেড়েছে ২০১৯ সালের পর থেকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবনযাত্রার অভ্যাস, বাড়তে থাকা স্থূলতা এবং কোভিড-পরবর্তী প্রভাব এর জন্য দায়ী। তাই ৪০, ৫০ কিংবা ৬০ বছর বয়সীদের জন্য এখনই সময় নিজেদের হৃদ্যন্ত্রের দিকে মনোযোগ দেওয়ার।
তরুণদের হার্ট অ্যাটাক বাড়ছে কেন?
বিশেষজ্ঞ ডা. সি. নোয়েল বেয়ারি মার্জ, যিনি সিডার্স-সিনাইয়ের বারব্রা স্ট্রেইস্যান্ড উইমেন’স হার্ট সেন্টারের পরিচালক, তিনি ইয়াহু লাইফকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ১৮-৪৪ বছর বয়সীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক এখনো তুলনামূলকভাবে কম, তবে বাড়ার হার অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অন্যদিকে, বয়স্কদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক কিছুটা কমেছে।
ভারতের অ্যাপোলো হাসপাতালের তথ্যমতে, পুরুষদের ৪৫ ও নারীদের ৫৫ বছরের পর হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। তবে এখন ৩০-৪০ বছর বয়সীদের মধ্যেও হার্ট অ্যাটাক অস্বাভাবিক নয়। ভারতে ৫০ বছরের নিচে লোকজনের মধ্যেই ৫০% এর বেশি হার্ট রোগে মৃত্যু হয়। এমনকি ৪০ বছরের নিচের রোগীদের মধ্যেও হার্ট অ্যাটাকের হার ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত।
স্থূলতা ও খারাপ খাদ্যাভ্যাস দায়ী
ডা. অ্যান্ড্রু মোরান, নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিরোধমূলক কার্ডিওলজিস্ট, জানিয়েছেন যে ৫০ বছরের নিচে লোকদের মধ্যে স্থূলতা বাড়ছে দ্রুতগতিতে। বর্তমান প্রজন্ম ফাস্টফুড, চিনি মেশানো পানীয় ও প্রক্রিয়াজাত খাবার খেয়েই বড় হয়েছে। এইসব খাদ্যাভ্যাস এখনো চলমান, যা তাদের হৃদ্যন্ত্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
ডা. বেয়ারি মার্জ একে বলেছেন “ডায়াবেসিটি” সমস্যা—যেখানে স্থূলতা ও ডায়াবেটিস একত্রে দেখা দেয়। এটি উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক ও অন্যান্য হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
কোভিড-১৯-এর প্রভাব
করোনাভাইরাস শুধু ফুসফুস নয়, হৃদ্যন্ত্রেও প্রভাব ফেলে। কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হয়ে অনেকের হৃদপেশিতে প্রদাহ (মায়োকার্ডাইটিস) দেখা গেছে। এমনকি যারা সেরে উঠেছেন, তাদেরও প্রায় ৪ শতাংশ এক বছরের মধ্যে হৃদ্রোগ সংক্রান্ত উপসর্গে ভুগছেন। ২৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের মধ্যে কোভিড মহামারির প্রথম দুই বছরে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর হার ৩০% বেড়েছে।
তরুণ পুরুষরা চিকিৎসা এড়িয়ে যান
ডা. মোরান জানিয়েছেন, তরুণ পুরুষরা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান না। মেয়েরা গাইনোকলজিক্যাল কারণে বছরে একবার হলেও ডাক্তার দেখান, কিন্তু অনেক পুরুষ জানেন না তারা উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসে ভুগছেন—যতক্ষণ না তারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
তরুণ নারীদের জন্য অতিরিক্ত ঝুঁকি
৩৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের হার সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে। ১৯৯৫ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে এই বয়সী নারীদের হাসপাতালে ভর্তি হার ২১% থেকে বেড়ে ৩১% হয়েছে।
এর পেছনে বেশ কিছু কারণ আছে:
-
ডায়াবেটিস: নারীদের মধ্যে ডায়াবেটিস হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় পুরুষদের তুলনায় বেশি।
-
ধূমপান ও ভ্যাপিং: অনেক নারী কলেজ জীবন থেকেই ওজন কমানোর জন্য ধূমপান বা ই-সিগারেট ব্যবহার শুরু করেন। এসব পণ্য হৃদ্যন্ত্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
-
স্ট্রেস ও হরমোনের পরিবর্তন: অতিরিক্ত মানসিক চাপ, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবে, নারীদের মাসিক চক্রে বিঘ্ন ঘটায়। এতে ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যায়, যা হার্টের জন্য সুরক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে।
কীভাবে হৃদ্যন্ত্রকে সুরক্ষা দেবেন?
বিশেষজ্ঞরা কিছু কার্যকর পরামর্শ দিয়েছেন, যা অনুসরণ করলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো যায়।
-
টাটকা খাবার খান: বেশি করে ফল ও শাকসবজি খান। প্রক্রিয়াজাত খাবার কমান। এতে সোডিয়াম কমবে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
-
শরীরচর্চা করুন: নিয়মিত হাঁটা, হালকা ব্যায়াম হৃদ্যন্ত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে।
-
ধূমপান বা ভ্যাপিং এড়িয়ে চলুন: তামাকজাত ও গাঁজাজাত সব পণ্যই হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
-
স্ট্রেস কমান: মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। সময়মতো বিশ্রাম নিন ও প্রয়োজনে কাউন্সেলিং নিন।
এখনই সময় নিজের হৃদয়কে গুরুত্ব দিয়ে দেখা ও সচেতনতা বৃদ্ধির। জীবনযাত্রায় সামান্য পরিবর্তনই আপনাকে দিতে পারে দীর্ঘদিনের সুস্থ জীবন।
সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া
এম.কে.