ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

প্রতিদিন সকালে ৩০ মিনিট হাঁটলে হৃদরোগের ঝুঁকি ৫০% কমে

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২০ জুলাই ২০২৫

প্রতিদিন সকালে ৩০ মিনিট হাঁটলে হৃদরোগের ঝুঁকি ৫০% কমে

ছ‌বি: প্রতীকী

সকালে একটু আগে উঠে হালকা শীত বা মিষ্টি রোদের মধ্যে হাঁটার অভ্যাস অনেকেই গড়ে তুলেছেন। এটা শুধু শরীর চর্চার জন্য নয়, বরং একটি সুস্থ জীবনের অন্যতম চাবিকাঠি। প্রতিদিন মাত্র ৩০ মিনিট করে সকালে হাঁটার মাধ্যমে একজন মানুষ নিজের হৃদরোগের ঝুঁকি প্রায় ৫০% পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পারেন। এটা কোনো অনুমান নয়, বহু গবেষণা এবং ডাক্তারি পরামর্শ থেকে পাওয়া একটি নির্ভরযোগ্য তথ্য।

হৃদরোগ বর্তমানে একটি সাধারণ কিন্তু ভয়ানক রোগে পরিণত হয়েছে। অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদপিণ্ডের ব্লকেজ কিংবা স্ট্রোক এখন অহরহ দেখা যাচ্ছে। এসব রোগের প্রধান কারণ হলো অনিয়মিত জীবনযাপন, ব্যায়ামের অভাব, ধূমপান, মদ্যপান, মানসিক চাপ এবং ফাস্টফুডের আধিক্য। এমন অবস্থায় খুব সহজ একটি উপায় হতে পারে নিয়মিত হাঁটা। বিশেষ করে সকালে হাঁটার অভ্যাস।

সকালের বাতাস সাধারণত পরিষ্কার ও দূষণমুক্ত থাকে। এই সময় হাঁটার ফলে শরীরে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ হয় এবং মনও সতেজ থাকে। সকালে হাঁটার সময় শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, যার ফলে হার্ট আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে। শরীরের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল কমে যায়, যা হৃদপিণ্ডে ব্লকেজ সৃষ্টি করে। এতে করে হৃদরোগের আশঙ্কা অনেকটা হ্রাস পায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন সকালে ৩০ মিনিট হাঁটলে হৃদযন্ত্র মজবুত হয়, হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক থাকে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসে। হাঁটার সময় শরীরে এমন কিছু হরমোন নিঃসরণ হয় যা স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। আবার মানসিক চাপও হৃদরোগের একটি বড় কারণ। তাই সকালে নিয়মিত হাঁটার মাধ্যমে একদিকে যেমন মানসিক শান্তি পাওয়া যায়, অন্যদিকে হৃদরোগ প্রতিরোধও সহজ হয়।

শুধু হৃদরোগ নয়, হাঁটার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসে, ওজন কমে, হজমশক্তি বাড়ে এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। সকালে হাঁটার ফলে মানুষ সারা দিন বেশি সক্রিয় থাকে এবং ক্লান্তি কম অনুভব করে। এতে ঘুমও ভালো হয়, যা আবার শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক। যেহেতু শরীর সুস্থ থাকে, তাই হৃদযন্ত্রের উপর বাড়তি চাপ পড়ে না। ফলে হার্ট দীর্ঘদিন ভালোভাবে কাজ করতে পারে।

অনেকেই ভাবেন যে হাঁটা মানে ব্যায়াম নয়, এটা খুব সাধারণ একটি কাজ। কিন্তু বাস্তবে এটি সবচেয়ে সহজ, নিরাপদ এবং কার্যকরী ব্যায়ামের একটি রূপ। বিশেষ করে যারা বয়স্ক, ওজন বেশি কিংবা কোনো শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য হাঁটা সবচেয়ে উপযোগী। এতে শরীরের জয়েন্টে চাপ পড়ে না এবং ধীরে ধীরে ফিটনেস বাড়ে।

প্রতিদিন সকালে হাঁটলে মন ভালো থাকে, শরীরে উদ্যম আসে এবং কর্মক্ষমতা বাড়ে। যারা প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলেছেন, তারা বেশিরভাগ সময়ই অন্যদের তুলনায় সুস্থ থাকেন এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কম থাকে। এটি এমন এক অভ্যাস যা বয়সভেদে সবাই করতে পারেন।

যারা সকালে হাঁটার সময় পান না, তারা বিকেলেও হাঁটতে পারেন। তবে সকালে হাঁটার উপকারিতা তুলনামূলকভাবে বেশি। শহরের কোনো পার্ক, খোলা মাঠ কিংবা রাস্তার ধারে একটু নিরাপদ জায়গা খুঁজে নিয়ে হাঁটা শুরু করা যেতে পারে। হাঁটার সময় আরামদায়ক পোশাক পরা এবং হালকা গতি বজায় রাখা ভালো। কেউ চাইলে হেডফোনে সঙ্গীত শুনতে শুনতেও হাঁটতে পারেন, তবে ট্রাফিক বা রাস্তায় চলাচলের সময় সতর্ক থাকা জরুরি।

অর্থাৎ, প্রতিদিন সকালে মাত্র ৩০ মিনিট হাঁটার মাধ্যমে একজন মানুষ নিজের হৃদয়কে সুরক্ষা দিতে পারেন। এটি যেমন সহজ, তেমনই কার্যকরী। হৃদরোগ থেকে বাঁচতে আর ওষুধ কিংবা ব্যয়বহুল চিকিৎসার দিকে না গিয়ে আমাদের উচিত এখন থেকেই এই সহজ অভ্যাসটি গড়ে তোলা। মনে রাখতে হবে, সুস্থ হৃদয়ই সুস্থ জীবনের প্রথম শর্ত। তাই আজ থেকেই শুরু হোক সকালে হাঁটার যাত্রা।

এম.কে.

×